মেয়েটার নাম বাহামণি বাস্কে।
বসন্তের বাহা-মেলায় যখন ওর বাপ ঠাকুর্দায়
নাচকোঁদ করছিল ঠিক তখন পাড়ার বুড়ি দাই এসে
খবর দিয়েছিল, অ বুধনা! শিগগির যা! দেখ গে
তোর চাঁদ পানা বেটি হয়েছে রে!
সে তার বাপের কী খুশি যে হল! একেবারে এক ছুটে
ঘরে গিয়ে মেয়ে কোলে তুলে বললে,
আমার বাহামণি আইছিস?
ঠাকুরদা বললে, মারাং বুরুর থানে পুজো রেখে আয়
বাপ…পত্তম মেয়ে লক্ষ্মী হয়।
এই বাহা যখন স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হল
অন্য সব অভিভাবকেরা হামলে পড়ল স্কুলের গেটে
কারা আবার শ্লোগান তুললো ওর মধ্যেই…
বিচার চাই! বিচার চাই!
বাহার বাপের বুক ঢিপঢিপ
মেয়ের কানের কাছে মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলে,
হ্যাঁ রে মা! কিছু করিস নাই তো?
বাহামণি হেসে বললো, করেছি তো বাপ!
বড়লোকদের ছিটকাই দিছি!
অনেক অনেক বার খাতা মিলিয়ে মিলিয়ে বাহামণির
পাওয়া নম্বর একটাও কমলো না।
বরং বাংলায় সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্য বরাদ্দ এক নম্বরটাও জুটে গেল তার।
যারা বিচার চাইতে এসেছিল, পাংশু মুখ করে বললো
এত সুন্দর হাতের লেখা! কী করে হয়?
তরতর করে এগোয় মেয়ে।
বাহা উৎসবে বসন্ত নামে। মা বাপের সঙ্গে গিয়ে
নাচন কোদন করে। পান্তা খায়।
মারাং বুরুর সামনে মাথা নোয়ায়।
খড় কাটে। গরুকে জাবনা দেয়।
বিকেলবেলা গা ধোয়, পাউডার লাগায়
বুধি, কমলি দের সঙ্গে গল্প করে…
রাত নামলে ডুবে যায় বইয়ে।
এক প্রবল আত্মবিশ্বাসে।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ছাড়িয়ে মেয়ে সাড়া ফেলে দিল হঠাৎ একদিন
হই হই কান্ড রই রই ব্যাপার…
বাহামণি বাস্কে মেডিকেলে পেয়েছে চান্স!
ওই যে যারা বিচার চাইতে এসেছিল
তারা আড়ালে হাসলো, বললো…
বোঝো না! সংরক্ষণ! নাহ! এ দেশের ভাগ্যে আর
ভালো কিস্যু হবে না!
ও যদি ডাক্তার হয়, মরবে! সব মরবে।
বাহামণি ডাক্তার হল। কিন্তু তার কাছে চিকিৎসা
নিতে এলো না কেউ…
বাহামণি গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে সাঁওতাল পরগনার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো।
বাদল মুর্মু, টগরী টুডু, লম্বু হেমব্রম, লক্ষী, রতন,
সোনালী সবাই একে একে এলো তার কাছে
বাহা…পেটে বড় বেদনা!
বাহা…বুকের বাঁ দিকে কী যে হয়! এতদিন মারাং বুরুর চন্নামেত্ত খেলুম, তাও…
বাহা…ভাগ্যিস তুই ছিলিস!
বাহা…তোর অনেক ভালো হোক বেটি!
বাহামণি আরো ডিগ্রি অর্জন করলো। বিখ্যাত
কার্ডিওলোজিস্ট বাহামণি বাস্কে পুরস্কৃত হল
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে…
ওই যে যারা বিচার চাইতে এসেছিল, তাদের
বুকের রোগ নিয়ে এ ডাক্তার ও ডাক্তার করতে
করতে শেষে শুনলো, বাহামণি বাস্কেই শেষ উপায়।
বাড়ির লোককে বললো, আর কী!
সব ডাক্তারই ওর কাছে রেফার করছে যখন…
ভদ্র পাড়া ধীরে ধীরে ভিড় জমালো
সাঁওতাল পরগনায়।
বসন্তের বাহা উৎসব তখন খুব।
বাহামণি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাচছে, গাইছে।
ওর বাপ বললে, যা বেটি যা! ওদের বুক কেটে
ধুকপুক টা বের করে দিয়ে আয় আরো…
ওরা বেঁচে থাকলে তবে না আমার ঘরে বাহামণি জন্মাইবে!
বাহামণি টেবিলে শুয়ে থাকা ভদ্রলোকগুলোর
বুক কাটে, হৃদয় হাতে নিয়ে দেখে…
ঠিক কোনখানে লেখা থাকে,
বাহামণি বাস্কে প্রথম হতে পারে না!
বাহামণি বাস্কে ডাক্তার হতে পারে না!
বাহামণি বাস্কে আগুন হতে পারে না!
বিচার চাই! বিচার চাই!
—----------–--
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
No comments:
Post a Comment