গান রাখলাম চুম্বনে

শ্যাম - 'ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো-- তোমার চরণমঞ্জীরে॥'

আহা রাই আমার! চরণে এত শোণিত? 
এই অভিসারে আমার যে গো হৃদয়ে বড় ক্ষত!

রাই - অশ্রু কেন চোখে তোমার প্রিয়? প্রেমে কি গো এত ব্যথা লাগে? এইটুকু ক্ষত এ আমার বড় আনন্দের! 

শ্যাম - দাও দাও পা দুখানি! কোলে তুলে আদর দিই, যত্ন দিই। 

রাই - ইস! প্রাণ আমার! তার চেয়ে বাঁশিতে তোলো মেঘ মল্লার…ঝমঝম করে বৃষ্টি আসুক। আমরা দুজন একসঙ্গে ভালোবাসতে বাসতে ভেসে যাই শ্রাবন দেশের ঘাটে। শুধিয়ে আসি সুধার পুকুর ঘাটে, তোমরা কি কেউ ভালোবাসতে পারো, আমার শ্যামের মত?

শ্যাম - গোকুল যে ছাড়তে হবে আমায়! মথুরা গমনের সময় হয়েছে। তোমার জন্য একটা গান বেঁধেছি। সেইটে তোমার মর্মে দেব ঢেলে। আমায় মনে পড়লে শুনো তাকে। আগল দিয়ে রেখো। শরীর মন সবটুকু বন্ধ করে যত্ন দিয়ে…

রাই - এমন করে বোলো না সখা! তোমায় ছাড়া কেমন করে থাকবো তবে প্রিয়? শাশুড়ি ননদ কাঁটা বিছায় পথে, স্বামী মুখ ভার করে…তবু ছুটে ছুটে আসি। তোমায় ছেড়ে থাকবো কেমন করে?

শ্যাম - প্রেমে বিরহ যে অবশ্যম্ভাবী প্রিয়ে! আমার গান খানি হৃদয়ে রেখো। তোমার যখনই মনখারাপ হবে, নিজের বুকে হাত দিয়ে আমায় ছুঁয়ে নিও।

রাই - কেমন করে আমার বুকে তোমায় পাবো?

শ্যাম - ভালোবাসলে শরীর জুড়ে যায় মনের সঙ্গে। মন শরীরে। দূরত্ব যতই সুদূর হোক, আশায় বাসা গড়ে তোলে ভালোবাসা ঠিক বুকের মাঝখানে। আমি যেমন তোমায় ছোঁবো অনুভবে, তেমনই তুমিও আমায় পাবে।

রাই - যেও না কানাই!

শ্যাম - এই তো উচিত তোমার দেবী? এত স্বার্থপর তো নয় ভালোবাসা! আঁচল খুলে দাও…

রাই - ‘‘জনম অবধি হাম রূপ নেহারিলু—
নয়ন না তিরপিত ভেল।
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখলু
তবু হিয়া জুড়ন না গেল।"

যাও তবে। ফিরে এস ঠিক। যদি এক পৃথিবী বদল হয়ে যায়…যদি সহস্র বছর পার হয়ে যায়…যদি মেঘ রোদ সুর নতুন হয়ে যায়…ফিরে এসে আমার বুকে তোমার গান খানিকে ঠিক খুঁজে পাবে। 
আমার শরীরে তোমার ঘ্রাণ…
আমার কিন্তু মৃত্যু হবে না কানু!
সাবধানে এস…

শ্যাম - বিদায় দাও। কর্তব্য শেষ করেই ফিরে আসবো আমাদের এই হৃদয় পুরের বাসায়।
দেখো, বৃষ্টি নামলো।
এই গান রাখলাম চুম্বনে…
—-----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment