বিজয়া

অতি স্নেহে বাবা নাম রেখেছিলেন আগমনী।
মাস তিনেক পরেই বাবা মায়ের গাড়ি দুর্ঘটনায়
মৃত্যু…
আমার নাম হয়ে যায় অভাগী।

আমার বুদ্ধি হালকা ছিল। শরীর ছিল ভারী।
জেঠি মারতে মারতে হাত ব্যথা করে ছেড়ে দিয়ে
বলত, আবাগী মরে না বাপু! 

বই পত্তর ছুঁয়েও দেখিনি কোনোদিন
দেখিনি কেমন করে ভালোবাসা হয়
ছোটকার বন্ধু এসে আমার গালে টোকা দিয়ে
বলত, কী খুকু কেমন আছো?
বেশ লাগত আমার।

আমার বুদ্ধি বড় হালকা। কিন্তু হৃদয় ছিল ভারী।
কেঁপে কেঁপে উঠত সেই টোকায়।

রোজ রোজ এমন চলতে চলতে আমার শরীরে
গজিয়ে উঠল জেঠির সঙ্গে দেখতে যাওয়া
যাত্রা পালা…
একদিন ফাঁকা বুদ্ধির ঘরে কী এক বিস্ময়
প্রবেশ করল। কী এক আনন্দ…
জাপটে ধরে আঁচড়ে কামড়ে ভালোবেসে ভেসে
গেলাম। 
ছোটকার বন্ধু সেদিন আমার গালে স্নেহ রাখতে আসার সুযোগ পেয়ে
আর তাকে ছাড়িনি…

হালকা বুদ্ধি বলে কি শরীর বড় হতে নেই?
ছোটকা মাথায় ছুঁড়ল চ্যালা কাঠ…
জ্যাঠা বলল, বাড়ির কলঙ্ক। 
আজ দশমী। বিজয়ায় বিজয় করে দিয়ে আয়।

এসব অনেক জন্ম আগের কথা।
এখন আমি মাটি।
ছোটকার বন্ধু কুমোরটুলি।
আমায় গড়ে।
আগমনী থেকে বিজয়া হই।
আবার জলে ভেসে ভেসে ফিরে আসি কুমোরটুলিতে।

সব ভালোবাসা কী আর প্রতি জন্মে রক্ত মাংসে হয়?
—-------–------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment