আহির ভৈরব ও কসাই

মাংসের গামলায় দু ফোঁটা জল পড়ে ছেলেটার চোখ থেকে
বিক্রি শেষ হলে দুটো হাত রগড়ে ধুয়ে নেয় সে।
তারপর মাটি থেকে তার গামছায় কুড়িয়ে নেয় বরষার হীরে
সজনে পাতা ছিঁড়ে নিয়ে বাড়ি ফেরে ছেলেটা।

রোজ সকালে কসাইয়ের ছেলেটা মুরগির দোকানে
এসে তাদের গায়ে হাত রাখে। 
কানের কাছে মুখ নামিয়ে শোনায় আহির ভৈরব
মুরগিরা শান্ত হয়। ঘুমিয়ে পড়ে। 
ছুরির আঘাতেও আর্তনাদ ওঠে না…
নীরব মাংসের গামলায় ছেলেটির অশ্রু পড়ে দু ফোঁটা

মল্লিকা বললো, তুই একটা কসাই। তোকে ভালোবাসবো আমি?
ছেলেটা নিশ্চুপ।
ফুসফুসে কিছুটা বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে গিয়েছিল সে মেয়েটির জন্য
আছড়ে ফেললো মাটিতে।

ছেলেটার বৃদ্ধ অথর্ব বাবা মারা গেল।
গোধূলি লগ্নে সুপাত্রে মল্লিকার বিয়ে
ছেলেটির দোকানের সব মুরগি যাবে সেই বিয়েতে
খাদ্য হয়ে…
ছেলেটি খাঁচার পাল্লা খুলে গড়িয়ে দিল সুর…
আরোহ অবরোহে ধুয়ে গেল তাদের আর্তনাদ।
মাংসের গামলার উপর ছেলেটা আলো রাখলো একমুঠো
লিখে দিল, গোধূলির পরে রাত্রি নামবে যখন
এ আলো মেখে নিও।

'আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে…'
মাটি চিরে চিরে ছেলেটার পায়ের ছাপ চলে গেল
দূরে…

এখানে উইয়ের ঢিবির নিচে একটা মাংসের দোকান ছিল
ছেলেটা সুর দিয়ে মুরগি ভিজিয়ে মাংস করতো।
একটুও আর্তনাদ হত না।
ওরাও ছেলেটাকে ভালোবাসতো।
শুধু আমিই…
মল্লিকার হাতে সত্তুরে লাঠি।
কথাগুলো শেষ করেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।
—----------------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment