অদৃশ্য আওতা

গণশা টা বড় বোকা 
নইলে কী আর মন্ত্রীমশাইয়ের পি এ কে হাতের কাছে পেয়ে ভরা হাটের মাঝে এমন করে
অমন কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে?

পি এ বললে, আরে ওকে বকছ কেন? ওর কী বলার
আছে বলুক না! আমি শুনবো। 
মন্ত্রী মশাই জনদরদী মানুষ।
তার কানে পৌঁছে দিলেই তো হল, নাকি?

গণশা বলতে শুরু করলে আর থামে না
হ্যাঁ গো বাবু! আমি না হয় সোনার টুকরো।
সোনার ছেলে বিশু। মানে হল গিয়ে আজ্ঞে
আমরা পেলাম সংরক্ষণের আওতা…
পাশের বাড়ির ভোম্বল ও ব্যাটা একেবারে
সাধারণ…
তবু কথা হল যে আমরা যখনই চাকরির পরীক্ষা দেই
পাশ তো করি না!
মানছি আমার মাথাটা একটু মোটা 
তবু এত বছর ধরে হরহর করে সব পড়লাম
তো যেই পরীক্ষায় বসতে যাই
মাথার উপর কাক বসে। শকুন ওড়ে।
বলে, টাকা চাই। দিতে পারবি? 
হুশ করে তাড়িয়ে দিই ওদের।
কেন রে! টাকা কেন দেব?
পড়ে পড়ে আমরা বলে কত রাত জেগে কাটিয়েছি
মায়ের গয়না, বাবার জমি…

যাক গে যাক, আসল কথা হল যে
তারপর শুনি ও বাবা! 
অমুক মন্ত্রীর ছেলে তমুক সে তো পরিক্ষাতেই বসেনি
সেদিন…হ্যাঁ আমি ঠিক জানি
সে তো সেদিন আমার পাড়ার কুসুমের গায়ে স্বপ্ন
বুনছিল গঙ্গার ধারের হোটেলে…
কুসুম নিজে বলেছে আমায়!
সে দিব্য কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে বেরিয়ে গেল
চাকরি করতে! 

গণশা টা ভারী বোকা! বলতে শুরু করলে
আর থামে না!
মন্ত্রীর পি এ তখন যাবার জন্য ব্যস্ত বড়
গণশা বলে উঠলে, থামুন মশাই! আরো বাকি।

হাসপাতালে নিয়ে গেলাম বাবাকে।
হঠাৎ বাবার বুকে ব্যথা। 
পাড়ার ডাক্তার বললে, গণশা তোর বাবার
হার্ট এ্যাটাক হয়েছে রে! 
শিগগির হাসপাতালে নিয়ে যা!

বড় হাসপাতালের বড় বড় ডাক্তার, নার্স। 
বলল, সিট তো নেই! সব ভর্তি
অন্য কোথাও যাও নিয়ে…
আমি তো অবাক
ওই তো সাদা চাদর পাতা বিছানা রেডি
মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসলে হাসপাতালের 
সিকিউরিটি
আরে, ওগুলো তোর আমার বাপের না রে ছেলে!
ওগুলো নেতা মন্ত্রী এম এল এ এম পি ওদের
বাপের জন্য…,

মন্ত্রীর পি এ ভীষণ ঘামছে।
অনেক কষ্টে এতক্ষণ শুনেছে সব
তারপর গণেশের কাঁধে হাত রেখে বললে,
শোনো। এত চিন্তা কোরো না। 
মন্ত্রী মশাই জনদরদী লোক। দেশের দশের
কথা ভেবেই চলেন দিনরাত।
তোমরা নিশ্চয়ই চাকরি পাবে! 
আজ চলি। মন্ত্রী মশাইকে সব জানাবো।
শিগগিরই ভালো খবর পাবে…

গণশা টা বড় বোকা। বলতে শুরু করলে আর
থামে না। 
ও আরো কত শত জানতো। 
নেতার ছেলে ধর্ষণ করে খুন করতে পারে।
নেতার ভাই হুমকি দিয়ে তোলা তুলতে পারে
নেতার মেয়ে না পড়েই কেমন ডাক্তার হয়ে যায়…

গণশা টা বড় বোকা! বলতে শুরু করলে আর
থামতে জানে না…

কিন্তু ওরা থামিয়ে দিতে জানে।

বড় রাস্তার পাশে ওর ঠোঁট চেরা, চোখ ওল্টানো,
জিভ বেরোনো দেহ টা খুবলে খুবলে খেয়ে যায়
শেয়াল…

মন্ত্রীর স্ত্রী ঝকঝকে কপাল নিয়ে এসে দাঁড়ায় 
মস্ত বড় চাকরির প্রথম সারিতে।

মন্ত্রী মশাই জনদরদী লোক।
দেশের দশের কথা ভেবেই চলেন দিনরাত…
–––----------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বাধীনতা, তোমার জন্য

স্বাধীনতা, শুধু তোমার জন্য আজও একা কাঁদে
বৃদ্ধ মালি। তার বাগানে ফুল ফোটার আগেই
কুঁড়ি ঝরে গেছে সব।

স্বাধীনতা, শুধু তোমার জন্য আজও উদভ্রান্তের মত
হাসে মা। নড়বড়ে কণ্ঠে বলে, আসবে সে আসবে
যেদিন বৃষ্টির ক্ষেতে রোদ্দুর গাইবে গান, যেদিন রামধনু রঙে লেখা হবে ভালোবাসার নাম সেদিন সে আসবে…

শিশুটিও বৃদ্ধ হয়েছে আগামীর হাতে তবু নাড়ির টান খুঁজে ফেরে স্বাধীনতা শুধু তোমার জন্য।

আঠারোর ক্ষুদিরাম, পনের ' র সুশীল স্বাধীনতা তোমার জন্য স্পর্ধার আগুন জ্বালে আজও ভারতবর্ষের স্বপ্নে রোজ…

চোখের নিচে এক সমুদ্র অভিমান নিয়ে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী আঁচল পেতে বসে আছে। স্বামী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরলে ফুলশয্যার বিছানায় আলোর চুমো দেবে। স্বাধীনতা তোমার জন্য অপেক্ষায় সে আজও…

বকুল গাছে নাম লিখেছিল ছেলেটা। স্বাধীনতা তোমার জন্য মেয়েটা আর ফেরেনি। গাছটা শাখা দুলিয়ে দুলিয়ে তাকে ডাকে। সে ফিরলে প্রথম ফুল ফোটাবে সে গাছ।

এসব কথা স্বাধীনতাকে বলছিল ভারতবর্ষ। স্বাধীনতা দেশের অরণ্য ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করল, আমি এবার ঠিক ফিরব! না যদি ফিরি তবে যেন…

কথা সম্পূর্ন হওয়ার আগেই অরণ্যে দাবানল লাগল।

পাহাড়কে সাক্ষী রেখে স্বাধীনতা বলল, এই পাহাড় দেখবে কেমন করে আমি হাসতে জানি, হাসাতে জানি…
পাহাড়ের পাঁজর শুকিয়ে গেল। বরফ ভেসে এসে বন্যায় দুকূল ছাপিয়ে গেল। 
বৃষ্টি নেমে এল। স্বাধীনতা বলল, আর ভুল হবে না। বৃষ্টির পায়ে পায়ে ঠিক ফিরব এইবার
বৃষ্টি থেমে গেল। এ বর্ষা বৃষ্টিহীন।

ভারতবর্ষ হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে এল জীবন্ত জীবাশ্মের উপর, নির্ভয় ঠোঁট রাখল তাতে…
মাঝি তবু বৈঠা টানে
পাল তুলে দেয় আকাশে। স্বাধীনতা! ওই দেখো
সীমান্তে প্রহরী দাঁড়িয়ে আজও
তুমি যতই দেরি করো না কেন
একদিন না একদিন তোমাকে ফিরতেই হবে! 
—------------------
SUKAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমার দুর্গা

আমার দুর্গা অগ্নি কন্যা,
আমার দুর্গা স্নেহ বৃষ্টি !
আমার দুর্গা বজ্র মুঠি,
আমার দুর্গা নিত্য নব সৃষ্টি।

পড়াশুনা করে চাকরি করবি?  
জেনে যাবি আমার দুর্বলতা? 
তার চেয়ে এই বেশ,
ছিন্ন করে দিই স্বপ্ন তোর!
যে হাতে তুই মশাল জ্বালাস, সেবাও করিস,
আয় ছিঁড়ে নিই তোর সে আগুন,
সেবার নরম হাত,
কবজি থেকে আঙুল।

ছটফট করবি তুই!
আমি আনন্দে পাগল হব!
ভিক্ষে খানিক চাইলে পাবি, আমার পদতলে থাক।
ওরে মেয়ে, বাড়ির বধূ, পঙ্গু হয়ে আমার পায়ে থাক!

আমার দুর্গা ধ্বংস তো নয় মোটে,
আমার দুর্গা এক হাতেও পথ জানে।
আর্ত পুজোয় ফুল তুলে দেয় সে,
স্বপ্ন দেখায় দৃঢ় চিবুকের গানে।

রেণু খাতুন, 
বয়স চব্বিশ,
চোখে আশার সুরমা পরা ফুটফুটে এক প্রাণ।
ভেবেছিল সরকারি চাকরিটা পেয়ে গেলে
বাড়ির কিছুটা মঙ্গল হবে।
শ্বশুর শাশুড়ির ওষুধ,
স্বামীর এত পরিশ্রম, 
একটু পাশে থাকতে পারবে …
হাল ধরতে পারবে…;
হাল তো সে ধরলোই! 
স্পর্ধার হাল।
যন্ত্রণা ভুলে এক হাতেই শিখে নিল পাঠ,
লিখে নিল হৃদয়ে, পারতেই হবে!
যে স্বামীকে ভালোবেসে হাতে রেখেছিল হাত,
এক কোপে তার স্বপ্নের সুরমা মুছিয়ে দিল সেই।

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরুপেণ সংস্থিতা
নমস্তস্যই নমস্তস্যই…

আমার দুর্গা হার মানে নি,
আমার দুগা পথ চিনেছে ঠিক।
আমার দুর্গা এক বাহুতেই আলো
জ্বালতে শিখে নিক।

আমার দুর্গা এক বাহুতেই আলো জ্বালতে শিখে নিক।
—-----------------
SUKAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বাধীনতা মানে

স্বাধীনতা মানে রক্ত ঝরা ইতিহাস

স্বাধীনতা মানে নতুন প্রাণের শ্বাস

স্বাধীনতা মানে আমার মায়ের দেশ

স্বাধীনতা মানে অত্যাচারের শেষ


স্বাধীনতা মানে নেতাজি, ক্ষুদিরাম 

স্বাধীনতা মানে আরো সহস্র নাম

স্বাধীনতা মানে কচি সবুজ ঘাসে

লুটোপুটি হাসি আর গান শুধু ভাসে

লুটোপুটি হাসি আর গান শুধু ভাসে।

—---------------

SUKAN MITHI (SUJATA MISHRA)

অন্য প্রণাম

পাড়ার পুজো মণ্ডপে এবার দারুণ এক ঘটনা ঘটল।
সেজেগুজে নতুন পাজামা পাঞ্জাবি পরে নবীন বাবু
প্রণাম করতে এলেন দশভূজার মূর্তিতে। চোখ বন্ধ করে প্রণাম শেষ করতেই মায়ের মুখে দেখলেন নিজের স্ত্রীর মুখ। তাঁর স্ত্রী! যাকে প্রতিদিন দু এক ঘা না দিলে নবীন বাবুর হাত নিশপিশ করে সেই বোকা মেয়ে মানুষ? বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে এলেন মন্ডপ থেকে। 

কিছু পরে এলেন বিনোদ বাবু। তিনি তাঁর মাকে রেখে এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। দশভূজার চরণে মাথা ঠেকাতেই মন্ডপ হয়ে গেল বৃদ্ধাশ্রম। তাঁর মা হাসছেন, পায়ের উপর বিনোদ বাবুর মাথা। মা বলছেন, ভালো থাক বাবা। ভালো থাক।
বিনোদ বাবুর চোখে জল, এক ছুটে বেরিয়ে আসেন মন্ডপ থেকে। স্ত্রীকে বলেন, তুমি চাও না চাও আমার মা আমার সঙ্গেই থাকবে।

অমিত ভুলে গেছে সীমা কে। বড়লোক বাবার মেয়ে যখন তার হবু পাত্রী তখন গরীবের সীমা কেন? মা দুর্গার মুখে তখন সীমার মুখ। অমিত ডেকে আনে তার বাবা মাকে। তারাও দেখে মা দুর্গার মুখে সীমা বসে আছে। চোখের ভিতর মায়ার ঘর। অমিত কি ভুল বুঝতে আর দেরি করে? সীমা যদি না আসতে চায় আর! তার বাবা মা ভাবে।

মন্ডপে ভিড় উপচে পড়ছে। এ কেমন কথা? সবাই তার অন্যায় দেখতে পাচ্ছে। তাদের পায়ে মাড়ানো ঘাস মাথায় নিয়ে বেরিয়ে আসছে মন্ডপ থেকে।

একটি ছোট্ট ছেলে তার বাবার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, ও বাবা! মা দুর্গার গায়ের শাড়িটা কেমন ছেঁড়া দেখো! ঠিক আমাদের আয়া মাসীর মতন…
এবার পুজোয় আয়া মাসীর নতুন শাড়ি হতে আর কি দেরি হয়? 

একটা কালশিটে মাখা মুখ ছুটে আসে হঠাৎ। মনে হয় দেবী মার কাছে এসে সে উগড়ে দেবে তার যন্ত্রণা, জিজ্ঞেস করবে কেন মা? কেন রক্তাক্ত হই প্রতিদিন? কেন এমন অবিচার তোমার? 
প্রবেশ করে মন্ডপে সে। দশভূজা তাকিয়ে আছেন তার দিকে। আচম্বিতে রক্ত ঝরা বধূটির কান্না থেমে যায়।
দেবী মার মূর্তিটা কেমন যেন তার মত দেখতে হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তার মত গালে গলায় রক্তের দাগ, কালশিটে। তবে এ কী! দেবীর চোখে তো কান্না নেই! এক ভয়ঙ্কর আগুন জ্বলছে যেন! দেবীর দশ হাত লুপ্ত হয়ে মাত্র দুই হাত, ঠিক তার মতই শাঁখা পলা পরা। দুই হাতে কী প্রবল এক আগুন ধরা! মনে হচ্ছে এখনি ভস্ম করে দেবে সবকিছু, সব অন্যায়! সব দুঃখ… 
বধূ টি নিজেকে এমন ভাবে কোনোদিন তো দেখেনি! 
নিমেষে বেরিয়ে আসে মন্ডপ থেকে। দুই হাতে বজ্র, চোখে আগুন… কিছু পরেই শুরু হবে সন্ধি পুজো। তার বাড়িতেও সাজগোজের আয়োজন চলছে। বধূটি ঘরে প্রবেশ করেই তার সে আগুন ছুঁড়ে দেয় অত্যাচারের প্রতি। ভয় পেয়ে যায় ওরা…ঢাকের শব্দে ওদের ভয় বেড়ে বেড়ে যায় আরো…ওরা কালশিটে মুখে দশভূজা দর্শন করে। দশ হাতে দশ অস্ত্র, চোখে তেজ, শ্বাস পড়ছে দ্রুত… 
ওরা ক্ষমা চায়
ওরা প্রণত হয় বধূটির পায়ে। 
ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় রক্তের দাগ। 
—-------------
SUKAN MITHI (SUJATA MISHRA)


অন্য প্রণাম

পাড়ার পুজো মণ্ডপে এবার দারুণ এক ঘটনা ঘটল।
সেজেগুজে নতুন পাজামা পাঞ্জাবি পরে নবীন বাবু
প্রণাম করতে এলেন দশভূজার মূর্তিতে। চোখ বন্ধ করে প্রণাম শেষ করতেই মায়ের মুখে দেখলেন নিজের স্ত্রীর মুখ। তাঁর স্ত্রী! যাকে প্রতিদিন দু এক ঘা না দিলে নবীন বাবুর হাত নিশপিশ করে সেই বোকা মেয়ে মানুষ? বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে এলেন মন্ডপ থেকে। 

কিছু পরে এলেন বিনোদ বাবু। তিনি তাঁর মাকে রেখে এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। দশভূজার চরণে মাথা ঠেকাতেই মন্ডপ হয়ে গেল বৃদ্ধাশ্রম। তাঁর মা হাসছেন, পায়ের উপর বিনোদ বাবুর মাথা। মা বলছেন, ভালো থাক বাবা। ভালো থাক।
বিনোদ বাবুর চোখে জল, এক ছুটে বেরিয়ে আসেন মন্ডপ থেকে। স্ত্রীকে বলেন, তুমি চাও না চাও আমার মা আমার সঙ্গেই থাকবে।

অমিত ভুলে গেছে সীমা কে। বড়লোক বাবার মেয়ে যখন তার হবু পাত্রী তখন গরীবের সীমা কেন? মা দুর্গার মুখে তখন সীমার মুখ। অমিত ডেকে আনে তার বাবা মাকে। তারাও দেখে মা দুর্গার মুখে সীমা বসে আছে। চোখের ভিতর মায়ার ঘর। অমিত কি ভুল বুঝতে আর দেরি করে? সীমা যদি না আসতে চায় আর! তার বাবা মা ভাবে।

মন্ডপে ভিড় উপচে পড়ছে। এ কেমন কথা? সবাই তার অন্যায় দেখতে পাচ্ছে। তাদের পায়ে মাড়ানো ঘাস মাথায় নিয়ে বেরিয়ে আসছে মন্ডপ থেকে।

একটি ছোট্ট ছেলে তার বাবার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, ও বাবা! মা দুর্গার গায়ের শাড়িটা কেমন ছেঁড়া দেখো! ঠিক আমাদের আয়া মাসীর মতন…
এবার পুজোয় আয়া মাসীর নতুন শাড়ি হতে আর কি দেরি হয়? 
—-------------
SUKAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি সময়

সেই কোন্ যুগ থেকে যে আমি হেঁটে চলেছি
আমি নিজেও জানি না
শুধু জানি হাঁটতে হবে, ছুটতে হবে
কোথাও থেমে থাকা চলবে না।

আমি কে?
সময়। 
সময় কোথা আমার সময় কাটাবার?
সময় কোথায় আমার সময় হারানোর?
আমি সময়। পৃথিবীর হাত ধরে এগিয়ে চলি।
লীন হয়ে যায় আমার অতীত
বর্তমান প্রবল ছোটে ভবিষ্যত ছোঁয়ার জন্য
আমি সময়।
সময় কোথায় পিছিয়ে আসার জন্য?

ভালোবেসে ছেলেটা মেয়েটাকে বলেছিল
একটু সময় দাও। চাকরিটা পেয়েই তোমায় 
বাড়ি নিয়ে আসবো…
মেয়েটার হাতে আমি তো ছিলাম না! 
ছিল তাড়া। বড়লোক পাত্রে বিয়ে হয়ে গেল তার।
বছর দুয়েক আমিও ছুটলাম খুব।
ফিরে এল মেয়েটা। অত্যাচারে। 
এখন মেয়েটার হাতে আমি অগুনতি হয়ে বসে আছি
পুকুর ঘাটে, কলতলায়…

পৃথিবী বাঁধা আমার হাতে। 
দিন রাত্তির ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত আমি
তবু আমার সময় তো নেই বসে থাকবার
তবু ডাক দিয়ে যাই স্বপ্ন দেখা চোখে,
এস, আমার আঙুল ধরো।
ছুটতে শেখ…

খুব ইচ্ছে করে শিশুর হাসিতে এসে থেমে থাকি
বেশ কিছুক্ষণ
কিন্তু আকাশ ছুঁতে চেয়ে আমাকে টেনে ধরে।
সেও ছোটে…

আমি কে?
আমি সময়।
—------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

মানুষ - মিছিল

ডাস্টবিনের পাশে যেদিন উন্মাদ নগ্ন দেহটা যন্ত্রণায়
চিৎকার করে উঠল কেউ এল না পাশে
রাতের অন্ধকার চিরে
কয়েকটি কুকুর উলঙ্গ লোভ নিয়ে দাঁড়ালো উন্মাদিনীর চারপাশে

জন্ম নিল ছোট্ট কচি প্রাণ।
উন্মাদিনীর চোখে আগুন জ্বলে উঠল প্রথমবার
সে তার আঁচলে চেপে ধরল স্নেহ
কাঁচের টুকরো তুলে ছুঁড়ে মারল লোলুপ কুকুরগুলোর দিকে
তারপর জড়িয়ে জাপটে আগল দিল তার কোলে

ছোট্ট প্রাণ স্থান পায় এক বৃহৎ প্রাণে
উন্মাদিনী বলে, যা যা তুই যা আমি জেগে আছি
সন্তানহীনা একজন বুকে তুলে নেয় তাকে
উন্মাদিনী কে দেয় অন্ন বস্ত্র
কিন্তু তার অত সময় কোথা সময় নষ্ট করবার
সারাদিন ধরে সে কাঁচ কুড়োয়, বুকের ভিতর
আরো আরো বজ্র বাঁধে তার
সন্তান হীনা বিস্মিত হয়। 
রাত গভীর হলে উন্মাদ মায়ের স্রোত ভেসে আসে কণ্ঠে…সা…বধান! 

সব কুকুর থেমে যায়। সব মানুষ ভয় পায়।
উন্মাদিনী প্রবল ঝড় এখন, ধরতে গেলেই
ছুঁড়ে ফেলে, বুকের দিকে হাত বাড়ালেই
ঝনঝন করে ওঠে কাঁচ, রক্তের গন্ধে ম ম করে পথ

পৃথিবী উন্মাদিনীর নাম রেখেছে মা।

সারা রাত্তির অস্ত্র হওয়ার পরে সূর্য উঠলে সে মা
খানিক ঘুমিয়ে নেয়। 
তারপর ডাস্টবিন খেতে খেতে গান ধরে
আমরা সবাই রাজা
সেই কবে যেন সে শিখেছিল এ গান

ধীরে ধীরে মা বৃক্ষ হয়। 
সেই বৃক্ষের নিচে এসে বসে ছোট ছোট প্রাণ
নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে।

পালিকা মা তার মেয়ের নাম রেখেছে প্রীতিলতা।
আবর্জনা সরিয়ে ফেলে সে মেয়ে গাছ জড়িয়ে ধরে
বলে, কেন মা আমার সঙ্গে গেলে না?
উন্মাদিনী হাসে। 

পৃথিবী বলে, তোর উন্মাদিনী মা এখন মাতঙ্গিনি রে! 
মানুষ মিছিলের সামনে থাকতে হবে না? 
—----------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

ঘুম

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে'
ওদের ঘুম ভাঙাও! 
সারি সারি উলঙ্গ রাজা সাজানো দোকানের সামনে
ওরা এসে দাঁড়িয়েছে।
সবাই দেখছে বুঝছে কিন্তু বলছে না কিছুই
ওদের হৃদয় ভর্তি ঘৃণা
ধিক্কার
তবু ওরা প্রশ্ন করছে না…
ওদের বুকের ভিতর যে পিতা ঘুমিয়ে
যদি তার ঘুম ভাঙ্গে এ অসময়ে
তবে সে এক প্রবল কণ্ঠস্বরে চিৎকার করবে
বলবে, এ রাজা পোশাক বিহীন!
এ স্বাধীনতা পরাধীন!
গণতন্ত্র বন্দি!

ফিরে এলেন মাতঙ্গিনি, প্রীতিলতা
পতাকা কাঁধে তুললেন সুভাষ
গান্ধীজি এলেন। ক্ষুদিরাম বিনয় বাদল দীনেশ
ননী বালা দেবীও এলেন। 
সভার বিষয় ঠিক হয়েছে ভারতবর্ষ
প্রফুল্ল চাকী বিস্ময়ে বললেন, এ ভারত কি আমারই?
নেতাজি বললেন, তোমরা সাহসী হও! 
আমি তোমাদের বোধ এনে দেব…
ক্ষুদিরাম বলে উঠল, আঠারো কই? আঠারো?
প্রীতিলতা হই হই করে মৃত্যু নিল গলায়
বলল, কারা যেন ঘুমিয়ে আছে…

দুর্দম ইংরেজ এল প্রচন্ড উল্লাসে।
বলল, আমরা কিন্তু পোশাক পরতে জানি
এরা জানে না, জানে না…

শুকনো পথের দুই পাশে কচি ধান ক্ষেতের বাস
চাষীর কাঁধে গামছা কপালে ঘাম
ঘরে আসবে নতুন পৃথিবী 
এবার পুজোয় একটা নাক ছাবি দেবে বউকে সে
তার আনন্দ ধুয়ে যাচ্ছে রোদ্দুরের গানে গানে

সভা শেষ হল এদিকে।
সকল দেশপ্রেমী বাতাস হওয়ার আগে দীর্ঘশ্বাস
ফেলে বলল, এর চেয়ে ভালো ছিল ইংরেজ…
নেতাজি বললেন, কয়েক সহস্র নেতাজির জন্ম
হওয়া দরকার বড়…

চাষীর স্বপ্নের পাশে এসে বসল সময়
বলল, যদি সবটা তোমার হতে পারতাম…

সারি সারি বসানো উলঙ্গ রাজার মূর্তি
সবাই দেখছে কিন্তু কেউ এখনো বলছে না
স্বাধীনতা পরাধীন! 
ওকে মুক্তি দাও!
ওদের ঘুম ভাঙাও!
—-------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

কনকাঞ্জলি

কনে বিদায়ের সময় চোখে জল নিয়ে মেয়ের সামনে আঁচল পেতে ধরল মা… দে! কনকাঞ্জলি দে! 

মেয়ের দুহাতে রবীন্দ্রনাথ ছিল ঠাসা। বাইশে শ্রাবণ ছুঁড়ে দিয়ে বলল, 

রবীন্দ্রনাথ থেকে কেবল এইটুকুই বিয়োগ করা যায় মা!
—------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বপ্নের বাকি আধ খানা না

মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে কারা যেন ঠেলে তুলল
বলল, ওঠ ওঠ এ রাস্তা আজ তোর নয়
দেখছিস না রাজার আসার আয়োজন চলছে
স্বাধীনতা হাতে সোনার রথে আসবে রাজা

স্বপ্ন টা আধখানা দেখা বাকি ছিল তখনো। 
ঘুম ফেলে বিস্ময়ে চোখ মেলে বলি, রাজা আসবে? তবে থাকি এইখানে তার কাছে চেয়ে নেব 
স্বপ্নের বাকি আধখানা…

ঠেলে দিল আরো জোরে, ভাগ বলছি!
শুনছিস রাজার দুহাতে থাকবে স্বাধীনতা
কানে থাকবে গান, ঠোঁটে হাসি
বলি তোর কথা শুনবে বা কী করে, বলবেই বা কী?

হুমড়ি খেয়ে পড়লাম সামনে। 
জন্ম থেকেই এ রাস্তা সে রাস্তায় মানুষ
মানুষ কী আর? লোকে আমায় ফালতু বলেই ডাকে।
কদিন আগে বড় রাস্তার মন্টু এসেছিল 
বলে গেছে তোর বয়স হয়েছে তের
আর দেরি নয়। 
রাজা আসবে তোর গুহায়…

বললাম, শোনো না! শুনছো? 
এ কী মন্টুর রাজা? 
আমার গুহা দেখবে? 
আমি তবে অপেক্ষায় থাকি?

ওরা ভয়ঙ্কর হাসল। বলল, এ রাজার পরনে
কাপড় থাকে…
স্বাধীনতা বাসি হলে আসিস
ছুঁয়ে দেবে তোকে

স্বাধীনতা! স্বাধীনতা! স্বাধীনতা!
কে স্বাধীনতা এটা তো বলে যাও!

দুশ বছর ধরে যে মা অনেক যন্ত্রণা নিয়ে নিয়ে
উনিশ শ সাতচল্লিশে এক সন্তান প্রসব করেছিল
তার নাম স্বাধীনতা!
অন্য কিছু নয়।
তবে তোর মত রাস্তায় পড়ে থাকে না।
মাথায় থাকে। 
জন্মদিন এলেই সে রাজার হাতে চরে
বাজনা বাজে। পতাকা ওড়ে…
তাই তোরা ভিক্ষে পাস, রাস্তা পাস।

কানের কাছে মুখ নামিয়ে ওদেরই একজন বলল
তবে এ ছেলেকে বেয়াদপ করেছে ওই রাজাই
নইলে কী আর রাস্তা ওর একার হয়?
আমাদেরও মুখ বন্ধ রাখতে হয়, নইলে…

ওই তো মন্টু ডাকছে ফালতু ফালতু বলে…
ও খুব জোরে জোরে ডাকছে আমায়
তোদের রাজা স্বাধীনতাকেই যখন বন্দী রেখেছে
আমায় আর কি দেবে?
চলি।
স্বপ্নের বাকি আধ খানা না হয় 
তার রাজার সঙ্গে কচি ধান ক্ষেতে শুয়েই দেখব!
—------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

এই তো আমার স্বাধীনতা!

সকাল বেলায় আমি যখন ফুল হয়ে থাকি
প্রজাপতি ঠিক এসে বসে আমার গায়ে
ঠোঁটে রাখে চুমো। আলতো আদর দিয়ে
বলে, উড়ে যেতে ইচ্ছে হয় না? 
মনে হয় না স্বাধীন হয়ে ভেসে যেতে দূরে?
আমি খিলখিল করে হেসে উঠি।
এই যে তুমি আসো, ভালোবাসো
আমি গন্ধ ছড়াই, ভেসেই তো যাই গো!
এটাই আমার স্বাধীনতা।

দুপুর বেলায় গাছ হয়ে যাই।
পথিক আসে। ছায়ায় বসে।
একদিন এক ছোট্ট শিশু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে
তোমার কাছে এক প্রশ্ন রাখতে এলাম
রাখবো?
আমি বললাম আগে আমার ছায়ায় জুরোও। তারপর
রেখো।
সে বললে, আচ্ছা শোনো না! বইতে পেলাম 
তোমার নাকি প্রাণ আছে ঠিক আমারই মত!
তবে যে চলতে পারো না, ছুটতে পারো না, কইতে
নাইতে কিছুই পারো না…
উড়ে যেতে ইচ্ছে হয় না?
মনে হয় না স্বাধীন হয়ে ছুটে যেতে দূরে?
আমি জোরে জোরে হেসে উঠলাম।
পাতাগুলো নড়ে উঠল। ছেলেটা বাতাস পেল 
কপালের ঘাম শুকালো তার।
তার হাতের মধ্যে একটা ফল ফেলে দিয়ে বললাম
এটাই আমার স্বাধীনতা।

বিকেল বেলা হতেই আমি বাড়ির বধূ
খেটে খুটে স্বামী আসবে। শ্বশুর ভাসুর 
সূর্য পশ্চিম ছুঁলেই আমি গা ধুয়ে এসে গান হই
চুল বাঁধি, প্রদীপ জ্বালাই।
স্বামী এসে হাত ধরে বলে, চলো হাওয়া খেয়ে আসি
আমি বলি, রান্না বাকি মশাই!
সে অভিমান করে। রাতের মত খানিক কাব্য করে বলে, ইচ্ছে হয় না উড়ে যেতে?
স্বাধীন হয়ে খুব ভাসতে?
আমি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরি।
বলি, এটাই আমার স্বাধীনতা।

আমার বার্ধক্যের চোখে ঘুম নেই
বন্দি ওষুধে অসুখে
যৌবন আমায় না দেখার ভান করে চলে যায়
বৃদ্ধ সময় আমি তাকে ডাকি, এস না গল্প করি!
যুবক বেলা টগবগে স্রোত নিয়ে ছুটে যায়।
কী মনে করে ফিরে আসে বেশ কিছু পরে
এই যে শোনো! ইচ্ছে হয় না ফিরে যেতে?
মনে হয় না স্বাধীন হতে?
শেষের শেষে দাঁড়িয়ে কম্পিত কণ্ঠে আমি বলি,
এই তো নিয়ম!
এই তো আমার স্বাধীনতা!
এই তো আমার স্বাধীনতা।
—------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বাধীনতা মানে

স্বাধীনতা মানে স্বচ্ছ সবুজ পৃথিবীর বাস
স্বাধীনতা মানে সজোরে বলা, বুক ভরে নাও শ্বাস!

স্বাধীনতা মানে ওই ছেলেটার খিদেয় দিন রাত
স্বাধীনতা মানে ঘুম ঘুম চোখে ধোঁয়া ওঠা ভাত

স্বাধীনতা মানে মাঠ ভরা হাসি শ্যামল কচি ধান
স্বাধীনতা মানে ভারত মাতার নির্ভয় সন্তান…

ছেলেটা ভারী বিস্মিত। এত ধুপ ধুনো…
কীসের আয়োজন?
লোকটা বলে তোরা এসব বুঝবি না রে! তোরা ছোটো জন!

পতাকা উড়ছে দেখছিস? স্বাধীনতা ওর মানে
দেখ দেখ ওই টুকু শিশুও সেটা জানে…

তোদের শুধু খিদে খিদে চাই চাই চাই
খাওয়া ভিন্ন দেশ প্রেম এসব কিছুই নাই?

ওই দেখ রান্না হচ্ছে যা নিয়ে পালা!
ছেলেটা বোঝে স্বাধীনতা মানে শাল্ পাতার উপরে 
গরম খিচুড়ি ঢালা…

স্বাধীনতা পেয়েছি! স্বাধীনতা খেয়েছি! আনন্দ তার ভারী
দেশ মা ভাবে, স্বাধীনতা দেশ ছেড়েছে কবেই…অশিক্ষা মহামারী।
—------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

'অমৃতস্য পুত্রা…'

ঊষর ক্ষেতের পাশে শুষ্ক শরীরে শুয়ে পাগলিনী
প্রলাপে মত্ত।
দিগম্বরী সাজ তার। শয়ে শয়ে পিঁপড়ে তাকে ঘিরে।

গৃহস্থ বাড়ির বধুটি এ পাড়ায় আসছিল শিশু খুঁজতে তার…
বিস্মিত চোখে দেখল, ঊষর ক্ষেতের ঠিক মাঝামাঝি
এক খানা বৃষ্টির মেঘ ঝুলে আছে…
কচি চারা উঁকি দিয়ে আছে তার শিশুটির মত।

পাগলিনী র কাছে গিয়ে দেখে,
কেউ তাকে করেনি প্রসূতি
কেউ দেয় নি কালশিটে ক্ষত…
শুষ্ক ত্বকের নিচে এখনো লুকিয়ে ঘর
চোখের ভিতরে স্মৃতি…

বধূটি বাড়ি নিয়ে ফেরে শিশু আর পাগলিনী একসাথে
স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে আয়না রাখে তার সামনে

শিশুটি দেখতে পায় সে আয়নায় স্বপ্ন ফুটে উঠেছে
এক সুন্দর…
বৃষ্টি পড়ছে
ঊষর ক্ষেতে গান গেয়ে গেয়ে শ্রাবণ বুনছে কৃষক।
—-------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমরা যখন

আমরা যখন একসঙ্গে থাকি
সকাল কেটে নদী মাঠের বেলা
মেঘ রোদ্দুর আঁকি
ময়ূর ময়ূর করতে লাগি খেলা!

আমরা যখন একসঙ্গে থাকি
গা ধোয়ানো সুখ আছড়ে পড়ে
ভালোবেসে মাখি
আমাদের সেই একলা হওয়ার ঘরে…

আমি তার চুল ভিজিয়ে বলি
দূর নয় তো দূরে!
একটা ছোট্ট গলি
তারপরেতেই বাঁধা আমরা সুরে

ছুঁয়ে আসি বৃষ্টি বৃষ্টি ঘাট
চুমো নামের ঢেউ
আমাদের সেই মাতাল হাওয়ার মাঠ
যেখানে আর যায় না কেউ!

কেবল একটা কথা আঁকি
আমরা যখন একসঙ্গে থাকি
কোয়েল তিতির বাবুই শ্যামা ডাকি
ভালোবেসে ভালোবাসা মাখি…

পাহাড় থেকে ঝর্ণা গড়ায় খুব
আমি তাকে জড়িয়ে থাকি
একসঙ্গে বিরহে দিই ডুব
আমি তাকে কবিতা বলে ডাকি।
—--------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

ভালোবাসা

আধো ঘুম তখন তার, 
বললাম, করো হাঁ…
গ্রাস মুখে নিয়েই সে বলল, ভালোবাসো?

আলুথালু মুখ। হলুদ গুঁড়ো আর স্নেহ মেশানো আঁচল
বললাম, বিকেলে সিনেমার টিকিট কাটলাম,
তৈরি থেকো।

হলের ভিতরে ওর কানের কাছে মুখ নামিয়ে
জিজ্ঞেস করলাম, ভালোবাসো?

মায়ের চুল বাঁধছিল সেদিন।
ফুল ফুটেছিল আগেই
কবরীতে করবী এনে দিল গুঁজে
আমি পাশে এসে দাঁড়াতেই আমার দিকে হাত বাড়ালো।
মা হেসে উঠল। বলল, হ্যাঁ রে! বিয়ে কত বছরের হল
তোদের? পুরানো হয় না বুঝি আদর?
তার তিরতির করে ওঠা ঠোঁট বলল, পনের মা।

রাত্রে সে ভীষণ করল রাগ!
দৃষ্টিতে নিশ্চুপ।
বুকের মধ্যে মুখটা নিয়ে তখন খুব বলছি আমি
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
সে বলছে, চলবে না এ! 
বিদেশ তোমায় যেতেই হবে! 

অনেক বড় প্রমোশন আমার 
সে থাকবে অপেক্ষায় এমনই কথা
ভালোবাসাও থাকবে বিলক্ষণ
কিন্তু আমি না বলাতেই রাগ তার খুব…

চোখে তার জল দেখেছি।
প্রশ্ন রেখেছি আলিঙ্গনে, তবে দিতে চাও কেন যেতে?

শেষে টিকিটখানা দিলাম ছুঁড়ে ফেলে।
মা বলল, বেশ করেছিস।
সে হেসে বলল,
এমন বোকা আর কেউ থাকে?

বাহুর ঘরে তাকে টেনে নিই। 
বলি, ভালোবাসা বেঁধে যে রাখে!
—-----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

গান রাখলাম চুম্বনে

শ্যাম - 'ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো-- তোমার চরণমঞ্জীরে॥'

আহা রাই আমার! চরণে এত শোণিত? 
এই অভিসারে আমার যে গো হৃদয়ে বড় ক্ষত!

রাই - অশ্রু কেন চোখে তোমার প্রিয়? প্রেমে কি গো এত ব্যথা লাগে? এইটুকু ক্ষত এ আমার বড় আনন্দের! 

শ্যাম - দাও দাও পা দুখানি! কোলে তুলে আদর দিই, যত্ন দিই। 

রাই - ইস! প্রাণ আমার! তার চেয়ে বাঁশিতে তোলো মেঘ মল্লার…ঝমঝম করে বৃষ্টি আসুক। আমরা দুজন একসঙ্গে ভালোবাসতে বাসতে ভেসে যাই শ্রাবন দেশের ঘাটে। শুধিয়ে আসি সুধার পুকুর ঘাটে, তোমরা কি কেউ ভালোবাসতে পারো, আমার শ্যামের মত?

শ্যাম - গোকুল যে ছাড়তে হবে আমায়! মথুরা গমনের সময় হয়েছে। তোমার জন্য একটা গান বেঁধেছি। সেইটে তোমার মর্মে দেব ঢেলে। আমায় মনে পড়লে শুনো তাকে। আগল দিয়ে রেখো। শরীর মন সবটুকু বন্ধ করে যত্ন দিয়ে…

রাই - এমন করে বোলো না সখা! তোমায় ছাড়া কেমন করে থাকবো তবে প্রিয়? শাশুড়ি ননদ কাঁটা বিছায় পথে, স্বামী মুখ ভার করে…তবু ছুটে ছুটে আসি। তোমায় ছেড়ে থাকবো কেমন করে?

শ্যাম - প্রেমে বিরহ যে অবশ্যম্ভাবী প্রিয়ে! আমার গান খানি হৃদয়ে রেখো। তোমার যখনই মনখারাপ হবে, নিজের বুকে হাত দিয়ে আমায় ছুঁয়ে নিও।

রাই - কেমন করে আমার বুকে তোমায় পাবো?

শ্যাম - ভালোবাসলে শরীর জুড়ে যায় মনের সঙ্গে। মন শরীরে। দূরত্ব যতই সুদূর হোক, আশায় বাসা গড়ে তোলে ভালোবাসা ঠিক বুকের মাঝখানে। আমি যেমন তোমায় ছোঁবো অনুভবে, তেমনই তুমিও আমায় পাবে।

রাই - যেও না কানাই!

শ্যাম - এই তো উচিত তোমার দেবী? এত স্বার্থপর তো নয় ভালোবাসা! আঁচল খুলে দাও…

রাই - ‘‘জনম অবধি হাম রূপ নেহারিলু—
নয়ন না তিরপিত ভেল।
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখলু
তবু হিয়া জুড়ন না গেল।"

যাও তবে। ফিরে এস ঠিক। যদি এক পৃথিবী বদল হয়ে যায়…যদি সহস্র বছর পার হয়ে যায়…যদি মেঘ রোদ সুর নতুন হয়ে যায়…ফিরে এসে আমার বুকে তোমার গান খানিকে ঠিক খুঁজে পাবে। 
আমার শরীরে তোমার ঘ্রাণ…
আমার কিন্তু মৃত্যু হবে না কানু!
সাবধানে এস…

শ্যাম - বিদায় দাও। কর্তব্য শেষ করেই ফিরে আসবো আমাদের এই হৃদয় পুরের বাসায়।
দেখো, বৃষ্টি নামলো।
এই গান রাখলাম চুম্বনে…
—-----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

বিজয়া

অতি স্নেহে বাবা নাম রেখেছিলেন আগমনী।
মাস তিনেক পরেই বাবা মায়ের গাড়ি দুর্ঘটনায়
মৃত্যু…
আমার নাম হয়ে যায় অভাগী।

আমার বুদ্ধি হালকা ছিল। শরীর ছিল ভারী।
জেঠি মারতে মারতে হাত ব্যথা করে ছেড়ে দিয়ে
বলত, আবাগী মরে না বাপু! 

বই পত্তর ছুঁয়েও দেখিনি কোনোদিন
দেখিনি কেমন করে ভালোবাসা হয়
ছোটকার বন্ধু এসে আমার গালে টোকা দিয়ে
বলত, কী খুকু কেমন আছো?
বেশ লাগত আমার।

আমার বুদ্ধি বড় হালকা। কিন্তু হৃদয় ছিল ভারী।
কেঁপে কেঁপে উঠত সেই টোকায়।

রোজ রোজ এমন চলতে চলতে আমার শরীরে
গজিয়ে উঠল জেঠির সঙ্গে দেখতে যাওয়া
যাত্রা পালা…
একদিন ফাঁকা বুদ্ধির ঘরে কী এক বিস্ময়
প্রবেশ করল। কী এক আনন্দ…
জাপটে ধরে আঁচড়ে কামড়ে ভালোবেসে ভেসে
গেলাম। 
ছোটকার বন্ধু সেদিন আমার গালে স্নেহ রাখতে আসার সুযোগ পেয়ে
আর তাকে ছাড়িনি…

হালকা বুদ্ধি বলে কি শরীর বড় হতে নেই?
ছোটকা মাথায় ছুঁড়ল চ্যালা কাঠ…
জ্যাঠা বলল, বাড়ির কলঙ্ক। 
আজ দশমী। বিজয়ায় বিজয় করে দিয়ে আয়।

এসব অনেক জন্ম আগের কথা।
এখন আমি মাটি।
ছোটকার বন্ধু কুমোরটুলি।
আমায় গড়ে।
আগমনী থেকে বিজয়া হই।
আবার জলে ভেসে ভেসে ফিরে আসি কুমোরটুলিতে।

সব ভালোবাসা কী আর প্রতি জন্মে রক্ত মাংসে হয়?
—-------–------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

বকুল বৈরাগী

এই বুঝি গনতন্ত্র? 
বকুল বৈরাগীর স্পর্ধা বড়! 
যেখানে দেওয়ালের ও কান থাকে, ও সেখানে
বাতাসে বাতাসে তুললো প্রশ্ন?
 
প্রশ্ন গিয়ে পৌঁছালো সরকারি দপ্তরে
তার আগে সুন্দরী বান্ধবীর মর্মে
এমন করে বলে কে বা? 
এতটুকুও বিবেচনা নাই? 
আমি বলে সামান্য এক নারী…
যদিও বস্তা ভরে কিছু কেমন টাকা রাখতে পারি

বকুল বৈরাগী চিৎকার করে উঠল
আমার ছেলেটা পাস করে বসেছিল
চাকরি হবে! চাকরি হবে!
একদিন মরে গেল…
শালা এই বুঝি গনতন্ত্র? 

বকুলের পাশে এসে দাঁড়ালো আরো ক্লান্ত মুখ
ক্ষুধার্ত চোখ। জিজ্ঞেস করলো, শাস্তি হবে না?

বৈরাগী উত্তর দিল, 
ওদের জন্য হাসপাতাল আছে
শাস্তি নেই…
প্রজন্মের পর প্রজন্ম হাঁ করে তোরা দাঁড়িয়ে থাক
খাবি খা
হাতে রইল হ্যারিকেন…

মন্ত্রীর সুন্দরীরা ছুটে এল বকুল বৈরাগীর কাছে
ছুটে পালিয়ে গেল পাশে দাঁড়ানো মুখ গুলো
ছো! তোর তো দেখি একটা জামাও নেই!
বকুলের গায়ে থুথু ছুড়লো সুন্দরীর নিরাপত্তারক্ষী

বকুল আকাশ ফাটিয়ে বলে উঠল,
জামা নেই, জুতো নেই, ঘর নেই, 
আমার শুধু একটা আস্ত শির দাঁড়া আছে।

ক দিন পরে সব ঠান্ডা।
সব স্রোত মিলিয়ে গেল।
মন্ত্রী আবার পেট ফুলিয়ে টাক ডুমাডুম 

শুধু বকুলকে আর পাওয়া গেল না ।
—---------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

'কালো? তা সে…'

আমি সেই বাইশে শ্রাবণ চাই।
ঘাসের উপর নেমে আসবে মেঘ
গাছে গাছে বাতাস শুয়ে শোক রাখবে
গাছেরা নুয়ে পড়বে মাটিতে
কচি ধান গল্প বুনতে বুনতে কান্নায় ভাঙতে চাইবে
মনকেমনের পরাজয় গাঁথবে বিরহী…

চোখে কাজল এঁকে আমি দাঁড়াবো তাঁর কাছে।
তিনি মৃত্যু থেকে উঠে এসে আমার দিকে
তাকাবেন…
বলবেন, ' কালো? তা সে যতই কালো হোক… '

কালো বিড়ালটা রোজ মাছ খেয়ে যেত লুকিয়ে
শাশুড়ি মা খুন্তি ছোঁড়েন, ঘটি বাটি…
মর মর মর! 
দিন সাতেক হল বিড়াল টা আর আসেনা
কালো বউ দুপুরবেলা একটা উপন্যাস হয়ে যায়
শাশুড়ি মা ননদের সঙ্গে অ-সুখ ঢালেন তাতে
কালো বউ চুল ভিজিয়ে নেয় সে খটখটে দুপুরের
অ-সুখে…
তারপর স্বপ্ন দেখে।
আমি কি প্রবল স্বপ্ন দেখি!…

আমার একটা ঝর্ণা থাকবে
গা ডুবিয়ে তিরতিরে স্রোত হব আমি।
আমার একটা পাখি থাকবে
রং চুবিয়ে তাকেই রেখে যাবো সাদা ক্যানভাসে
আমার একটাই কবিতা থাকবে
'কালো? তা সে যতই কালো হোক…'

ময়না পাড়ার মাঠে দেখেছিলাম একদিন
একজন বেশ তাকাতো আমার দিকে
কিছুক্ষণ পরে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম
তুমিই কি সেই? তুমিই কি মেঘলা দিনের কবি? 
সে খুব হেসেছিল। বলেছিল, 
আমি সিধু কানহু তো নই যে সাঁওতাল পরগনা 
লিখবো! 

আমি সেই শ্রাবন চাই
সেই বাইশ…
সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি পড়বে!
মন কেমন দিকে দিকে মেলবে শাখা
মেঘ আরো ঘন হবে 
আরো ঘন

তার থেকেও ঘন হয়ে উঠবে আমার চোখের কাজল
কবি মৃত্যু ছেড়ে উঠে বসবেন
আমার কানের কাছে মুখ রেখে বলবেন,
 'কালো? তা সে যতই কালো হোক…'

মিশকালো বিড়াল টা সত্যিই আর কখনো আসেনি।
—-------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বয়ংসিদ্ধা

ন কর্তার শ্রাদ্ধ শান্তি চোকার পরে সুচরিতা সাদা মেঘের মত থান উড়িয়ে দিল আকাশে।
সকলে নিন্দে মন্দে বাতাসে ছ্যা ছ্যা ছড়িয়ে দিল…

সুচরিতা রামধনু রঙের শাড়িটা পরে গটগট করে
হেঁটে বেরোলো উঠোন, তুলসি তলা, আমবাগান…

ঘোমটা খুলে হঠাৎ আসা বৃষ্টিতে ভিজে চোখের
জলের নাম দিল মুক্তি।

আমার নাম সুচরিতা, ন বউ নয়।
সব কর্তারা খাওয়ার টেবিলে বসে চমকে উঠেছিল নতুন বউয়ের কণ্ঠে…
মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত লোকটা তাকে সকলের সামনে ন বলেই ডেকে এসেছে।
আড়ালে গাল লাল করে ভয়ে সংকোচে ডাকতো সু…

ভালোবাসতো মাছ ভাতের পরে দিবানিদ্রা, ভরপুর মেদ আর থলথলে বুদ্ধি।
সুচরিতার আগুন মনের বনে লুকিয়ে চুরিয়ে উঁকি দিত রামধনু রঙের শাড়ি
খবরের কাগজ
বিপ্লব…

সতীদাহের আয়োজন হয়েছিল এক সময় তার নামে
তারও আগে রামচন্দ্রের সামনে অগ্নি পরীক্ষা
গুপ্ত কক্ষে লেখাপড়া
ঠোঁটের কোণে হাসি সুচরিতার
পিছন থেকে বড় মেজ সেজ বউ ডাকছে
ভালো করছিস না ন বউ! এমন বেহায়া হওয়া 
রুচিতে বাধবে একদিন দেখিস! 
ওরে তোর ছেলে মেয়েরা যে বড় হচ্ছে রে!

এক পৃথিবী আনন্দের আয়োজন।
মেঘে মেঘে মুহুর্মুহু ঘর বাঁধছে সুখ
ভালোবাসছে রামধনু, গোধূলি এসে মিলে যাচ্ছে 
সন্ধেয়…
মাটির উপর পা রেখে সুচরিতা চিঠি লিখল
গগন কে। 
মাসতুতো দেওর কে কোনোদিন সে ভাই বলেনি
ঠাকুরপো তো নয়ই…

গগন বলেছিল, তুমি স্বয়ংসিদ্ধা।
তোমায় বড় প্রয়োজন আগুন হতে!

ঝড় আসার আগে পৃথিবী গুম হয়ে যায়
সুচরিতাও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে
এক আকাশ আগুন মেঘের নিচে।

একটু পরেই সে ঝড় হয়ে উঠবে।
বড় বউ মেজ বউ সেজ ন বৌদের ঘাড় ধরে
স্বাধীনতায় দেবে মুখ গুঁজে
রঙ চেনাবে…
বেগুনি নীল আকাশী সবুজ…

ছেলে মেয়ে মানুষ করার আগে সব মা মানুষ করতে হবে তাকে!
—-----------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বাধীনতার জন্মদিন

আমার মা বাবাকে হত্যা করেছিল।
মাকে ধরে টানা হ্যাঁচড়া 
আইন আদালত …
যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ।

আমি মায়ের গর্ভে বসে বুঝতে পেরেছিলাম হয়ত!
খুব কেঁদেছিলাম…
ভয় পেয়ে ডাক্তার মায়ের জরায়ু চিরে বের করে
এনেছিল আমায়
বলেছিল,
এই নাও তোমার জেল-পরী।

আমার মা বাবাকে হত্যা করেছিল। 

আমার খুব ইচ্ছে করতো খেলতে।
ও মা! খেলবো! বললেই মা আঙুল বাড়িয়ে দিত
ইকির মিকির চামচিকি…
মায়ের হাতে কোথাও কোনো হত্যা করার চিহ্ন দেখিনি কখনো
আদর দেখেছি, স্নেহ দেখেছি,
গোপন কালশিটে স্মৃতি দেখেছি।

রাত নামলেই মায়ের চোখে ভেসে উঠত, মদ্যপ বাবার অত্যাচার।
মায়ের কান্নায় গড়িয়ে পড়ত ঘন কালো মেঘ
আমি চুপচাপ শুয়ে মায়ের চোখের জল গুনতাম।

প্রত্যেক বছর স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় কারাগারে
পতাকা তুলে চকলেট দেয় হাতে।
আমি চকলেট ছুঁড়ে ফেলে দিই!
আমার মা আমার গালে ঠাস করে মারে চড় 
জেলার সাহেব আহাহা করে ওঠেন
ওর কী দোষ রে! জন্ম থেকেই নরকে…

জেলার সাহেব বলেছেন, তোর মায়ের সাজা
শেষের দিকে…
আমিও মায়ের সাথে চোদ্দ বছর পরে আকাশ দেখবো। 
বাতাস এসে আমার গায়ে হাত রাখবে।
মাটি বলবে, নিশ্চিন্তে পা রাখ। আয় বুকে…

আর আমি মাকে লুকিয়ে ঐরকম বাবা খুঁজে বেড়াবো।
মা তো বাবাকে মারতে চায়নি মোটে। 
আমি চোদ্দ বছরে চোদ্দ টা চড় গালে নিয়ে 
হত্যা করবো ওই সব মায়ের পরাধীনতা…
যারা ভয় পায়, জীবন পায় না।

তারপর আসবে পনেরই আগস্ট।
কারাগারের ভিতরে কিম্বা বাইরে পতাকা উড়বে
পতপত করে।
উড়বে সুখ।
কোনো মা সন্তান-গর্ভে প্রবেশ করবে না অন্ধকারে

আমি চিৎকার করে করে ঘোষণা করবো,
জন্মদিন! জন্মদিন! 
আজ স্বাধীনতার জন্মদিন!
—--------–---------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

'জন্ম নেব মাসীর ঘরে, মা গো…'

আমি খুঁজে চলেছি
আমি প্রবল ভাবে খুঁজে চলেছি
কণ্ঠে নীল দাগ, টগবগে হাসি
ফাঁসির মঞ্চে উদাত্ত স্বর…
'একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি'

না আমি ক্ষুদিরামকে খুঁজছি না
খুঁজছি তার মাকে।

আমি এক কঠিন প্রাণ মাকে খুঁজছি
যে তার সন্তানের জন্মের পরে তার কানে 
মন্ত্র দেবে, বন্দেমাতরম! 
সাঁতার শেখাবে, ব্যায়াম শেখাবে
স্বপ্ন ভাগ করতে শেখাবে।
আঙুল তুলে দেখিয়ে দেবে ওই দেখো পথ
একা যাও। ছুঁয়ে এস আকাশ।

ফাঁসির মঞ্চে উঠলে সে মা ছুটে আসবে
পরনে শান্ত কান্নার রং, চিবুক দিয়ে গড়িয়ে আসা
গর্ব…
তোকে বিদ্যালয়ে প্রথম হতে বলিনি বাবা
দিয়েছিলাম প্রয়োজনে মৃত্যুতে প্রথম হওয়ার শিক্ষা।
আমার আঁচল পাতা রইল। তুই ফিরলেই আমি
আবার তোকে শিখিয়ে যাবো, জয় হিন্দ! জয় হিন্দ!
জয় হিন্দ!

আমি খুঁজে চলেছি
আমি প্রবল ভাবে খুঁজে চলেছি সেই মাকে।
সন্তান জন্মের পরেই যে উদগ্রীব হয়ে ফাঁসির দাগ
খুঁজবে …
নাম রাখবে ক্ষুদিরাম।

তাকে পেলে কী করবো?

আমার বাগানের শেষ গাছটা মৃত্যুর আগে একটা
ফুল দিয়েছিল। 
তার ইচ্ছে ছিল ভারত মাতার পায়ে রাখি তাকে…

আর একটা ক্ষুদিরামের মা পেলে আমি তার পায়ে
রাখতাম সেই ফুল…

আসলে কী হয়
ক্ষুদিরাম জন্মাতে চায়
তার মা জন্মায় না!
তার মা আর জন্মায় না!
—--------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

বন্যা

নর নারীর বাঁধে বাঁধতে চাও আমায়? 
আকাশ আমায় বৃষ্টি দেয়
প্রবল ঝড় আমায় সাহস দেয়
বাঁধ ভাঙ্গার গান দেয় স্রোত
আমি দুকূল প্লাবিত করে ভাসিয়ে দিয়ে যাই
তোমাদের ঘেরাটোপ, নিয়ম নিষেধ
আমি বন্যা…
প্রচন্ড স্পর্ধার আর এক নাম!

ভাবছো শুধুই ভাঙি? 
গড়ি না কিছুই?

আমার অভিমান থেমে গেলে দেখো
তোমার জন্যই রেখে যাই নরম সরল মাটি
ইচ্ছেমত ফসল ফলাও। স্বপ্ন বাঁধো। চাঁদকে নামাও… 

বন্যার পরে আমার নাম দিয়ে দাও পলি।
—----------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

মেহের আলি

মেহের আলিকে হিড়হিড় করে নামানো হল পথে
প্রখর রোদ্দুরে ফেলে টিপে ধরা হল হাত পা
জিজ্ঞেস করা হল, বল! বল তুই এমন কেন করিস?
এর বাড়ির উঠোন থেকে তুলে আনিস চারা
ওর বাড়ির মরা দরজায় আসিস রেখে
যত্র তত্র বিছিয়ে রাখিস ছায়া
কেন করিস? বল শিগগির!

মেহের আলির ঠোঁটের কোণে হাসি।
কোনো উত্তর না পেয়ে তার শরীর কেটে ফেলা হল 
প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আলাদা করে ছড়িয়ে দেওয়া হল
বাতাস এসে ভাসিয়ে নিয়ে গেল তাদের।
মাটি বুক পেতে দিল।
ঝমঝম করে নেমে এল বৃষ্টি।
তারপর উঠল সূর্য
একটা মেহের আলি থেকে জন্ম নিল হাজার হাজার বৃক্ষ
আলো এসে বলে গেল উৎসব হবে উৎসব
ক্লান্ত প্রাণ এসে শান্ত মায়ায় গাইবে গান
গড়িয়ে পড়বে স্নেহ। লুটিয়ে পড়বে আনন্দ
ছিন্ন ভিন্ন হবে দূষণ, শোষণ। 
মেহের আলির পাগলা হাসি আকাশ ছুঁয়ে ফিরে এল
সে উৎসবের নাম কী হবে?
বনমহোৎসব? সবুজ গান? 
আরো অনেক জোরে হেসে উঠলো মেহের।

মেহের আলি পাগল। চোয়াল ভেঙে রক্ত চুঁইয়ে পড়লেও সে স্বপ্ন দেখতে পারে…
মৃতদেহে শ্বাস বসানোর অপরাধে 
মৃত হয়েও আওয়াজ দিয়ে শূন্য চিরতে পারে
উৎসব হবে! উৎসব!
শুনছো তোমরা…
–––---------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

উৎসব

অরণ্য কেটে ফেলা হল।
প্যান্ডেল বাঁধা হল।
গলগল করে লোকজন ঢুকলো সেই প্যান্ডেলের ভিতর
সামনের চেয়ারে বসা বিশিষ্ট পরিবেশ প্রেমীর হাতে
তুলে দেওয়া হল মাইক্রোফোন…
বন্ধুগণ! আমাদের জীবনে বৃক্ষের গুরুত্ব অসীম
ঠিক ওই আকাশের মত…

কচি প্রাণ ছিল এক। খিলখিল করে হেসে উঠে
বললো, কিন্তু আকাশ তো নীল!
গাছ যে সবুজ রঙের গান গায়! আমি শুনেছি…

এত স্পর্ধা শিশুর!

মাইক্রোফোন চলতে শুরু করলো। লোকের কথায় 
কান দেবেন না। গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান।
উপস্থিত সম্মানিত অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হল
মোসান্ডার চারা…

মাধবী ভালোবেসেছিল বাতাবিকে।
নাম রেখেছিল আলো
বাতাবি তাকে ঊষা বলে ডাকতো।

বনোমহৎসব করতে গিয়ে ও দুটোই গিয়ে পড়েছে
রাস্তার ওই পারে।
চেতনা হারানোর আগে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরেছে
প্রার্থনা করেছে, পরের জন্মে মানুষের বুকে জন্ম নেবে
নাম নেবে, বোধ
নইলে প্রতিশোধ…

ভাষণ শেষ। খাওয়া দাওয়া শেষ। অনুষ্ঠান শেষ।

শিশুটি ধীরে ধীরে প্যান্ডেল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এল।

পায়ে পায়ে মাটি খুঁড়লো।
প্রবেশ করলো তার ভিতরে।
শিকড় গজালো। শাখা প্রশাখা
সূর্য এসে তাপ দিলো, বাতাস শ্বাস।
শিশুটার সারা শরীরের সব পাতায় শুরু হল
সালোকসংশ্লেষ…

গলগল করে লোকজন ছুটে এল।
পরিবেশ প্রেমীর মাইক্রোফোন ভেঙে গেল।
ফিসফিস করে বললো…
সে কী! শিশুটির এমন সাহস!
সভ্যতার উয়ন্নয়নের বিপরীতে যায়!

শিশুটির পিতা কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে উঠলো
শুনুন!
একে বলে বৃক্ষরোপন!
একে বলে উৎসব!
—-------------–--
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আহির ভৈরব ও কসাই

মাংসের গামলায় দু ফোঁটা জল পড়ে ছেলেটার চোখ থেকে
বিক্রি শেষ হলে দুটো হাত রগড়ে ধুয়ে নেয় সে।
তারপর মাটি থেকে তার গামছায় কুড়িয়ে নেয় বরষার হীরে
সজনে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে বাড়ি ফেরে ছেলেটা।

রোজ সকালে কসাইয়ের ছেলেটা মুরগির দোকানে
এসে তাদের গায়ে হাত রাখে। 
কানের কাছে মুখ নামিয়ে শোনায় আহির ভৈরব
মুরগিরা শান্ত হয়। ঘুমিয়ে পড়ে। 
ছুরির আঘাতেও আর্তনাদ ওঠে না…
নীরব মাংসের গামলায় ছেলেটির অশ্রু পড়ে দু ফোঁটা

মল্লিকা বললো, তুই একটা কসাই। তোকে ভালোবাসবো আমি?
ছেলেটা নিশ্চুপ।
ফুসফুসে কিছুটা বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে গিয়েছিল সে মেয়েটির জন্য
আছড়ে ফেললো মাটিতে।

ছেলেটার বৃদ্ধ অথর্ব বাবা মারা গেল।
গোধূলি লগ্নে সুপাত্রে মল্লিকার বিয়ে
ছেলেটির দোকানের সব মুরগি যাবে সেই বিয়েতে
খাদ্য হয়ে…
ছেলেটি খাঁচার পাল্লা খুলে গড়িয়ে দিল সুর…
আরোহ অবরোহে ধুয়ে গেল তাদের আর্তনাদ।
মাংসের গামলার উপর ছেলেটা আলো রাখলো একমুঠো
লিখে দিল, গোধূলির পরে রাত্রি নামবে যখন
এ আলো মেখে নিও।

'আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে…'
মাটি চিরে চিরে ছেলেটার পায়ের ছাপ চলে গেল
দূরে…

এখানে উইয়ের ঢিবির নিচে একটা মাংসের দোকান ছিল
ছেলেটা সুর দিয়ে মুরগি ভিজিয়ে মাংস করতো।
একটুও আর্তনাদ হত না।
ওরাও ছেলেটাকে ভালোবাসতো।
শুধু আমিই…
মল্লিকার হাতে সত্তুরে লাঠি।
কথাগুলো শেষ করেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।
—----------------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

গোধূলি-কিয়া

প্রবল বৃষ্টি শুরু হল হঠাৎ
সঙ্গে ছাতা ও নেই আজ।
সামনের বাড়িটার রোয়াক ফাঁকা
আপাতত থেমে যাওয়াই সমীচীন মনে হল
বৃষ্টি একটু কমলেই না হয় ফেরা যাবে নিজ গৃহে

শুনশান পথ। আমার চুল থেকে বৃষ্টির জল
গড়িয়ে পড়ছে পায়ে
বাতাস এসে স্নায়ুকে ঘুম দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই প্রবেশ করলাম স্বপ্নে…

ইস! একেবারে ভিজে গেছেন যে!
শরীর খারাপ করবে কিন্তু!

কোথা থেকে এল বাক্য দুটো?
কোন্ অজানা থেকে?
কোন্ অচিন পুর থেকে?
গুহার অতলে লুকিয়ে থাকা প্রাগৈতহাসিক কোনো
সভ্যতা থেকে? 
নাকি কোনো ঝর্ণা? 
অরণ্য হতে পারে কি?
বৃষ্টিতে ওদের আনন্দই তো সবচেয়ে বেশি
তাই কি এ স্বর এত মিষ্টি?
এমন ভেজা স্বপ্নে এত সুখ থাকে? 

একটা গাড়ি চলে গেল সামনের রাস্তায় দাঁড়ানো
জল কেটে কেটে…
স্নায়ু সজাগ হল আমার
স্বপ্নই ছিল বটে! 

সন্ধের একটু পরে কলেজ থেকে ফিরে এল আমার মেয়ে।
আমার গোধূলিতে তখনো সেই স্বপ্নের রেশ
মনে হচ্ছিল সে স্বরের জন্য হাজার বৃষ্টিতে ভিজে
তপস্যা করা যায়
সে স্বরের জন্য লক্ষ মেঘ মাথায় নেওয়া যায়
সে স্বরের জন্য অযুত নিযুত বার স্বপ্ন দেখা যায়
আমার স্নায়ুকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিক বাতাস
আমি আবার ছুটে যাই সেই বাড়ির রোয়াকে…

তুমি নাকি আজ তিথি দের বাড়ির সামনের 
রোয়াকে দাঁড়িয়ে ছিলে বৃষ্টির সময়?
মেয়ের কথায় নড়ে উঠল আমার শরীর।
হ্যাঁ। তুই কী করে জানলি?

তিথির মা তোমাকে ডাকছিল।
তুমি নাকি কোনো সাড়াই দাওনি?
তিথি বলছিল।

আমার মেয়ের বন্ধু তিথি।
ও স্বর তবে তার মায়ের? 
এক আকাশ সুখ যে স্বরে
সেই স্বর আমার মেয়ের চেনা!
সেই স্বর পার্থিব? 

বাবা জানো! তিথির বাবা ওর মাকে প্রাণে মেরে
দিতে চেয়ে অ্যাসিড ছুঁড়েছিল…
ওর মা এক ভয়ঙ্কর মুখ নিয়ে ঘরের কোণে
লুকিয়ে থাকে
তিথি বলে, আমার মাকে আমি এক তুফান খুঁজে দেব একদিন
যার বুকে মাথা রেখে মা ভেসে যেতে পারবে
নিশ্চিন্তে…
তিথি ওর মাকে ভালো সূর্য দেখাতে চায় 
তিথি ওর মাকে ভালো পুরুষ দেখাতে চায়
বন্ধু খুঁজে দিতে চায়

মেয়ে আরো বলছে…
তিথির মা কোনোদিন সুখ পায়নি জীবনে
আর আমি মা পাইনি
ও বাবা! 
চমকে উঠলাম আমি!
আমার কলেজে পড়া মেয়ে আমার গোধূলি বেলায় বসে
এ কী সব বলছে আমায়?

বাবা! তিথির মায়ের নাম বৃষ্টি।

আমি চুপ করে আছি তখনো…
না থাক তার রূপ
স্বর্গীয় সুর যে আছে তার!
কানের ভিতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করা বাক্য দুটি
ইস একেবারে ভিজে গেছেন যে!
শরীর খারাপ করবে কিন্তু!

এবার আমার বিস্মিত কাঁধ ঝাঁকালো আমার মেয়ে

তিথির মা খুব ভালো…
ও বাবা! তুমি বৃষ্টির তুফান হবে গো?
—------------–―
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

সূর্য

"The tree of Liberty must be refreshed from time to time with the Blood of patriots and tyrants! …" Thomas Jefferson

ওরে কে আছিস শত্রু তোরা মৃত্যু নাচন নাচ!
বীরের রক্তে সতেজ সবুজ স্বাধীনতার গাছ।

ওর নাম দিলাম নটরাজ। ক্ষুদিরাম দিলেও হত
কিন্তু মাত্র আঠারোয় আগুন নিভতে দেওয়া চলে না
দেশ তো আমার মা! সেই প্রলয়ের সতীই না হয় হল!

চারিদিকে ভয়ংকর অন্ধকার! 
আধমরা চিৎকার করছে বাঁচতে চাই বাঁচতে চাই বলে
কচুপাতার উপরে ঘর বাঁধতে চেয়ে বারবার পিছল
খেয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন

ওর নাম দিয়েছি শিব। হাতের তালুতে হিসেব
পায়ের পাতায় দৌড় গলায় গম্ভীর নাদ…
কে আছো সঙ্গে? 
পাহাড় উঠছে কেঁপে
সমুদ্র উঠছে ফুলে
দারুণ গতিতে বয়ে চলেছে বাতাস

অন্ধকার গিজগিজ করছে। আগাছার দল 
মাথা চুলকোচ্ছে, দাঁত কিড়মিড় করছে
কোনোখানে আলো নেই! 
সবাই এদিকে ওদিকে ব্যস্ত
টানাটানি, হেঁচকা হেঁচকি ভাঙা চোরা…
কে আছো সঙ্গে?
উত্তর নেই।


ঢং ঢং করে ঘণ্টা পড়ল। গান নেই, মান নেই
শিক্ষা নেই, সত্যি নেই
ভালোর জন্য আলো নেই
বসার জন্য ছায়া নেই
মায়ার কোলে আকাশ নেই
ঘন্টা বাজলেই মুখে লালা ঝরে
বিজ্ঞানী ইউরেকা বলে লাফিয়ে ওঠেন

গাছে গাছে বাসা নেই
মার মুখে ভাষা নেই
বাম চোখ বলে আমি জানি। 
ডান চোখে হাতছানি…এস। আমার আছে!
এক ভ্রু বলে অরাজকতা
অন্য ভ্রুয়ের দুঃখ বিলাস

খাবলে খুবলে খায় ওরা
লুটে পুটে নেয় চেটে
মেঘ নামে বৃষ্টি আসে
রোদ কুড়োতে ভুলেই যে যায় ওরা!

ওর নাম দিয়েছি নটরাজ। নৃত্যে নৃত্যে
ভাঙছে ধ্বংস! আগুনে আগুনে ঝলসে নিচ্ছে
নিজেকেও…
বলছে কত রক্ত চাও! আমার নাও!
ভিজিয়ে দাও ওই স্বাধীনতার বেদি
তারপরে থেমে যাও…
তারপরে থেমে যাও।

এত অন্ধকারে বড় বমি পায়! গা গুলিয়ে ওঠে।
তবু গোগ্রাসে কালো খায় ভবিষ্যত
জিজ্ঞেস করে, আমরা বাঁচবো তো?

ওর নাম ক্ষুদিরাম দিতেও পারতাম
অথবা কর্ণ
কিন্তু আমি ওকে নটরাজই রাখলাম। 
প্রলয়ের পরেও ওকেই চাই আবার প্রবলে
স্বাধীনতার বৃক্ষের নীচে বধ করবে শত্রু
বুকের রক্ত দিয়ে রচনা করবে বোধি ক্ষেত্র 

স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এসে এ পৃথিবীতে পথ 
বুনতে পারলেই ওর নাম দেব সূর্য।
—------------–-–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

মেঘ বৃষ্টি কথা

তোমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে খুব? 
জরায়ু চিরে প্রসব করছো আমায়
মুখ যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট 
গম্ভীর তোমার স্বর
তবুও আলোর হাসি হাসছ মাগো! 
বলছ, মা হতে গেলে এ টুকু ব্যথা, ব্যথা কীসের?

ঝড় বুঝি এসে গেছে বাইরে? 
খুব ডাকাডাকি করছে তাই না?
ও মা! বজ্র কে এবার খুব বকে দিও তো!
আমার সঙ্গে খেলতে এসে ও কেন আগুন হয়ে পড়ে?
কী বলছ? ওকে বলে দেবে? 
হ্যাঁ মা। ওকে বোলো অন্যায় না করলে কাউকে যেন
ও আঘাত না করে।

ওই তো দূরে গরু বাছুর ঘরে নিয়ে যাচ্ছে চাষীর বউ
ইস! দাও না ছেড়ে আমায়! 
ওদের একসঙ্গে ভিজিয়ে দিই সারা
চাষীর বউয়ের কান্না খানিক লুকিয়ে নিই মা
আমার আদর কোলে!
না না মা! ওই দেখো পিঁপড়ে দের ডিম নিয়ে যাওয়া
শেষ হয়নি এখনো…
আর একটু পরেই না হয় জন্ম দিও আমায়!

ধুলো খুব কাঁদছে সকাল থেকে।
আমায় জড়িয়ে ধরছে আরো
চুমোতে চুমোতে অস্থির করছে! 
ওকে বোঝাতেই পারছি না…
ও বলছে মাটিতে গেলেই আবার বেদনা
যন্ত্রণা…
যেমন করে দুঃখ গায় আগুন
জলের স্রোতে ভেসে
কিন্তু ও না গেলে কোথায় তবে খেলবে চাঁদ
নামবে স্বপ্ন
কেমন করে পা রাখবে ঘাস?
ওকে বলো না মা! বোঝাও না!

তোমার ব্যথা জুড়িয়ে আসছে মা?
আমার যে জন্মের সময় একেবারে কণ্ঠে এইবার!
ঝমঝমিয়ে পড়বো ভুঁয়ে
এ গাল ও ঠোঁট কপাল ছুঁয়ে 

ও মা! মা গো আমার যাওয়ার সময় হল
দাও বিদায়…

তুমি কাঁদছ মা?
এই তো নিয়ম মা গো!
পৃথিবীর ভালো কাঁধে নিয়ে
একরাশ আলো হয়ে আমার প্রাণ
ঢেলে দেব ঘাসে বাসে 
পাহাড়ের কোলে…

কান্না ধুয়ে নিয়ে চলে যাবো সমুদ্রে
অভাব গুলো নদীর বুকে রাখবো গেঁথে
লাউ পাতার সুখ হবো
কুমড়ো শাকে গান
যাই মা এবার?
ওই দেখো ঝড় কেমন বৃষ্টি বৃষ্টি বলে জোরে জোরে ডাকছে! 
মা! আমি গেলাম…

মৃত্যুর পরে আমার ভেসে যাওয়া শরীরের নাম রেখো সৃষ্টি…
—----------–––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

লোকটা বড্ড শক্ত!

লোকটা বড্ড শক্ত!

অনেকটা মরুভূমির মত

লোকটার বুকের বাম দিকে হৃৎপিণ্ড রক্ত মাপে-

সব বিন্দু ঘামের জন্য…


শিরা, ধমনী, স্বভাব… বন্য


লোকটা বড় অদ্ভুত! 


একদিন তার ঘরে চাঁদ ছিল

ছাদের উপর রোদ্দুর

হাত বাড়িয়ে পেড়ে নিত স্বপ্ন


একদিন লোকটার বন্ধু ছিল! 

একদিন লোকটার প্রেম ছিল!


লোকটা যেন কেমন! 

হৃৎপিণ্ডের ভিতর যে মন আছে তার

তা যেন সবসময় লুকিয়েই রাখবে!


দিন রাত পরিশ্রম করে লোকটা।

মেরুদণ্ড ঋজু…

চোখের সামনে ধ্বংস দেখলে লোকটা

ক্ষেপে ওঠে! 

নটরাজ হয়ে ওঠে!

আরো আরো ধ্বংস করে দেয় ধ্বংসকে!


লোকটার কী যেন এক হয়েছে আজকাল

অতীত থেকে ছেঁকে আনে বেঁচে থাকার কারণ


কিন্তু লোকটা জানে না …

বিকেল কখনো নিস্তেজ হয় না!


তার পরে যে আলো নেমে আসে

তার নাম গোধূলি।


রাত নামলেই ঝিকিমিকি তারা

জ্যোৎস্নার কথকথা…

স্বপ্নের নাচন


লোকটাকে কেউ একটু বলে দেবে গো,

গভীর রাতেও শিশু ভোর স্বপ্নে আসতে পারে?


শুধু হৃদয়-উঠোনে সেই শিশুর জন্য

একটা খেলাঘর বুনে রাখা 

লোকটার বড় দরকার!

      –

SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি যাই মা ওর কাছে?

মেঘ জড়িয়ে আছে দিন। কদম তলার নিচে
বাঁশি হাতে একলা বসে ওই যে কবি এক
কলোর গায়ে আলো দিচ্ছে এঁকে
কিন্তু দেখো! মাঝির নাওয়ে একলা অবসর
আমি যাই মা ওর কাছে?

ওর কি আর কাজের সময় আছে?
এক পৃথিবী ঐতিহাসিক শোক যে ওর
অভাব সমেত শূন্য হৃদয়
বর্ষা দিয়ে বুনবে মালা, পরাবে চন্দন
ভাসিয়ে দেবে খরা…এমন বনস্পতি ও কোথায় পাবে?

তোমার মেয়ে সঙ্গে তার যাবে?
দেদার বুকে লিখবে নিজের নাম
ইতিহাসকে রাখবে ঢেকে বৃষ্টি দিয়ে
বজ্র দিয়ে ভয় পাইয়ে…
বলবে, আমার কিন্তু আকাশ আছে
মাটির বাড়ি ঘর…

তুই পারবি মা রে? তবে যা মা যা! পৃথিবী আপন কর।
মেঘ জড়িয়ে আছে দিন। লিখছে কবি বর্ষা মঙ্গল
মাঝির এখন সময় শুধু সুর বাইবার
যা মা যা! জন্ম দে মা বৃষ্টি ধোয়া রোদ্দুর!
তোর জন্যই বিদ্যুতে আজ স্নেহ অতুল জাগে

কী যে বলো মাগো! রাঙা হই পূর্ব রাগে!
—-------–----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি নজরুলের মা

'শূণ্যে মহা আকাশে
তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে
ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।'

মাঝি ভা…ই! খাড়াও! খাড়াও মাঝি!
আমাগো লইয়া যাও!
হগ্যলে কয়, শরিল ডুবাইলে মিলাইমু
তাগো সনে…
ছাইড়া যাইও না ভাই
লইয়া যাও আমাগো… 

দুয়ারে ডাক দিয়া কয়েছিল হে'য় 
ফুল শুকাইয়া আইসতাছে
দেখছ?
আমি হে'র মুখখান বুকে লইয়ে কত্ত কান্দিলাম
নাই রে বাছা!
হদই গাঙে শাপলা
হাস্নুহানা উঠোনে
হাইসছে খেইলছে
পোলা!… চাইয়ে দেখ ধুলা মাইপছে তোগো অন্নপূর্ণা!

কী কও মাঝি ভাই?
হে কেডা?
হে আমাগো সোনার সকাল 
আলোর রাইত
স্বপন লয় মাঝি
স্বপন লয়
হেয় আমার প্রাণের প্রিয়
পাগল পোলা

"তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পাণ্ডুর হল আকাশের চাঁদ,
কেঁদে নদীজল করুণ বিষাদ
ডাকে, ‘আয় ফিরে আয়!’..."

ওই ডাকে, শুনছ নাই?
গাঙ ডাকে
স্রোত ডাকে
তোহার নাও ডাকে

আমারে পৌছাইয়া দে মাঝি!
মাঝখানে যায়ে ঢেউ দিয়া ঘর বানাইমু
আদর দিয়া পায়স
আসন পাতি, পাঙ্খা লইয়া তারে ডাকুম…
'সেই যে গেলি অন্তর খানি দিয়া কবর…'

আমাগো কেশে জটা
আঁচল লুইটা পড়ে 
দেখ মাঝি দেখ হে'রে খুঁইজা খুঁইজা
চক্ষে কেমনে রক্ত ঝরে!

অই অই… বংশী বাইজলো
শুনলা তুমি? শুইনতে পালি?
আমারে ডাইকল
হেয় আমারে আইজ ডাকৈল
'বাঁশি বাজাইয়া লুকালে তুমি কোথায় —'

ফুল গুলি সইত্যই শুকাই গেছে গা
ধূলোয় ধূলোয় হেলাফেলা

'যে ফুল ফোটালে সে ফুল শুকায়ে যায়…'

শরীল ডুবাইলে তগো সনে মিলিব আইজ
জিগাইব অরে, বাছা লোতুন ফুল ফুইটবে কবে?

হগ্যলে কয়, তোমার বাছা ছাইড়া গ্যাছে মূল
তয় আন্ধার বালুতে গড়াগড়ি খায়

মাঝি ভাই…!
খাড়াও! খাড়াও!
মোর পোলা ওই যে হে'রো শিশুটির সনে
মেঘে মেঘে কইরছে খেলা
শূইণ্যে…

ওই শিশুটি প্রলয় ল্যাখে
আলয় রচে
ফুলকে লৈয়ে নিভায় জ্বালায়

'খেলিছো, এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে
খেলিছো ..
শূণ্যে মহা আকাশে…'

ওরে যে সৃষ্টি করে
হে' ই মোর প্রাণের ধন

এখনি বৃষ্টি নাইম্বে
আমাগো ভিজায়ে হে'য় কহিবে, এত দেরি ক্যান মা?
মরন রে কভু আমি ডরাই?
দে মিলায়ে দে ভাই
দে মিশায়ে দে

হগ্যলে কয় শরীল মিলাইলে…

আমারে চিনলা না মাঝি?
আমি নজরুলের মা।
—--------------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

মেঘ বৃষ্টির রূপকথা

আর একটু পরেই ঝরে পড়বো আমি! আমার সঙ্গে মিলবে এসে ঝড়, বিদ্যুৎ! বজ্র এসে দুষ্টুমি করে খুব!
ও মা! ওকে একটু বকে দিও তো আজ। ভিজতে চেয়ে বেলা কাটায় যে মাটি, তাকে বুঝি ভয় দেখাতে হয় ওর মত? 

আমার জরায়ু চিরে বেরিয়ে আয় বাছা! জন্ম নিয়ে যা ভেসে যা গাছে গাছে শাখায় শাখায়…মাধবী বিতানে, কবিদের গানে…বর্ষা মঙ্গলে, চাষীদের ধানে…
আচ্ছা। বজ্র এলে আমি তাকে বলে দেব, বিষম না দেখলে সে যেন ঘরের বাইরে আজ না যায়। 

আমায় শক্ত করে ধরে আছে ধূলার আদর। ওর ভারী মনখারাপ, কিছুতেই যেতে চায় না আর বিশ্বে। বলে, ওখানে বড় যাতনা! বড় বেদনা! হিসেব নিকেষ জটিল… 

ওকে বল… ও না গেলে কেমন করে পা রাখবে ঘাস? কেমন করে স্বপ্ন এসে হামাগুড়ি দেবে? রাত্রি বেলা আমার চাঁদ এসে উপুড় হবে তবে কোথায়?

ও মা! মা গো! আমি এবার তবে যাই…

শোন রে মেয়ে আমার! শোন রে বাছা শোন
যেখানে দেখবি আছে যত কান্না ধুয়ে নিয়ে যাস সঙ্গে তাকে…সমুদ্রে মিলিয়ে দিবি। স্নেহ দিবি, তারপরে তার ঘরে ছাত হবি। লাউ, পালং, কুমড়ো পাতায় আগল দিবি… অন্ধকার কপালে রেখে আসবি আলো। পিঁপড়ের ডিমে তুই বাসা হবি, অরণ্যের হাসি। 

তারপরে মৃত হব…

এই তো নিয়ম মা রে! পৃথিবীর ভালো কাঁধে তোল! আলো বাঁধ চোখে… প্রাণ ঢেলে দে পাহাড়ের কোলে, সিন্ধু গঙ্গা জলে…
যা ভেসে যা দূরে…
বৃষ্টি! মা আমার! মৃত্যুর পরে তোর নাম রাখবো সৃষ্টি…
—----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি যাকে পিতা বলে ডাকি…

একটা হাত মাথায়…আমি আছি। ভয় কী?
আর পারছি না যে! মনে হচ্ছে হারিয়ে যাই
শূণ্য মনে হচ্ছে সব কিছু। 
আমার কান্নার এ কথার উপর চাপল কথা…
যদি বলি শূন্যেরও নীচে, তাও ক্ষতি কী?

এদিকে গলি ওদিকে গলি
ধাঁধায় ভর্তি অন্ধকার
চিনব কী করে পথ?

আলো কই?

আমার আর্তনাদ থেমে যায় আশ্বাসে…
সব সম্পর্ক কি রক্তের হতে হয় রে?
কিছু থেকে যায় হৃদয় যাপনে।
এক পৃথিবী আলো তোর! 
আয় চিনতে শেখাই…

সব ভুলে যুদ্ধের মধ্যরাতে আলো চিনতে চিনতে
আমি যাকে পিতা বলে ডাকি…
—-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমার একটা পেশা আছে!

পরাগ ধানী থেকে পরাগ রেণু নিয়ে এসে 

অন্য ফুলের গর্ভ মুণ্ডে পুঁততে পুঁততে বাতাস জিজ্ঞেস

করলো, বললে না তো! তুমি কী করো?


আমি নিশ্চুপ। 


পরাগায়ন শেষ করে হাত ঝাড়ল বাতাস।

বলল, চলি। আমার আবার অনেক কাজ।


শোনো! চলে যেও না! 

বাতাসের ব্যস্ততা আঁকড়ে ধরলাম আমি

আমিও করি! সূর্য থেকে আলো নিই। রোদ ছেঁকে গান। 

মাটি থেকে ধৈর্য্য নিই। আকাশ থেকে ঔদার্য।

বৃক্ষ আমায় শ্বাস পাঠায়। বৃষ্টি ধুয়ে স্নান।


বাতাস ভারী বিরক্ত। আরে কাজ টা কী করো

তাই তো বলছ না!

তারপর বলল, 

আমার ভাই অত সময় নেই। ধান দোলাতে হবে।

আমি গেলাম।


থামো। থামো। বাসা বোনা শেষ করে আমিই আসছি

তোমার কাছে। 

আমার কি আর এতটুকু ফুরসত আছে গল্প শোনার!

বলেই পাখিটা কাঁধে এসে বসল।

নাও বলো এবার…তুমি যেন কী করো? 


আমি বললাম, হাতে হাত রাখি। ভালোবাসি।

সে ভ্রু কুঞ্চিত করল, সে তো সবাই করে।


আমি আরো বললাম

চাল সিদ্ধ করে সাদা ভাত ফুল করি

পাহাড় থেকে ঝর্ণা আঁকি

আমি ভালোবাসি…


পাখিটা উড়ে গেল। বলে গেল, মেঘের সঙ্গে

লুকোচুরি বাকি, বীজ ছড়ানো তাও…

আমি আসছি…


আমি ক্ষেতে গেলাম। সবুজ ধানের উপর

শুয়ে বাতাস। 

ঠিক তার পাশ টিতে বসে কৃষক স্বপ্ন দেখছে

মস্ত গোলা

নোলক পরা বউ

আমায় দেখতেই দূর দূর দূর করে তেড়ে এল।

তোকে কাজ দেব?

যা পালা! অপয়া একটা! 


স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এল ওর বউ

বলল, ইস! নোলক টাও বুঝি হারিয়ে যাবে!


আমি নদীতে গেলাম এক ছুটে


সব কান্না ভাসিয়ে দিয়ে ছুটলাম শিখরে

শিখর থেকে আবার শিখরে


হো হো করে উঠলাম হেসে

তালি দিলাম দু হাত ভরে…


বাতাস অবাক। পাখিও থমকে

মানুষ গুলোর একে অপরের চোখে চোখ

কৌতূহলে চুমুক…


আমি ছড়িয়ে দিলাম, বিলিয়ে দিলাম।


সামনে এসে নতজানু অতীত


কৃষক আর ওর বউ বললো, 

তুমিও মানুষ! স্বীকার করি।

আমাদের হাতে হাত রাখো। আমরা ধন্য হই!

ওই দেখো আরো কত অনুতাপ

ওদের মাথায় রাখো ক্ষমা…

দাও আশীর্বাদ।


শিখর বললো, এখন হয়েছে সময়।

বলে দাও ওদের…


আমি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলাম,

শোনো! আমার আর এক পরিচয় আছে!

আমার আর এক পেশা আছে


আমি একজন বৃহন্নলা!

আমি একজন হিজরে…

—----------–--

SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

অন স্ক্রিন

নিদেন পক্ষে ক্যাফেটেরিয়ায় দু কাপ কফি
ধোঁয়া ওঠা জলন্ত দৃষ্টি বিনিময়
আঙুলে আঙুলে নাড়াচাড়া
তোমার কবিতায় এত আকর্ষণ, কবি! 
এত টান! 

স্বপ্ন ভেঙে গেল।
এখন মধ্য রাত।
মোবাইল হাতে নিলাম।
কবি শব্দ দিয়ে আমার কাঁধে হাত রাখল।
বলল, আরো কিছু বাকি।
আমি বললাম, ভালোবাসি…
কবি গুচ্ছের শব্দ গুছিয়ে পাঠাল আমায়
আমি চিৎকার করলাম অক্ষর দিয়ে
আমি ফোনের স্ক্রিনে হুমড়ি খেয়ে বললাম,
তোমার কাব্য আমায় প্রসূতি করেছে।

বললাম,
ক্যাফেটেরিয়ায় আসবো নীল রঙের শাড়িতে
হাতে থাকবে গোলাপি রুমাল
সুগন্ধি তে জুঁই।
তোমার সন্তান কে তুলে দেব তোমার হাতে।

মোবাইল অফ করে বরের পাশে শুলাম
ঘুমন্ত বরের মুখটা বড় নিষ্পাপ
কবির প্রেমিকা? ছবিতে দেখেছি অনেক বার
বড় সুন্দরী। নির্ভেজাল। 
কবি বলে, 
সে নাকি আকাশের মত ভালোবাসতে পারে।

অন করলাম ফোনের সুইচ,
ইন্টারনেট।
টিং টিং শব্দে ভেসে এল,
কী নাম রাখবে আমাদের সন্তানের?
পাশে হাসির ইমোজি।

আমার বরের ঘুম ভাঙল হঠাৎ
ঘুমাও নি এখনো?
না এইতো একটা কবিতা পড়ছিলাম
রাত অনেক হল। শুয়ে পড়।
বুকে রাখল হাত
ঠিক ওইখানে তখনই কবির দেওয়া সন্তানের
চোখ ফুটেছে…
বললে না তো, কী নাম রাখবে আমাদের সন্তানের?
অলৌকিক।

সকাল হল। 

কবির প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জড
গত রাতে কফির কাপে তুমুল চুমুকl
চার চোখে চুমু…

আমার স্নান ঘর
বরের টিফিন
ছেলের স্কুল
দৌড় আর ঘাম…

খানিক অবসরে বুকে হাত রাখলাম।
গর্ভপাত হল?
উত্তর আসে না।
নম্বর ব্লকড।
—-----------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

রাজা ও খোকার গপ্প

শিশুটির বয়স পাঁচ। এলোমেলো আঁকে 
রথ থেকে নেমে এলেন রাজা মশাই
জিজ্ঞেস করলেন, কী আঁকছ খোকা?
শিশুটির মুখে স্মিত হাসি…শূন্য আঁকছি গো!

রাজা মশাইয়ের চোখ কপালে। 
সামনে এমন বড় এক রাজা দাড়িয়ে। 
আর খোকা কিনা শূন্য আঁকছে? 

সেনা বাহিনী হাজির হল।
এত স্পর্ধা খোকার হল কী করে তদন্ত করে দেখো তো!
রাজার হল হুকুম

একজন বললেন, 
রাজা মশাই শিশুটি শূন্য বলার আগে
আর একটা কী যেন বলছিল…
রাজা মশাইয়ের সজাগ চোখ, কী বলছিল?
ওই আমাদের মসজিদে ঠাকুর নাকি…

অন্যজন বললো, না না! শিশুটি মন্দিরে আল্লাহ
খুঁজছিল ওর ছবিতে…

না রাজা মশাই ও মিথ্যে বলছে
ছেলেটি আজানে ইশ্বর বলছিল
একদম বিশ্বাস করবেন না রাজামশাই
শিশুটি আরতিতে নিরাকার বুঁনছিল
তবে রে!
লাঠি আন!
এই তলোয়ার নিয়ে আয়!

রাজামশাই ভীষণ রাগে ফেটে পড়লেন
আমার রাজ্যে এমন সাহস এক শিশু
কেমন করে পায়? 

দাঙ্গায় রক্ত ভেসে গেল চারিদিক
মৃতের স্তূপ রাজার পায়ের কাছে।
রাজা রথে উঠলেন
সেনাপতিকে নির্দেশ দিলেন, 
নিয়ে এসো ছেলেটিকে
ওর বিচার হবে
কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি

শিশুটি হাসতে হাসতে চললো রাজার রথে
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলো রাজার মুখের দিকে খানিক,
তারপর বললো, 

রাজা! তুই শূন্য আঁকতেও জানিস না?
ওই দেখ আকাশ কত্ত বড় গোল্লা!
রাজা, রাত দেখেছিস? তারা ভরা আকাশ?
মা বলতো, ওটা সবচেয়ে বড় গোল্লা এক

আমার মা মরে গিয়ে যেমন ওই গোল্লায় শূন্য আঁকতে পারে
তুইও পারবি!
তুই নিজেই শূন্য হয়ে যাবি
তুই আগে মরে যা রাজা!
তুই আগে মরে যা!
—---------––––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

চুমুক

এই তোমার শার্টের দুটো বোতাম খুলে
তোমার বুকে আমার চুম্বন রাখলাম

উঁহু কিছু বলতে পারবে না তুমি
তোমার ঠোঁটে আমার আঙুল
ঘাড়ের পাশে আমার নিঃশ্বাস

কী ভাবছো, কী হল হঠাৎ আমার?

আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে ভালোবাসতে
দেখো আকাশ কত নীল
খুব ইচ্ছে করছে ওই নীল এক ঝটকায় পেড়ে এনে
গায়ে জড়িয়ে ফেলি
তুমি মুগ্ধ বিস্ময়ে বলে ওঠো, 
আকাশনীল আমার বড় প্রিয়।

কত ফুল চারিদিকে
কত আলো!
পাখিদের মুখে মুখে গান
ঘাসে ঘাসে আনন্দ

আমার আজ খুব ইচ্ছে করছে ভালোবাসতে

তোমার সামনে বসে তোমার চুল ঘেঁটে দিয়ে
বলতে, আমার কিন্তু উস্কো খুস্কো দুষ্টুমি খুব ভালো লাগে!
খুব ইচ্ছে করছে 
লজ্জায় লাল হয়ে এক ছুটে পালিয়ে যেতে  
তুমি আমায় খুঁজবে
তেঁতুল পাতায়, আমের শাখায়, দিঘির ঘাটে…

তোমার কানের লতিতে আমার কথা রাখতে ইচ্ছে করছে আজ
আমার মুক্তি ভালোবাসায়…

এই দেখো, ভুলেই গিয়েছিলাম
এখন তোমার কবিতা লেখার সময়, 
তুমি ডাকবে, 
কী রে কী ভাবছিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অত? আমার চা টা নিয়ে আয়!

আমি জানি, আমি খুব সাধারণ। 
তোমার কাব্যে উপেক্ষিতার মত।

কিন্তু তুমি জানো না কবি!

আমি স্বপ্ন বুনে বুনে একদিন ঠিক তোমার পেয়ালার চুমুক হয়ে যেতে পারি এভাবেই…
—------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

ভালোবাসা পেলে

ভালোবাসা পেলে প্রাক্তন ক্ষত বেরিয়ে আসে।

স্নেহ তাদের গায়ে একটু স্পর্শ রাখলেই
বেনো জলের মত ভেসে চলে আনন্দ।

ভালোবাসলে পাথর গলে পাখি হয়,
মরু ভেঙে উদ্যান।
      —-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

জঙ্গল মহল

জঙ্গল মহল ভাদুতলা রেল স্টেশন।
পাশাপাশি বসে দুটি মানুষ
হাতে শালপাতা। তাতে পিঁপড়ের ডিমের মত
কী যেন রাখা…
একটু একটু মুখে তুলছে। 

কিছু পরে মানুষ দুটি উঠে দাঁড়ালো।
হাতের শূন্য শালপাতা ফেলে প্রবেশ করলো জঙ্গলে

জঙ্গল চিরে কাঁসাই চলে যাচ্ছে কোন্ অজানায়
আঁজলা ভরে জল খেলো মানুষ দুটি
তারপর একজন কুড়ছি ফুল তুলে আনলো
অন্যজন ধাধকি, বেঁওরা।

একজন মানুষ অন্যজনের কানের লতিতে
পরিয়ে দিল স্নেহ। সিঁথিতে ভালোবাসা।
ফুল সাজিয়ে দিল অরণ্যের ঘাসে ঘাসে
তারপর শরীরে মিলিয়ে নিল শরীর…

দাঁশায় পরব শুরু হয়েছে গত পরশু থেকে
দাঁড়ান ভুয়াং নৃত্যে সামিল পুরো পরগনা
দেবীর বুকের উপর শুয়ে রাজা।
দেবী নিশ্চুপ 
রাজা জিজ্ঞেস করলো, কী অভিপ্রায়? 
আমাকে হত্যা তো?
দেবী তখনো নিশ্চুপ।

রাজা আরো জোরে দেবীকে আলিঙ্গন করলো
রাজা প্রবল হাসলো! 
ঝড় উঠলো!
সমস্ত গাছেরা দুলে উঠলো!
শাল মহুল ডেকে উঠলো, রাজা! তুমি পালাও!
রাজা তার বুকে দেবীর সঙ্গে নিবিড় হয়ে রইল।

দেবীর ওষ্ঠ থেকে ঝরে পড়লো রক্ত
আমি নিরূপায় রাজা।
বুকের মধ্যে কর্তব্য, 
মাথার ভিতরে গিজগিজ করছে
সাদা সাদা ফুলের মত ভাত…
ওরা বলেছে…
তোমাকে হত্যা করলে আমার সব অসুখ মিটে যাবে
রাজা! 
আমি নিরূপায়!

ভালোবেসে মৃত্যু এ কি কম সৌভাগ্যের প্রিয়া?
রাজার হাসি নিভে আসছে।

আজ তোমার জন্মদিন রাজা! 
আমি পায়েস এনেছিলাম। 
পিঁপড়ের ডিমে মাদক ছিল,
পায়েসে নয়।
কণ্ঠে ভীষণ কম্পন দেবীর।

তাই বুঝি পায়েস দাও নি এতক্ষণ? 
রাজার চোখে ঘুম নেমে আসছে
কই দেবী! পায়েস দাও। শীঘ্র দাও! 
রাজার চোখ পাহাড় হয়ে যাচ্ছে। শরীর আচ্ছন্ন।
ঠোঁটের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো জন্মদিন

একটা কাঠবেড়ালি দুটো মাকড়শা একটু আগেই
রাজাকে খুঁজে গেল
'অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে?'

দেবীর শুষ্ক চোখ
গাছেরা দুয়ো দিচ্ছে তাকে
বলছে, দেবী! তোমাকে ধিক্কার!
ভালোবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে অভাব

রাজার অচেতন দেহ পিঠে বেঁধে দেবী ছুটে গেল
স্টেশনে…
জঙ্গলমহল এক্সপ্রেস এসে দাঁড়ালো দুই নম্বর
প্ল্যাটফর্মে…

রাজার ঘুমন্ত চিবুকে বিস্ময়-
এবার অন্য কেন, দেবী?

আলগা খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে দেবী বলে,
ভালোবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে অভাব।
আমি শিখে গেছি।

ট্রেন ছুটছে…
বাতাস ভাসছে
কাঁসাই ছোট হয়ে আসছে
আওয়াজ ক্রমশ কমে আসছে…
'অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে!'
—--------------–-----
SUJAN MITHI (SUJATA MIHRA)

স্বর্গ

এই ঘর বড় কঠিন। দম বন্ধ হয়ে আসে।
দুই নর নারী হাতে রাখলো হাত। বললো,
চলো আদিতে ফিরে যাই
যেখানে কোলাহল নেই। কংক্রিট নেই।
নদী যেখানে সুর দেবে। ঝর্ণা দেবে ফুল
পাহাড়ে পাহাড়ে লুটিয়ে পড়বে মেঘ
আদুল গায়ে রোদ মাখবো
হলুদ সর্ষে ফুলে প্রজাপতি হয়ে উড়বো
চলো ফিরে সে অরণ্যে…

একদিন নরের হাতে নারী রাখলো হাত।
এ অরণ্য বড় বেশি সরল। 
মন লাগে না আর…

নর বিস্মিত। কেন আমি যে আছি!
এত বৃক্ষ! পাখি! এই কি তপোবন নয় প্রিয়ে?
নারী উদাস।

নর ঘাম ঝরিয়ে বাঁধলে ঘর।
মাটি পুড়িয়ে খাসা ইঁটের ঘর।
ঝড় এলে ভাঙবে না। পোক্ত দরজা।
ইচ্ছে হলেই ঠেলে ঢুকতে পারবে না বাতাস…

নর বললো, এত বৃক্ষের কী প্রয়োজন?
ছেদ করি তবে। আসবাব হবে।

নদীতে বড় স্পর্ধা! বাঁধ দিতে হবে তাড়াতাড়ি

নরের হাতে হাত রাখলো নারী। 
অনেকদিন নদীর কোনো গান শুনিনি
এই ঘর বড় কঠিন। দম বন্ধ হয়ে আসে
চলো গান শুনে আসি…

নদী! তোমার গান কোথায়?
তুমি এত কাদঁছো কেন?

নরের চোখে ব্যস্ততা
আঃ! গান দিয়ে কি সভ্যতা বোনা যায়?

কাঁদছে নারী। পৃথিবীর আদিম নারী।

সে তাদের অরণ্য ও আনন্দ-তপোবনের নাম রেখেছিল, স্বর্গ।
—------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

বাহামণি বাস্কে

মেয়েটার নাম বাহামণি বাস্কে।
বসন্তের বাহা-মেলায় যখন ওর বাপ ঠাকুর্দায় 
নাচকোঁদ করছিল ঠিক তখন পাড়ার বুড়ি দাই এসে
খবর দিয়েছিল, অ বুধনা! শিগগির যা! দেখ গে
তোর চাঁদ পানা বেটি হয়েছে রে!

সে তার বাপের কী খুশি যে হল! একেবারে এক ছুটে 
ঘরে গিয়ে মেয়ে কোলে তুলে বললে, 
আমার বাহামণি আইছিস? 
ঠাকুরদা বললে, মারাং বুরুর থানে পুজো রেখে আয়
বাপ…পত্তম মেয়ে লক্ষ্মী হয়। 

এই বাহা যখন স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হল
অন্য সব অভিভাবকেরা হামলে পড়ল স্কুলের গেটে
কারা আবার শ্লোগান তুললো ওর মধ্যেই…
বিচার চাই! বিচার চাই! 

বাহার বাপের বুক ঢিপঢিপ
মেয়ের কানের কাছে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলে,
হ্যাঁ রে মা! কিছু করিস নাই তো? 
বাহামণি হেসে বললো, করেছি তো বাপ!
বড়লোকদের ছিটকাই দিছি!

অনেক অনেক বার খাতা মিলিয়ে মিলিয়ে বাহামণির
পাওয়া নম্বর একটাও কমলো না। 
বরং বাংলায় সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্য বরাদ্দ এক নম্বরটাও জুটে গেল তার। 
যারা বিচার চাইতে এসেছিল, পাংশু মুখ করে বললো
এত সুন্দর হাতের লেখা! কী করে হয়? 

তরতর করে এগোয় মেয়ে। 
বাহা উৎসবে বসন্ত নামে। মা বাপের সঙ্গে গিয়ে
নাচন কোদন করে। পান্তা খায়। 
মারাং বুরুর সামনে মাথা নোয়ায়।
খড় কাটে। গরুকে জাবনা দেয়।
বিকেলবেলা গা ধোয়, পাউডার লাগায়
বুধি, কমলি দের সঙ্গে গল্প করে…

রাত নামলে ডুবে যায় বইয়ে।
এক প্রবল আত্মবিশ্বাসে।

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ছাড়িয়ে মেয়ে সাড়া ফেলে দিল হঠাৎ একদিন
হই হই কান্ড রই রই ব্যাপার…

বাহামণি বাস্কে মেডিকেলে পেয়েছে চান্স!

ওই যে যারা বিচার চাইতে এসেছিল
তারা আড়ালে হাসলো, বললো…
বোঝো না! সংরক্ষণ! নাহ! এ দেশের ভাগ্যে আর
ভালো কিস্যু হবে না!
ও যদি ডাক্তার হয়, মরবে! সব মরবে।

বাহামণি ডাক্তার হল। কিন্তু তার কাছে চিকিৎসা
নিতে এলো না কেউ…

বাহামণি গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে সাঁওতাল পরগনার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো।

বাদল মুর্মু, টগরী টুডু, লম্বু হেমব্রম, লক্ষী, রতন, 
সোনালী সবাই একে একে এলো তার কাছে
বাহা…পেটে বড় বেদনা!
বাহা…বুকের বাঁ দিকে কী যে হয়! এতদিন মারাং বুরুর চন্নামেত্ত খেলুম, তাও…
বাহা…ভাগ্যিস তুই ছিলিস! 
বাহা…তোর অনেক ভালো হোক বেটি!

বাহামণি আরো ডিগ্রি অর্জন করলো। বিখ্যাত 
কার্ডিওলোজিস্ট বাহামণি বাস্কে পুরস্কৃত হল
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে…

ওই যে যারা বিচার চাইতে এসেছিল, তাদের
বুকের রোগ নিয়ে এ ডাক্তার ও ডাক্তার করতে
করতে শেষে শুনলো, বাহামণি বাস্কেই শেষ উপায়।

বাড়ির লোককে বললো, আর কী! 
সব ডাক্তারই ওর কাছে রেফার করছে যখন…

ভদ্র পাড়া ধীরে ধীরে ভিড় জমালো 
সাঁওতাল পরগনায়।

বসন্তের বাহা উৎসব তখন খুব।
বাহামণি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাচছে, গাইছে।

ওর বাপ বললে, যা বেটি যা! ওদের বুক কেটে
ধুকপুক টা বের করে দিয়ে আয় আরো…
ওরা বেঁচে থাকলে তবে না আমার ঘরে বাহামণি জন্মাইবে!

বাহামণি টেবিলে শুয়ে থাকা ভদ্রলোকগুলোর
বুক কাটে, হৃদয় হাতে নিয়ে দেখে…
ঠিক কোনখানে লেখা থাকে, 

বাহামণি বাস্কে প্রথম হতে পারে না!
বাহামণি বাস্কে ডাক্তার হতে পারে না!
বাহামণি বাস্কে আগুন হতে পারে না!
বিচার চাই! বিচার চাই!
—----------–--
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

ওরে আমার নরম সবুজ প্রাণ

এ লেখায় মনের ভিতরের খানিক কষ্ট উগরে দিলাম

ওরে আমার নরম সবুজ প্রাণ
ওরে আমার অবুঝ আবেগ গান

তোদের বুকে পাঁজরের নীচে কেবল কি প্রেম লুকিয়েই থাকে? ভালোবাসিস তাকে? সে তোকে বাসে না বুঝি? পেয়েছিস উত্তর সোজাসুজি? তাইতে তোর মৃত্যু চাই? হ্যাঁ রে! তোর কি অন্য আপন নাই?

তুই যখন তোর মায়ের গর্ভে, জননী হওয়ার সে পর্বে তোর মায়ের সে যন্ত্রণার হাসি। চুমো দিয়ে তোকে বলেছিল ভালোবাসি…কই মরার সময় তাকে রেখেছিলি মনে? বাবা? ভুলে গেছিস? আর এক আপন জনে? বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন আর…
দুয়ো! বীর তুই! পরে মৃত্যুহার?

শোন রে শোন! যার জন্য মরণ নিলি, কষ্ট নিলি
তাকেই বরং আরো খানিক বাঁচতে দিয়ে গেলি।

ভুলে যাবে…ভুলে যাবে তোকে মাটি গাছ পাখি
কারো জন্য আটকে থাকে কিছু? পড়ে থাকে বাকি?

মনের দুঃখে হতাশ তুই, ইচ্ছে করছে মৃত্যু ছুঁই?
জীবন বৃথা ছাড়া তাকে…ওরে উন্মাদ! মস্ত বিশ্ব
তোর জন্যও থাকে। ঠিক সময়ে তাকেই পাবি
ভালবাসায় ভেসে যাবি…তোর জন্যও সে আছে!
তোকে বাঁচিয়ে যে নিজে বাঁচে।

যার জন্য মরলি তুই! নিজের দায়ে হারালি ভুঁই।

ইচ্ছে করে ফিরিয়ে আনি তোকে। বসিয়ে দিই একলা মায়ের শোকে।

যাক গে যাক। ভালো আছিস করি আশা। নিশ্চই পেয়েও গেছিস ভালোবাসা… নইলে কি আর যেতিস মরে? বিনা স্বার্থে কে আর এমন করে? 

আর যদি নিতান্তই অসুখী হোস। আমার লেখার পাশে চুপটি করে বোস। 

এখনো যারা ভাবছে তোকে দেখে, ঝুলতে চায় প্রেম খেলাতে ঠেকে… তাদের জন্য উঠিস ঝড়! বলিস, মরতে চাইলে নিজের জন্য মর! এক পৃথিবী মাটি আছে, স্বান্তনাটাও মায়ের কাছে। অপেক্ষাতে বাবা থাকে, মনের মধ্যে স্বপ্ন আঁকে। 

মরলি? তবে ফুরিয়ে গেলি! ভালোবাসা আর কি পেলি? 

দুয়ো তোকে! তুচ্ছ শোকে মৃত্যু চাস? 
দাঁড়া পাশে…যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হা হুতাশ!
ঘুমিয়ে শিশু খিদের চোটে, মুহুর্মুহু কান্না জোটে। মৃত্যু তাদের পায় না কই? অভাব কাঁধে জীবন চষে…মাভৈ! 

যে সময়ে খুব হারবি! তাকেই ভীষণ ধার ধারবি! মনে হবে আর তো নয় মোটে! ঠিক সে সময়ে ভাববি এদের। দেখিস তোর বুকেতে কেমন করে বেঁচে থাকা ফোটে।

বাঁচবি ওরে প্রাণ! বিলিয়ে স্নেহ দিবি ! দিন ফুরালে কত শত ভালোবাসা নিবি? 

কারোর জন্য মরতে হলে…জেনে রাখিস ওরে
ভুলে যাবে বিশ্ব তোকে। নতুন সূর্য উঠবে ঠিকই ভোরে।

তোকে ছাড়াই নতুন সূর্য উঠবে ঠিকই ভোরে।
তুই যে ছিলি। ভুলবে লোকে। যাবিই যাবি মরে।
—------------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

একমাত্র ভালোবেসেই…

কাকু বাবার দূর সম্পর্কের ভাই।
আমি তাকে স্বপ্ন কাকু বলেই ডাকতাম।
আমাদের বাড়িতে এলে প্রতিবার মাসখানেক থেকেই যেত স্বপ্নকাকু।
বাবা মাকে বলতো, আহা! তিনকুলে কেউ নেই এই আমি ছাড়া…কোথায় আর যাবে?

স্বপ্ন কাকু ভালো ছবি আঁকতে পারত। ক্যানভাসে
আর মনে।
বাড়িতে ঢুকেই ছবি আঁকার জিনিসপত্র সোফার উপর রেখে আমার কাঁধে হাত রাখত,
কী খুকি! আছো কেমন?

বারো বছরের কিশোরীকে খুকি বলা নিয়ে
গাল ফুলিয়েছি বহুবার
তবু কাকু আমায় ওই নামেই ডাকত।
সন্ধে হলে দেশ বিদেশের গল্প শোনাতো। 
চুলে বিলি কেটে দিত।
মা ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ দিয়ে যেতে যেতে বলত
ঠাকুরপো! তুমি পারোও বটে! 
আমার এমন চঞ্চল মেয়ে তোমার গল্পে একেবারে চুপ! 

স্বপ্ন কাকু আমার ব্যাগের মধ্যে একটা ব্যাং এঁকে
ঢুকিয়ে রেখেছিল।
স্কুলে গিয়ে আমি ব্যাগ খুলতেই দেখি তাতে লেখা
খুকিকে…স্বপ্ন কাকু!

আমি বাড়ি ফিরে কাকুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
কাকুর বুকে আমার বুক
দুই হাতের মধ্যে আমার মুখ
তিরতিরে ঠোঁট…
তখন আমি বারো পেরিয়ে তের
তের পেরিয়ে চোদ্দ

ব্যাঙের ছবিটার নীচে লিখে রাখলাম
স্বপ্ন কাকু তোমায় ভালোবাসি।

সেবার যখন কাকু এলো আমাদের বাড়ি
আমি খুব ধরে পড়লাম তাকে,
আমাকে তোমায় আঁকতেই হবে কাকু!

কাকু অনেক ভেবে বললো, আঁকতে পারি
শর্ত আছে। সম্পূর্ণ হওয়ার আগে অবধি দেখতে
পারবে না।
তাই সই।

আমি শাড়ি পরেছি। চোখে কাজল দিয়েছি। 
চুলে খোঁপা। রাতের রজনীগন্ধা তাতে।
গোটা ঘর ম ম করছে গন্ধে।
স্বপ্ন কাকুর মন পড়ার চেষ্টা করছি আমি।

মুখ আঁকার শেষে কাকু বললো, 
এবার গলা, গলা বেয়ে
বুক…

আমি বুক থেকে শাড়িটা খানিক নামিয়ে দিলাম নিচে
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ভাঁজ। 
আলোড়ন কি কাকুর ভ্রুতে?

শান্ত কণ্ঠে কানে ভেসে এল সুর
যা নিভৃতে সুন্দর, তাকে রাখো অন্তঃপুরে।

দিন কয়েক পরে চুপিচুপি আমি স্বপ্নকাকুর ঘরে ঢুকি। 
বাক্স প্যাটরা হাতরাই। যদি আমার কথা কিছু 
লিখে রাখে তার নিত্য লেখা ডায়েরিতে!

এক গোছা চিঠি আলগোছে পড়ে যায় আমার হাতের
উপর…

প্রিয়তম,
     তোমার দেওয়া নামই রাখলাম শেষে। অনিরুদ্ধ। দেখতে হুবহু তুমি। 

প্রিয়তম,
      এবার বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলে। তোমার ছেলেটি যে তোমার মতই শিল্পী হয়ে উঠছে, তা দেখে গেলে না!

প্রিয়তম,
       তোমার সবচেয়ে প্রিয় আমার বুকের অতন্দ্র প্রহরী স্তন দুটোয় মারাত্মক অসুখ বাসা বেঁধেছে। ডাক্তার বলেছে বাদ না দিলে…

কই তুমি তো আর এলে না? স্তন বাদ গেছে বলে কি? শরীর ছাড়া আমার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?

একবার এস! ছেলেটাকে নিয়ে আমার স্বামী আমায় ফেলে চলে গেছে। আমার চরিত্রহীনতার প্রমাণ তোমার ছেলেই তাকে দিয়েছে তোমার দেওয়া চিঠি দেখিয়ে। অসুস্থ স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়ার এই তো মোক্ষম সুযোগ! 

এলে না আর? দিলে না জবাব? আমার চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে। চিঠিখানা আর পোস্ট করার ক্ষমতা নেই। যদি আসো, আমার কঙ্কালের পাশ থেকে নিয়ে যেও। 

স্বপ্ন কাকু কখন যে এসে ঘরে ঢুকেছে, আমার হাত থেকে ভালোবাসা কেড়েছে
আমার কিচ্ছু মনে নেই।

চলে গেছে সেই শেষ বার…

ক্যানভাসের উপর চাপা দেওয়া সাদা কাপড় সরিয়েছি
এক টানে…

চুল ওঠা স্তন হীন অসুস্থ এক নারী!
নীচে লেখা, 
ভালোবাসি। কিন্তু আমিও ফুরিয়ে এসেছি যে রমা!

আমার খোঁপার রজনীগন্ধা, ঠোঁটে গোলাপি
লিপস্টিক, শাড়ির পরিপাটি ভাঁজ কোথাও নেই
এক ফোঁটা…

খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বাবা। 
মাকে বলেছিল, আহা আমরা ছাড়া কেউ তো নেই
ছেলেটার!

অনেক কষ্টে ধরে বেঁধে এক বছর পরে পুলিশ
একজন পাগলকে নিয়ে এল আমাদের বাড়ি

মুখ গাল ঠোঁট দাড়ি গোঁফে ভর্তি। মাথার চুল 
ঘাড় ছাড়িয়েছে। সারা গায়ে আঁষটে গন্ধ
স্বপ্ন কাকুর কোনো চিহ্ন নেই তার মধ্যে

বাবা নাক সিটকে বললো, না না এ আমার ভাই নয়
মা বললো, ঠাকুরপো শিল্পী! পাগল তো নয়!

পাগল টা বিড়বিড় করছে, যা কিছু নিভৃতের
তাকে রাখো অন্তঃপুরে…
রমা! আমিও যে ফুরিয়ে গেছি!

আমি চিৎকার করে উঠলাম! অফিসার!
এ আমার স্বপ্ন কাকু নয়!
নিয়ে যান ওকে! 

ওকে নিয়ে যান…

কান্না শেষ করে প্রশ্নটা গুছিয়ে রেখেছি মনের ভিতর…

পরের জন্মে রমা হয়ে স্বপ্নকাকুর কাছে জেনে নেব…
প্রিয়তম, আগে থেকেই তুমি কী করে বুঝেছিলে গো 
একমাত্র ভালোবেসেই ফুরিয়ে যাওয়া যায়?
—--------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

স্বর্গ থেকে নীল পাখি নেমে এসেছে

স্বর্গ থেকে নীল পাখি নেমে এসেছে।
গমগমে ঘর
কর্ণ, কুন্তী সংবাদ বিতরণ করছেন মঞ্চের
আলো আঁধারী ঘুমন্ত কুরুক্ষেত্রে 
সঞ্চালনায় শান্ত উদার স্বর প্রক্ষেপন…

শত সহস্র দর্শক নিশ্চুপ মন্ত্রমুগ্ধ।

সমস্ত আয়োজনের শেষে নিভু নিভু রাত 
তানপুরায় বেঁধে নিল বিষাদ…
শূন্য এ প্রান্তরে ফিরে এস সুখ

পার্থ দা! 
বলো চন্দ্র…
তফাৎ কেবল এই, 
হ্যাঁ চন্দ্র, এ পারের দর্শক জ্বলে ওঠে আনন্দে
অন্ধকার চিরে আলো বুনতে জানে
দেবতার গ্রাস শুনে চিৎকার করে বলে, 
'শোন নি কি জননীর অন্তরের কথা?'
সে তো নয় দেবতা মোটে…
চন্দ্র!
এখনো অনেক বাকি পার্থ দা!
আমি ঘোষণা শুরু করি এইবার…

চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতের মুঠোয় মাইক্রোফোন, চোখে জিজ্ঞাসা
শুরুটা করবো কোথায়?
গৌরী দি! এই যে এত প্রেম তোমার
ডেকে নিলে দাদাকে তোমার কাছে
বলো তো, এই দিয়ে করি শুরু?

আলোচনার শেষে আবার নামলো রাত
মঞ্চ ঝলমল করে উঠলো।
থোকায় থোকায় জোনাই আলোকসজ্জায়
মাইক্রোফোনের সামনে শুভ্র দুই ঠোঁট নড়ে উঠলো। 
আকাশবাণী আকাশ…
আজকের উপস্থাপনা…

করতালিতে চিরে যাচ্ছে সমগ্র আকাশের রাত্রি
ভীষণ আগ্রহে তারারা আবেগ ছুঁড়ে দিচ্ছে
আরো চাই! আরো চাই!
আমরা সৃষ্টি চাই!

সকাল হতেই টুক করে খসে পড়লো উল্কা-ফুল
তানপুরার সুর বদলে গেল একাদশী কন্যের হাতে
তার আবৃত্তি মুগ্ধ করে তুললো অপর প্রতিযোগীকে
বাহ! দারুণ কণ্ঠ তোমার! নাম কী? 
মেয়েটি বড় সপ্রতিভ… গৌরী। আর তোমার?
পার্থ। 
হাসছে চন্দ্র মৌলি। 
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভ্যেস করছে
আকাশবাণী পৃথিবী! আপনারা শুনছেন…

শূন্যতা কোনোদিন শূন্য থাকে না।
আবার মাটি জন্মায়।
—-----------––--–------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

ভালোবাসা

আমার বড় ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।
যে মানুষটা আমার ঘর কেড়ে নিয়ে
প্রাচীন মরুভূমির মত শুষ্ক হেসেছে
তাকেও আমার ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়
শ্যাওলা ছেড়ে দিয়ে আসতে ইচ্ছে হয়
তার শিরা উপশিরায়
তা থেকে তার হৃদয়ে সৃষ্টি হবে বাস্তুতন্ত্র।

যে মানুষটা আমার আলো নিভিয়ে
মুঠো মুঠো অন্ধকার ঢেলে দিয়েছে মাথায়
আমার খুব ইচ্ছে হয় তার খুব ভালো চাইতে
তাকে খুব ভালোবাসতে
একটা সূর্য তার উঠোনে বসিয়ে তাতে সার জল
দিয়ে ফল ফুলে ভরিয়ে দিতে

যে মানুষটা আমার সুর রক্তাক্ত করেছে
ভাষা রূদ্ধ করেছে
ভয়ংকর আনন্দে চিৎকার করেছে
তবে! এইবার কী করে আনন্দ গাইবি তুই?
আমার খুব ইচ্ছে করে, 
তার ঠোঁটের সেই হাসিতে আমার ভালোবাসা রেখে যাই
যদি কোনোদিন অ-সুরে তার কোনো ক্ষতি হয়!
ইচ্ছে করে, আমার অস্থি দিয়ে তার জন্য বজ্র বানিয়ে রাখি

যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসতে চায়
যে মানুষটা আমাকে আঁকড়ে রাখতে চায়
জড়িয়ে রাখতে চায়
আমার জন্য ঘর আলো গান বেঁধে দিতে চায়
আমার খুব ইচ্ছে করে, তাকে জোর করে 
ছিটকে দিই আমার কক্ষ থেকে
আমার খুব ইচ্ছে করে চিৎকার করে তাকে বলি
ভালোবাসা এত সহজ নাকি, 
যে এত সহজে আমাতে বিলিয়ে দিতে চাইছো?
—-------------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

যাপন

একদিন এসেছি মাটির বুকে শান্ত ছায়ায়
কোমল মায়ায়, খেলাঘরে।
এখানে পাখি ডাকে। গান গায়। আলো হয়ে
রোদ পড়ে।

বাতাসে বাতাসে সৌরভ ছোটে। ফুল ফোটে।
শিশির লুটায় ঘাসে।
পেখম মেলে প্রেমিক ময়ূর নৃত্যে ভোলায় মন।
আনন্দ ভালোবাসে।

বৃষ্টি নামে খুব। গা ধুয়ে গান লেখে।
পৃথিবীর উঠোনে সুখ
এখানেই স্বর্গ আঁকার ক্যানভাস। শাখায় শাখায়
স্নেহ আর শ্রদ্ধার মুখ। 

হৃদয় ডাকে হৃদয়ের তীরে। উচ্ছাস ঢেউ তার…
নাম লেখো, লেখো নাম তবে
কিছু নয় অক্ষয়। ধুয়ে যাবে প্রাণ
'অমর কে কোথা, কবে?'
তবু যাবে থেকে। ক্ষেতে সুখ ছুঁয়ে
অঘ্রাণ প্রতি মাসে
এ পৃথিবী ভুলবে তোমায়। তুমি থেকে যাবে
নবান্নের নিত্য সহবাসে।

যা করেছি ধুলো খেলা, যা রেখেছি আমার
আজ আর দাবি নেই কোনো
মেঘে মেঘে মিলেছে শরীর। শিশিরে কান্না
বাতাসে হিমেল মনও

যা কিছু বলেছি কথা, ফেলেছি ব্যথা
বৃথা ভুল চুক
মাটির বুকে মিলিয়ে নিও ক্ষমা
দুঃখ কষ্ট অহেতুক 

কাদা মেখে গড়েছি পুতুল। করেছি আলিঙ্গন
ভেবেছি জগৎ এই বেশ
থাকেনি শরীর। থাকেনি ক্লান্তি
ধোঁয়াতেই মুক্তি। এইটুকু অবশেষ।

তবু যদি ভেবে দেখো মণিকোঠায় আমি
একটুও আছি পাশে
মিশিয়ে নিও ভালোবাসায়। নতুন দিনের
সবুজ দূর্বা ঘাসে।

ডেকো না আমায় সাড়ম্বরে। 
রেখো না ফুল-ঝাড়ে
মুঠো ভর্তি আলো বুনো, একলা যাপন
অন্ধকারে
—------------–-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

তিন মাস

কী মজা! এখনো তিন মাস আমি ফুল দেখব
আলো দেখব। অন্ধকারের গন্ধ নেব। 
আর তোমায় ভালোবাসবো। 

ইস কেন কাঁদছো এভাবে? 

দেখো আকাশের দিকে তাকাও।
মেঘকে জড়িয়ে রেখেছে আকাশ তার বুকে
অমনি করে আমায় ধরো তো দেখি একটু
আহ বড় শান্তি প্রিয় 

এই দেখো, দেখেছো! মেঘ ঠিক বৃষ্টি হয়ে ঝরতে
শুরু করলো।
আকাশ যে অত ভালোবাসলো
ফল কী হল? 
মেঘ কিন্তু বৃষ্টি হয়ে মাটিতে মিশে গেল।
আবার কবে সে বাষ্প হবে
আবার কবে ধুলো পাবে
পরের জন্মে আকাশে ফিরবে আবার সে!
আকাশ যদি জন্ম জন্ম অপেক্ষা করতে পারে তার
মেঘের জন্য, তুমি পারবে না?

তিন মাস! এখনো তিন মাস আমি বেঁচে থাকবো।
দুরারোগ্য কর্কট আমাকে তিন মাস কিচ্ছু করতে
পারবে না।
চলো পথে পথে পাথর সরিয়ে আদর ছড়াবো। স্নেহ
ভরাবো আমরা দুজন।
পাতায় পাতায় লিখে আসবো মায়া।

আলো ফলেছে যে গাছে তার নিচে বসে
গা মেলবো। প্রজাপতি হবে তুমি, আমি হলুদ ফুল।

আবার কাঁদছো? 
ও মা…দেখে যাও! তোমার ছেলে একটুও কথা
শুনছে না! 
মা! আজ কাঁচকলার কোপ্তা করেছ না? 
সত্যি! কেউ মৃত্যু আগে থেকে জেনে গেলে
বেশ কিন্তু হয়। 
কত যত্ন…ভালোবাসা

কিন্তু তোমরা এটা মনে রাখতে চাও না
আমি একটু এগিয়ে যাচ্ছি না হয়…
আমার পিছু পিছু আসবে তোমরাও
দশ, বিশ, পঞ্চাশ বছর পরেও
তোমরাও কিন্তু মাটিতে রাখবে শ্বাস।

মৃত্যুর মত অমর আর কী আছে?

আমার চলে যাওয়ার পরে আলো গাছ
বসিও খুব, প্রিয়।
অন্ধকারের গন্ধ এঁকো।
প্রজাপতিকে ফুল দিও
শূন্য ঘরে সুন্দর স্বপ্ন

এই শোনো না! এখন কথা, কান্নাকাটি বাদ।

একটা ভীষণ আবদার আছে তোমার কাছে।

তিন মাসের মধ্যে আমায় তিনশো লক্ষ
চুমু দেবে গো? 
–––---------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

দ্রোহ

'বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির 
ওই শিখর হিমাদ্রির!'

'গুরুজী আমি আপনাকে খুন করব!'

চোখে একরাশ বিস্ময়
বুকে গনগনে আগুন
হাতের মুষ্ঠি কঠিন

গুরুদেব বুকে টানলেন তাঁকে
'হ্যাঁ কাজী তুমিই আমাকে খুন করবে!'

অসির চেয়ে মসির জোর যে বেশি!

তালতলা লেনের ঘরে সারারাত্রি ধরে
শেকল ছেঁড়া বর্ণমালা পেন্সিলের ছোঁয়ায় 
কাগজের উপর যে বজ্র এঁকেছিল 
শত বর্ষ ধরে সে ভৃগু হয়ে ভগবানের
বুকে পদচিহ্ন রেখে যায় বারবার…
'আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন!'

বাইরে ঝমঝম করে পড়ছে বৃষ্টি
হিম শীতল রাত
কাজীর হাতে অস্ত্র
সৃষ্টির ভয়ঙ্কর উল্লাস
লৌহ কপাট ভেঙে ফেলার সাহস
ষাটের বুকে আঠারোর প্লাবন জাগানিয়া ঢেউ
'মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!'

দুলে উঠেছে সমুদ্র
ফুলে উঠেছে জোয়ার
পাহাড় টলেছে
বাতাস দিক হারিয়েছে
ছুটে এসেছে নাবিক 
বিদ্রোহীর দ্বারে
হে সাম্যবাদের কবি!
আমিও আগুন হতে চাই!
একই বৃন্তে সহস্র মানবতা হয়ে ফুটে উঠতে চাই!

মেহের আলি সারারাত্রি অট্টহাসিতে প্রাসাদ কাঁপায়।
চিৎকার করে বলে 
'আমি উন্মাদ! আমি উন্মাদ!
আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!'

বৈধ্যবের সব রঙ পুড়ে যাওয়া মেয়েটা
বেনারসী খুঁজে বের করে আনে
আত্মহননের চিতা থেকে...
চন্ডালের ঘর্মাক্ত কাঁধে মুখ ঘষে দেয়

তালতলার ঘরে বিনিদ্র রাত ঘোষণা করে

'আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!'

চুরুলিয়ার আকাশে ধূমকেতুর আলো
জ্বলজ্বল করছে!
মেতে উঠেছে মেঘ
ছুটছে ধুলো… বইছে তুফান
ওই…ওই কবি ডাকছেন    
'…আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।'

প্রদীপ জ্বলে উঠলো। 
জাহেদা বিবির সন্তান জন্ম নিল বলে শঙ্খধ্বনি করলো হিঁদু পাড়ার মাতা অন্নদা।

হামাগুড়ি দিচ্ছে ওই বালক মুয়াজ্জিন
এরপর উঠবে! দাঁড়াবে! ছিন্ন ভিন্ন করবে
অন্ধকারের ত্রাস।
কলম দিয়ে চিৎকার করবে
'আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃংখল!
আমি মানি নাকো কোনো আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম,
ভাসমান মাইন!'

ভীষণ প্রেমে সে আগুন জড়িয়ে ধরবে প্রেয়সীর উঠোন
প্রথম সন্তানের নাম রাখবে
কৃষ্ণ মহম্মদ।


--------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

লোকটা

আমি ত দুগ্গার শিরেও সিন্দুর চড়হাই
তবে উ কি আমার বহু রে পদ্দ?
উ আমহার মা লাগে, মা…
তুর ভালে সিন্দুর দিয়েছি পদ্দ
তুও আমহার মা রে বেটি

অমন দুগ্গা পানহা চোখ কইরে হাতে অস্তর লিয়ে
হ কেনে অমন আগ!
তুর বাপকে বুঝাই দে, মাইয়া মানে সে ফ্যালনা লয়
মাইয়া মানে সে বুঝা লয়! 
মাইয়া মানে মা রে পদ্দ!
মাইয়া মানে দুগ্গা!

ই টুকুন বইলে লোকটা আমহার দিকে তাকাইল
আমহি বল্লম, ই বিহা তবে ছালেখেলা বটেক?

লোকটা বুক চাপড়ে বল্যে ওঠে, হ হ খেলা 
তবে ছেলে খেলা লয় পদ্দ
তুকে মানহুশ করার খেলা।

মা টো আমহায় জনম দিয়েছে। 
তার পরেই মরহে গেছে।

অ লোক টা! তোমহার গায়ের ই গন্ধটকেই
মা মা গন্ধ বলহে, লয়?

পাড়হার লোকে বলে, ঘরকে এনে বাপ
মদের বতল গুঞ্জে দিয়েছিল আমহার মুখে
পদ্দ ডেকেছিল কমলি পিসি
বলেছিল, এ ভুবনা তুহর বেটি গুবরে পদ্দ রে!
ইত রূপ…
মাস্টার বুলেছিল, ভুবনা! মাইয়াটারে অন্তত
মাধ্যমিক দিতে দে…বিহা দিস লা রে!

রাতের আন্ধারে বাপ ই লোকটার কাছকে 
আমহাকে বেইচ্যে দিল
লোকটা বুড়হা
আমহার কপালে সিঁদুর দিয়া
তার ঘরে লিয়ে আসে সক্কলকে বুলল
সুন তোরা! ই আমহার বহু বটে
কেউ এর অসম্মান করবি লি…

লে পদ্দ তুকে ভর্তি পুকুর দিলহাম
টলটলে জল
তু কেবল ছড়াই যা…

সাহেব বাবু ইল আমহাকে পড়াইতে
অক্ষরে অক্ষরে তাকে চিনতি চিনতি
কখন জানি কী হইয়ে গিল…

মাধ্যমিকে সারা ইলাকায় পথম হলাম আমহি
লোকটা সুবাইকে মিষ্টি খাওয়াইয়ে
নেচে কুন্দে এক্কেরে খুশিতে ডগমগ

তারপর আমহাকে চমকাইয়া সাহেব বাবুকে
কাছে আনি আমহার হাতে দিলে তুলে

সাহেব বাবু বললে, ভালো বাসি আমিও পদ্দ কে
ইতে ভুল লাই
কিন্তুক উ আপনার বহু বটে
কী কইরা ই সম্ভব…

লোকটা চিৎকার করি উঠল

ই যে লক্ষী মা দেখছস আমহার ঘরে
ইকেও আমহি সিন্দুর দিই, ভালোবাসি
তা বলে উ কি আমহার বউ? 
উ পদ্দ। আমহায় উর ছেলে কিংবা বাপ
বলতে পারহ।

ই লোকটা আমহার বাপ।
হ হ ঠিক বুলেছে উ সাহেব বাবু!
শুধু জনম দিলেই বাপ হওয়া লাগে না
আগল দিতে লাগে। 

সাহেব বাবু আমহয় বিহা করে ঘরে লিয়ে
যাওয়ার আগে, 
লোকটা আমহায় চুপিচুপি বইলল
মনে রাইখ পদ্দ! 
তুমহি কিন্তুক পয়োজনে দুগ্গা হইতেও জানো!
––--------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

দুয়ারে ওঝা

হ রে গণশা! শনলোম নাকি তু টেরেন লাইনে মাথা
দিতে গায়েছিলি?
টেরেন লাকি তুকে মাঝে রাখে হরেন মাইরতে মাইরতে
ছুইটে গেছে! 
তুহর নাকি কিছুই হয় লাই? 
ই সইত্য বটে?

হ হ জানি জানি
তুহার বাপের অসুখ, বুনের বিহা
তুর খাদানের কামও আর লাই
তা ব্যলে ইত সহজে হার মাইনবি তু? 
বল ন গণশা! কী হৈয়েছে?

কী বৈইলছিস? তুহার লিখাপড়া?
ইটা আর কে ন জানে বুল?
ফটোক বালা আলো। মন্ত্রী আলো
বুলল, খাদানে কাম করতি করতি
ই ছেলে যখেন দশ টো হৈয়েছে বোর্ডের 
পরীক্ষাটোতে
তখেন ইর সব লিখাপড়ার খরচ আমহাদের!
ই তো সবাই জানে। লতুন তো লয়।
ফটোক বালা দুয়ারে আসে তুকে মন্ত্রীর সঙ্গে
জড়ায়ে জাপটে ফটোক তুইললে।
তুকে জিগালো, বড় হইয়ে কী হইতে চাও গণশা?
তুর চুখে কি খুশি তখেন, বৈললি মাস্টর হব আমহি।
মাস্টর!

তু গড়গড়ায়ে পৈরলি
হরহরায়ে উইঠলি কেলাসে কেলাসে।
কিন্তুক টেরেনের লিচে কেনে গেইছিলি বল ন?

কান্দিস ন গণশা! বৈলতে হবেক না 
বুঝে লিছি আমহি
ইত ভালো লেখাপড়া টো করেও তুর
মাস্টর হওয়া হল নি।
খাদানের কাম ও গেছে গা
বাপ ধুঁকছে
গণশা তোর বাপ লয় রে
ধুঁইকছে ই রাইজ্য, ই দ্যাস
বুক বাজায় বগল বাজায় লাইচ্যে 
কটা মাত্তর ল্যতা মন্ত্রী সিপাই

আরে আরে গণশা! কী হল তুহার?
অমন করে পাগলপানা ছুইটতে লাগিলি কেনে রে?
কুথাকে যাবি গণশা?

গণশা থাম থাম দাঁড়া কেনে

গণশা তু পাগল হলি রে বাপ?
শহীদ মিনারের উপরে উইটলি হরহরায়ে
আরে লামে আয় বাপ ধন
লামে আয়!

ওরে ওরে কে কুথাকে আছস ছুইটে আয় রে
আমহাদের গণশা পাগল হইছে
শহীদ মিনার থাকে উর দাবি ছুইড়ছে রে
সুইন্যে যাহ
উ কি বৈলছে তুমরা সুইনতে পাইচ্ছ না?
উ বলছে দুয়ারে ওঝা দাও!
দুয়ারে ওঝা!
গণশা বুলছে, ঝেইট্যে বিদেয় করো ন 
ই দুর্নীতি! 
গণশা বলছে, দুয়ারে ওঝা লে আনো
নইলে আমহি লামব না!
ঝেইট্যে বিদেয় করো মন্ত্রীর লাতি, পুতি আর
বিনি পাসে মাস্টর

দুয়ারে ফটোকওয়ালা চাই নি আমহার
দুয়ারে ওঝা খুঁজে নে আনো।


গণশার খাদানের কাম টাও গেছে 
উ অনেক বেশি লিখাপড়া করে করে পাগল
হয়ে গেছে …

ইমন পাগল কি বাবু লোকদের ছেলেপিলহার মাস্টর হইতে পারহে?


গণশা বাপ! তু ঝাঁপায়ে পড়। 
টেরেন তুর দুঃখ বুঝে লাই
মাটি তো মা। ঠিকই বুইজবে।

এবার মরে ওঝা হইয়ে জন্ম লিস বাপ
ল্যতা মন্ত্রী ছেলে মেয়ে শালী শালা 
বিনি পাসে মাস্টর…
ধরবি আর বিষ ঝাইরবি।
ধৈর্বি আর বিষ ঝাইরবি
গণশা! উ দেখ উরা এখনই পালাইচ্ছে।

তু তারহাতারি ঝাঁপায়ে পড়।
মর মর!
দুয়ারে ওঝা হইয়ে আয় গণশা
দুয়ারে ওঝা…
যাঃ!
—---------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)