পরাগ ধানী থেকে পরাগ রেণু নিয়ে এসে
অন্য ফুলের গর্ভ মুণ্ডে পুঁততে পুঁততে বাতাস জিজ্ঞেস
করলো, বললে না তো! তুমি কী করো?
আমি নিশ্চুপ।
পরাগায়ন শেষ করে হাত ঝাড়ল বাতাস।
বলল, চলি। আমার আবার অনেক কাজ।
শোনো! চলে যেও না!
বাতাসের ব্যস্ততা আঁকড়ে ধরলাম আমি
আমিও করি! সূর্য থেকে আলো নিই। রোদ ছেঁকে গান।
মাটি থেকে ধৈর্য্য নিই। আকাশ থেকে ঔদার্য।
বৃক্ষ আমায় শ্বাস পাঠায়। বৃষ্টি ধুয়ে স্নান।
বাতাস ভারী বিরক্ত। আরে কাজ টা কী করো
তাই তো বলছ না!
তারপর বলল,
আমার ভাই অত সময় নেই। ধান দোলাতে হবে।
আমি গেলাম।
থামো। থামো। বাসা বোনা শেষ করে আমিই আসছি
তোমার কাছে।
আমার কি আর এতটুকু ফুরসত আছে গল্প শোনার!
বলেই পাখিটা কাঁধে এসে বসল।
নাও বলো এবার…তুমি যেন কী করো?
আমি বললাম, হাতে হাত রাখি। ভালোবাসি।
সে ভ্রু কুঞ্চিত করল, সে তো সবাই করে।
আমি আরো বললাম
চাল সিদ্ধ করে সাদা ভাত ফুল করি
পাহাড় থেকে ঝর্ণা আঁকি
আমি ভালোবাসি…
পাখিটা উড়ে গেল। বলে গেল, মেঘের সঙ্গে
লুকোচুরি বাকি, বীজ ছড়ানো তাও…
আমি আসছি…
আমি ক্ষেতে গেলাম। সবুজ ধানের উপর
শুয়ে বাতাস।
ঠিক তার পাশ টিতে বসে কৃষক স্বপ্ন দেখছে
মস্ত গোলা
নোলক পরা বউ
আমায় দেখতেই দূর দূর দূর করে তেড়ে এল।
তোকে কাজ দেব?
যা পালা! অপয়া একটা!
স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এল ওর বউ
বলল, ইস! নোলক টাও বুঝি হারিয়ে যাবে!
আমি নদীতে গেলাম এক ছুটে
সব কান্না ভাসিয়ে দিয়ে ছুটলাম শিখরে
শিখর থেকে আবার শিখরে
হো হো করে উঠলাম হেসে
তালি দিলাম দু হাত ভরে…
বাতাস অবাক। পাখিও থমকে
মানুষ গুলোর একে অপরের চোখে চোখ
কৌতূহলে চুমুক…
আমি ছড়িয়ে দিলাম, বিলিয়ে দিলাম।
সামনে এসে নতজানু অতীত
কৃষক আর ওর বউ বললো,
তুমিও মানুষ! স্বীকার করি।
আমাদের হাতে হাত রাখো। আমরা ধন্য হই!
ওই দেখো আরো কত অনুতাপ
ওদের মাথায় রাখো ক্ষমা…
দাও আশীর্বাদ।
শিখর বললো, এখন হয়েছে সময়।
বলে দাও ওদের…
আমি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলাম,
শোনো! আমার আর এক পরিচয় আছে!
আমার আর এক পেশা আছে
আমি একজন বৃহন্নলা!
আমি একজন হিজরে…
—----------–--
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
No comments:
Post a Comment