অলিখিত পত্র

আমিও তাকে মন্দ মেয়েই বলি।
মন্দ সে নয় জানি 
তবু মা বললো, নাকটা বোঁচা
ও মেয়েরা খুব খারাপ হয়।
কাকিমা বললো, হ্যাঁ মরুভূমির মত চোখ
সংসারে অকল্যাণ একেবারে
বাবা বললো, না। আমি দেখেছি লুকিয়ে কাঁদে
ওটা তো আরো খারাপ!

জ্যেঠিমার অভিযোগ আরো গুরুতর
ঈশ্বরে ভক্তি নেই মোটে
কেবল রবি ঠাকুর আর রবি ঠাকুর
কাব্যি করা মেয়ে বড় ভয়ংকর!

আমি তাকে ঠেসে ধরি দেওয়ালে
জানিস, কেন তোকে মারছি?
সে বলে, জানি না তো! আমি মন্দ বোধহয় খুব…

অবহেলা পেতে পেতে
মার খেতে খেতে 
তারপর একদিন সে চলে গেল।
আমি কোনদিন তার এ স্পর্ধা ভাবিনি

মা বললো, মন্দ! ছি!
কাকিমা বললো, দুয়ো!
বাবা বললো, অলক্ষ্মী ছিল বলেই এত খারাপ হচ্ছিল
আমি বললাম, বেশ তবে তাই হোক। 
সব ভালো হোক।

একদিন, দুদিন, দশ দিন…
আমার মধ্যে বাসা গড়লো অনাবৃষ্টি
ফুটিফাটা ধূ ধূ ফাঁকা মাঠ
বুকের বামদিকে বসে থাকা গোলাপি রঙের যন্ত্রটা বললো,
এর নাম দুর্ভিক্ষ।

খবর পেলাম আমার মন্দ মেয়ে তোমার সঙ্গে থাকে।
তোমার উঠোন জুড়ে বৃষ্টি 
ক্ষেতে পাকা ধান
খড়ের আঁটি বোঝাই নৌকা
তার পায়ে আলতা, কোমরে চাবি গুচ্ছ
নবান্নের আয়োজনে তোমার বাড়ি উৎসব লেগে থাকে বারোমাস

খবর পেলাম, আমার মন্দ মেয়ে তার আকাশ উপুড় করে তোমার বুকে
শব্দ বোনে, কাব্যি করে, ছবি আঁকে…

আমার কান্নার বর্ণমালা নেই।
শুধু মনে পড়ে এইতো সেদিন 
প্রবল উত্তাপ সারা শরীরে আমার
ব্যথায় দু চোখ বোজা…
কাজ শেষ করে সে এসে বসে আছে পাশে।
তার ভেজা আঁচল আমার কপাল জুড়ে শুয়ে
শুষে নেয় আমার সমস্ত উত্তাপ,
আমার ব্যথা।

ও আমার মন্দ মেয়ের নতুন জীবন!
তার কাছে ক্ষমা চাইবার বর্ণও আমি শিখিনি কখনো

একটা প্রশ্ন কেবল তোমার কাছে…

তোমায় যখন সে খুব আদর করে, জড়িয়ে ধরে
বুকের উপর খুব ঢেলে দেয় সুর
শীতলপাটি বিছিয়ে বসে গল্প বাঁধে আগাগোড়া
তখন, কোনোদিন…কখনো 
আমার মন্দ মেয়ে তোমার বুকে আমার জ্বর খুঁজে
পেয়েছে গো? 
বলো না! ও ভালো মানুষ! 

ও হ্যাঁ, ওকে একটা কথা বলে দিও
ওর ঠাকুরকে আমি বড় আগলে রেখেছি এখন
নির্ঘুম রাত গুলোয় তাঁকে জড়িয়ে ধরি

আর একটা মজার কথা 
গতকাল কাকিমা আমার ঘরে এসে বললো,
এ কী রে! তোর চোখ এমন মরুভূমি হলো কী করে?

বাবা বললো, না না আমি দেখেছি লুকিয়ে কাঁদে…
—–---–--------–––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment