প্রজাপতি ঠিক এসে বসে আমার গায়ে
ঠোঁটে রাখে চুমো। আলতো আদর দিয়ে
বলে, উড়ে যেতে ইচ্ছে হয় না?
মনে হয় না স্বাধীন হয়ে ভেসে যেতে দূরে?
আমি খিলখিল করে হেসে উঠি।
এই যে তুমি আসো, ভালোবাসো
আমি গন্ধ ছড়াই, ভেসেই তো যাই গো!
এটাই আমার স্বাধীনতা।
দুপুর বেলায় গাছ হয়ে যাই।
পথিক আসে। ছায়ায় বসে।
একদিন এক ছোট্ট শিশু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলে
তোমার কাছে এক প্রশ্ন রাখতে এলাম
রাখবো?
আমি বললাম আগে আমার ছায়ায় জুরোও। তারপর
রেখো।
সে বললে, আচ্ছা শোনো না! বইতে পেলাম
তোমার নাকি প্রাণ আছে ঠিক আমারই মত!
তবে যে চলতে পারো না, ছুটতে পারো না, কইতে
নাইতে কিছুই পারো না…
উড়ে যেতে ইচ্ছে হয় না?
মনে হয় না স্বাধীন হয়ে ছুটে যেতে দূরে?
আমি জোরে জোরে হেসে উঠলাম।
পাতাগুলো নড়ে উঠল। ছেলেটা বাতাস পেল
কপালের ঘাম শুকালো তার।
তার হাতের মধ্যে একটা ফল ফেলে দিয়ে বললাম
এটাই আমার স্বাধীনতা।
বিকেল বেলা হতেই আমি বাড়ির বধূ
খেটে খুটে স্বামী আসবে। শ্বশুর ভাসুর
সূর্য পশ্চিম ছুঁলেই আমি গা ধুয়ে এসে গান হই
চুল বাঁধি, প্রদীপ জ্বালাই।
স্বামী এসে হাত ধরে বলে, চলো হাওয়া খেয়ে আসি
আমি বলি, রান্না বাকি মশাই!
সে অভিমান করে। রাতের মত খানিক কাব্য করে বলে, ইচ্ছে হয় না উড়ে যেতে?
স্বাধীন হয়ে খুব ভাসতে?
আমি হেসে তাকে জড়িয়ে ধরি।
বলি, এটাই আমার স্বাধীনতা।
আমার বার্ধক্যের চোখে ঘুম নেই
বন্দি ওষুধে অসুখে
যৌবন আমায় না দেখার ভান করে চলে যায়
বৃদ্ধ সময় আমি তাকে ডাকি, এস না গল্প করি!
যুবক বেলা টগবগে স্রোত নিয়ে ছুটে যায়।
কী মনে করে ফিরে আসে বেশ কিছু পরে
এই যে শোনো! ইচ্ছে হয় না ফিরে যেতে?
মনে হয় না স্বাধীন হতে?
শেষের শেষে দাঁড়িয়ে কম্পিত কণ্ঠে আমি বলি,
এই তো নিয়ম!
এই তো আমার স্বাধীনতা!
এই তো আমার স্বাধীনতা।
—------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
No comments:
Post a Comment