অদৃশ্য আওতা

গণশা টা বড় বোকা 
নইলে কী আর মন্ত্রীমশাইয়ের পি এ কে হাতের কাছে পেয়ে ভরা হাটের মাঝে এমন করে
অমন কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে?

পি এ বললে, আরে ওকে বকছ কেন? ওর কী বলার
আছে বলুক না! আমি শুনবো। 
মন্ত্রী মশাই জনদরদী মানুষ।
তার কানে পৌঁছে দিলেই তো হল, নাকি?

গণশা বলতে শুরু করলে আর থামে না
হ্যাঁ গো বাবু! আমি না হয় সোনার টুকরো।
সোনার ছেলে বিশু। মানে হল গিয়ে আজ্ঞে
আমরা পেলাম সংরক্ষণের আওতা…
পাশের বাড়ির ভোম্বল ও ব্যাটা একেবারে
সাধারণ…
তবু কথা হল যে আমরা যখনই চাকরির পরীক্ষা দেই
পাশ তো করি না!
মানছি আমার মাথাটা একটু মোটা 
তবু এত বছর ধরে হরহর করে সব পড়লাম
তো যেই পরীক্ষায় বসতে যাই
মাথার উপর কাক বসে। শকুন ওড়ে।
বলে, টাকা চাই। দিতে পারবি? 
হুশ করে তাড়িয়ে দিই ওদের।
কেন রে! টাকা কেন দেব?
পড়ে পড়ে আমরা বলে কত রাত জেগে কাটিয়েছি
মায়ের গয়না, বাবার জমি…

যাক গে যাক, আসল কথা হল যে
তারপর শুনি ও বাবা! 
অমুক মন্ত্রীর ছেলে তমুক সে তো পরিক্ষাতেই বসেনি
সেদিন…হ্যাঁ আমি ঠিক জানি
সে তো সেদিন আমার পাড়ার কুসুমের গায়ে স্বপ্ন
বুনছিল গঙ্গার ধারের হোটেলে…
কুসুম নিজে বলেছে আমায়!
সে দিব্য কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে বেরিয়ে গেল
চাকরি করতে! 

গণশা টা ভারী বোকা! বলতে শুরু করলে
আর থামে না!
মন্ত্রীর পি এ তখন যাবার জন্য ব্যস্ত বড়
গণশা বলে উঠলে, থামুন মশাই! আরো বাকি।

হাসপাতালে নিয়ে গেলাম বাবাকে।
হঠাৎ বাবার বুকে ব্যথা। 
পাড়ার ডাক্তার বললে, গণশা তোর বাবার
হার্ট এ্যাটাক হয়েছে রে! 
শিগগির হাসপাতালে নিয়ে যা!

বড় হাসপাতালের বড় বড় ডাক্তার, নার্স। 
বলল, সিট তো নেই! সব ভর্তি
অন্য কোথাও যাও নিয়ে…
আমি তো অবাক
ওই তো সাদা চাদর পাতা বিছানা রেডি
মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসলে হাসপাতালের 
সিকিউরিটি
আরে, ওগুলো তোর আমার বাপের না রে ছেলে!
ওগুলো নেতা মন্ত্রী এম এল এ এম পি ওদের
বাপের জন্য…,

মন্ত্রীর পি এ ভীষণ ঘামছে।
অনেক কষ্টে এতক্ষণ শুনেছে সব
তারপর গণেশের কাঁধে হাত রেখে বললে,
শোনো। এত চিন্তা কোরো না। 
মন্ত্রী মশাই জনদরদী লোক। দেশের দশের
কথা ভেবেই চলেন দিনরাত।
তোমরা নিশ্চয়ই চাকরি পাবে! 
আজ চলি। মন্ত্রী মশাইকে সব জানাবো।
শিগগিরই ভালো খবর পাবে…

গণশা টা বড় বোকা। বলতে শুরু করলে আর
থামে না। 
ও আরো কত শত জানতো। 
নেতার ছেলে ধর্ষণ করে খুন করতে পারে।
নেতার ভাই হুমকি দিয়ে তোলা তুলতে পারে
নেতার মেয়ে না পড়েই কেমন ডাক্তার হয়ে যায়…

গণশা টা বড় বোকা! বলতে শুরু করলে আর
থামতে জানে না…

কিন্তু ওরা থামিয়ে দিতে জানে।

বড় রাস্তার পাশে ওর ঠোঁট চেরা, চোখ ওল্টানো,
জিভ বেরোনো দেহ টা খুবলে খুবলে খেয়ে যায়
শেয়াল…

মন্ত্রীর স্ত্রী ঝকঝকে কপাল নিয়ে এসে দাঁড়ায় 
মস্ত বড় চাকরির প্রথম সারিতে।

মন্ত্রী মশাই জনদরদী লোক।
দেশের দশের কথা ভেবেই চলেন দিনরাত…
–––----------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment