'মা বিদ্বিষাবহৈ'

"ওঁ অসতো মা সৎ গময়, 

তমসো মা জ্যোতির্গময়, 

মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।"


ব্ল্যাক বোর্ড, চক, টেবিল, চেয়ার

আর সবুজ মুখগুলোর মধ্যে

সাঁকো হয়ে উঠতে চেয়েছি আমি।


ছোট্ট চারার ভিতরের শক্তিকে

ভরিয়ে দিয়েছি আলো আর বাতাসে।


নিজের মাটিতে দাঁড়িয়ে সালোকসংশ্লেষ

করেছে চারা।

বৃক্ষ হয়ে বিস্তার করেছে ছায়া।

আমার ঝোলা ব্যাগে ভরে নিয়েছি আত্মসুখ।

পথে ঘাটে সেই বৃক্ষ নুয়ে পড়েছে আমার কাছে।

দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে বলেছি,

‘মা বিদ্বিষাবহৈ!'

‘মা বিদ্বিষাবহৈ!'


তারপর যুদ্ধ এসেছে।

উন্নয়নের যুদ্ধ! প্রগতির যুদ্ধ!

আধুনিকতার যুদ্ধ!

আমার ব্ল্যাক বোর্ড, শক্ত কাঁধ আর

দৃঢ় মেরুদণ্ডের উপর রোপন করা হয়েছে

বিরোধীতা, বৈরীতা।

কখনো...এ মাস্টার!

কখনো,... চশমখোর!

কখনো ...এত মাইনে আর কাজের বেলায় ফাঁকি!

আমার বিদ্যেকে তোলা হয়েছে নিলামে…

...একশ টাকার মাস্টার!

...দুশ টাকার মাস্টার!

আমার দৃঢ় মেরুদণ্ডের কলার চেপে ধরেছে 

সভ্যতার যুদ্ধ!

কম্পিউটার মোবাইল আর অনলাইনে

আমি হয়ে গেছি ভার্চুয়াল।

তবুও অদৃশ্য ছায়াপথ পেরিয়ে, 

ফোনের স্ক্রিন পেরিয়ে

আমি সাঁকো বুনে চলেছি। 


আমি শিক্ষক!

আমার নামের আগে পরে যাই বসাও না কেন,

আমার মেরুদণ্ডকে বিকৃত করে যতই বিদ্বেষের বিষ 

নিজের দেহে পুঁতে নাও না কেন,

তবুও তোমাকেই আমি গড়ে দিয়ে যাবো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল।

স্বার্থের সিংহাসনে বসবে তুমি। 

হয়তো বা আমার দিকে তাকিয়ে ক্রুর হাসবে।

আমি তোমার দিকে দুহাত তুলে বলবো,

বিদ্বেষ নয়, বিদ্বেষ নয়। বলো ভালোবাসি।


যদি কখনো তোমার সিংহাসন টলে যায়…

যদি কখনো তোমার ব্রহ্ম লব্ধ হয়!

যদি কখনো তুমি আমার বুনে দেওয়া শক্ত সাঁকোটার 

উপর দিয়ে ছুটে আসো আবার, 

আমায় ডাকো...মাস্টারমশাই!

আমি আবারও তোমার মাথায় দুহাত রেখে বলবো,

'"শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ!"

"মা বিদ্বিষাবহৈ!"


তারপর ধোঁয়া হয়ে যাবো দূরে, দূরে, অনেক দূরে!

তুমি তখন শুনতে পাবে, 

তোমার ভিতরের মানুষ নামের অনুভূতিটা বলছে,


'অসতো মা সৎ গময়, 

তমসো মা জ্যোতির্গময়, 

মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।'

----------------- 

Sujata Mishra

No comments:

Post a Comment