জঙ্গল মহল ভাদুতলা রেল স্টেশন।
পাশাপাশি বসে দুটি মানুষ
হাতে শালপাতা। তাতে পিঁপড়ের ডিমের মত
কী যেন রাখা…
একটু একটু মুখে তুলছে।
কিছু পরে মানুষ দুটি উঠে দাঁড়ালো।
হাতের শূন্য শালপাতা ফেলে প্রবেশ করলো জঙ্গলে
জঙ্গল চিরে কাঁসাই চলে যাচ্ছে কোন্ অজানায়
আঁজলা ভরে জল খেলো মানুষ দুটি
তারপর একজন কুড়ছি ফুল তুলে আনলো
অন্যজন ধাধকি, বেঁওরা।
একজন মানুষ অন্যজনের কানের লতিতে
পরিয়ে দিল স্নেহ। সিঁথিতে ভালোবাসা।
ফুল সাজিয়ে দিল অরণ্যের ঘাসে ঘাসে
তারপর শরীরে মিলিয়ে নিল শরীর…
দাঁশায় পরব শুরু হয়েছে গত পরশু থেকে
দাঁড়ান ভুয়াং নৃত্যে সামিল পুরো পরগনা
দেবীর বুকের উপর শুয়ে রাজা।
দেবী নিশ্চুপ
রাজা জিজ্ঞেস করলো, কী অভিপ্রায়?
আমাকে হত্যা তো?
দেবী তখনো নিশ্চুপ।
রাজা আরো জোরে দেবীকে আলিঙ্গন করলো
রাজা প্রবল হাসলো!
ঝড় উঠলো!
সমস্ত গাছেরা দুলে উঠলো!
শাল মহুল ডেকে উঠলো, রাজা! তুমি পালাও!
রাজা তার বুকে দেবীর সঙ্গে নিবিড় হয়ে রইল।
দেবীর ওষ্ঠ থেকে ঝরে পড়লো রক্ত
আমি নিরূপায় রাজা।
বুকের মধ্যে কর্তব্য,
মাথার ভিতরে গিজগিজ করছে
সাদা সাদা ফুলের মত ভাত…
ওরা বলেছে…
তোমাকে হত্যা করলে আমার সব অসুখ মিটে যাবে
রাজা!
আমি নিরূপায়!
ভালোবেসে মৃত্যু এ কি কম সৌভাগ্যের প্রিয়া?
রাজার হাসি নিভে আসছে।
আজ তোমার জন্মদিন রাজা!
আমি পায়েস এনেছিলাম।
পিঁপড়ের ডিমে মাদক ছিল,
পায়েসে নয়।
কণ্ঠে ভীষণ কম্পন দেবীর।
তাই বুঝি পায়েস দাও নি এতক্ষণ?
রাজার চোখে ঘুম নেমে আসছে
কই দেবী! পায়েস দাও। শীঘ্র দাও!
রাজার চোখ পাহাড় হয়ে যাচ্ছে। শরীর আচ্ছন্ন।
ঠোঁটের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো জন্মদিন
একটা কাঠবেড়ালি দুটো মাকড়শা একটু আগেই
রাজাকে খুঁজে গেল
'অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে?'
দেবীর শুষ্ক চোখ
গাছেরা দুয়ো দিচ্ছে তাকে
বলছে, দেবী! তোমাকে ধিক্কার!
ভালোবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে অভাব
রাজার অচেতন দেহ পিঠে বেঁধে দেবী ছুটে গেল
স্টেশনে…
জঙ্গলমহল এক্সপ্রেস এসে দাঁড়ালো দুই নম্বর
প্ল্যাটফর্মে…
রাজার ঘুমন্ত চিবুকে বিস্ময়-
এবার অন্য কেন, দেবী?
আলগা খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে দেবী বলে,
ভালোবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে অভাব।
আমি শিখে গেছি।
ট্রেন ছুটছে…
বাতাস ভাসছে
কাঁসাই ছোট হয়ে আসছে
আওয়াজ ক্রমশ কমে আসছে…
'অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে!'
—--------------–-----
SUJAN MITHI (SUJATA MIHRA)
No comments:
Post a Comment