মানুষ - মিছিল

ডাস্টবিনের পাশে যেদিন উন্মাদ নগ্ন দেহটা যন্ত্রণায়
চিৎকার করে উঠল কেউ এল না পাশে
রাতের অন্ধকার চিরে
কয়েকটি কুকুর উলঙ্গ লোভ নিয়ে দাঁড়ালো উন্মাদিনীর চারপাশে

জন্ম নিল ছোট্ট কচি প্রাণ।
উন্মাদিনীর চোখে আগুন জ্বলে উঠল প্রথমবার
সে তার আঁচলে চেপে ধরল স্নেহ
কাঁচের টুকরো তুলে ছুঁড়ে মারল লোলুপ কুকুরগুলোর দিকে
তারপর জড়িয়ে জাপটে আগল দিল তার কোলে

ছোট্ট প্রাণ স্থান পায় এক বৃহৎ প্রাণে
উন্মাদিনী বলে, যা যা তুই যা আমি জেগে আছি
সন্তানহীনা একজন বুকে তুলে নেয় তাকে
উন্মাদিনী কে দেয় অন্ন বস্ত্র
কিন্তু তার অত সময় কোথা সময় নষ্ট করবার
সারাদিন ধরে সে কাঁচ কুড়োয়, বুকের ভিতর
আরো আরো বজ্র বাঁধে তার
সন্তান হীনা বিস্মিত হয়। 
রাত গভীর হলে উন্মাদ মায়ের স্রোত ভেসে আসে কণ্ঠে…সা…বধান! 

সব কুকুর থেমে যায়। সব মানুষ ভয় পায়।
উন্মাদিনী প্রবল ঝড় এখন, ধরতে গেলেই
ছুঁড়ে ফেলে, বুকের দিকে হাত বাড়ালেই
ঝনঝন করে ওঠে কাঁচ, রক্তের গন্ধে ম ম করে পথ

পৃথিবী উন্মাদিনীর নাম রেখেছে মা।

সারা রাত্তির অস্ত্র হওয়ার পরে সূর্য উঠলে সে মা
খানিক ঘুমিয়ে নেয়। 
তারপর ডাস্টবিন খেতে খেতে গান ধরে
আমরা সবাই রাজা
সেই কবে যেন সে শিখেছিল এ গান

ধীরে ধীরে মা বৃক্ষ হয়। 
সেই বৃক্ষের নিচে এসে বসে ছোট ছোট প্রাণ
নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে।

পালিকা মা তার মেয়ের নাম রেখেছে প্রীতিলতা।
আবর্জনা সরিয়ে ফেলে সে মেয়ে গাছ জড়িয়ে ধরে
বলে, কেন মা আমার সঙ্গে গেলে না?
উন্মাদিনী হাসে। 

পৃথিবী বলে, তোর উন্মাদিনী মা এখন মাতঙ্গিনি রে! 
মানুষ মিছিলের সামনে থাকতে হবে না? 
—----------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment