নিষিদ্ধ জন্ম

আমি কোনোদিন নিষিদ্ধ পল্লীতে যাইনি
সেন্টিনালী দ্বীপে গিয়েছিলাম।
ওদের ছোঁড়া তীর আমার গায়ে লাগার আগেই
খসে গেল।
ওরা অবাক হলো। আলোচনা হলো।

মেয়েটার খোলা চুল, খোলা বুক
ভয়াল সমুদ্রের মতই গায়ের রঙ
আমি ভয় পাইনি।
আমি কোনোদিন নিষিদ্ধ পল্লীতে যাইনি
সেন্টিনালী দ্বীপে গিয়েছিলাম।

চোখে শালুক রঙের বিস্ময় লেগে ছিল তার
আমার মৃত্যু হচ্ছিল না
ওরা ইশারা করছিল
কাঁচা মাছ চিবিয়ে খেতে খেতে হাসছিল
মেয়েটার কোমর জড়ানো অজগর
তার নিচে গুহা
মেয়েটার ঠোঁটে একখানা তিল
আমি ঠিক জানি, ঠোঁটে তিল থাকলে
প্রেমজ বিবাহ অবধারিত
মেয়েটা দুদিকে ঘাড় নাড়লো।
হৃদয় পড়ে ফেললো নাকি?

ওরা আমার পোশাক খুলে ফেললো
শুঁকে নিল মাথা থেকে পা পর্যন্ত
মৃত্যু কেন হলো না, এ বিষয়ে আশ্চর্য হয়ে
ওদের গবেষক ডেকে নিয়ে এলো।
কী সব বলাবলি করার পরে সবাই চলে গেল।

খেজুর কাঁটা দিয়ে ঘেরা আমার কারাগারে
মেয়েটা এলো চুপিচুপি
হাত বাড়িয়ে ইশারায় ইশারায় কথা বুনলো
চলে যেতে বললো
আমি বুঝলাম।
আমি নিষিদ্ধ পল্লীতে কখনো যাইনি
কিন্তু নিষিদ্ধ দ্বীপের আমি এ মায়া কাটাতে পারলাম না।

আমার হারিয়ে ফেলা বন্ধুরা দ্বীপের আশেপাশে
আমায় খুঁজতে বেরিয়েছে
আমাকে ডাকছে
আমার দিকে ফিরে যাওয়ার উপায় ছুঁড়ে দিচ্ছে
আমি খেজুর কাঁটার ভিতরে উন্মুক্ত মেয়েটার
হৃদয় খুঁজে চলেছি
বিষ খাওয়াবে আমায়
তিন রকম বৃক্ষের শিকড় বেঁটে সন্ধের সময়
বালির নীচে চাপা দেবে আমার শরীর
বুঝছি আমি, কিন্তু শুনছি না

তুমি জানো অলোকা, ঠোঁটে তিল থাকলে
প্রেমে বিয়ে হয়?
তোমায় একটা আকাশী রঙের শাড়ি কিনে দেব
সমুদ্রে এসে মিশবে আকাশ
তোমার চুলে দেব জুঁই
তোমার জন্য গান বাঁধবো

মেয়েটা আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে
তাকিয়ে রইল।
তারপর…
আমায় বিষ খাওয়ানো হল।

তারপর বালির নিচে টানতে টানতে নিয়ে গেল আমার শরীর
আমি ঘুমানোর আগে বিড়বিড় করলাম
অলোকা, তোমার গুহার দেওয়ালে আমি সভ্যতা
আঁকবো।
মেয়ে হলে নাম রাখবো বৃষ্টি

আমি কোনদিন নিষিদ্ধ পল্লীতে যাইনি
আমি সেন্টিনালী দ্বীপে গিয়েছিলাম।
আমার বন্ধুরা আমায় না পেয়ে ফিরে গেছে
আমার ঘুমন্ত চোখ 
নীল শরীর
নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছে রক্ত
শ্বাসে আটকে যাচ্ছে বালি

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল আমার
মেয়েটার উন্মুক্ত বুক থেকে মাতৃত্ব গড়িয়ে পড়ছে আমার মুখে
আমার পাশে শুয়ে আমার আলোকা
এক নিষিদ্ধ দ্বীপে আমার নতুন জন্ম দিচ্ছে
তার স্তনের চারপাশে থোকা থোকা জুঁই
গুহার দেওয়ালে আঁকা স্নেহ।

আমি বেঁচে উঠছি
আমার ঠোঁটে তিল 
গায়ের রঙ সমুদ্র
সারা শরীর উন্মুক্ত…

ফিরে আসার পরে আমি নিষিদ্ধ পল্লী গেছি বহুবার,
কিন্তু কোনোদিন সেন্টিনালী খুঁজে পাইনি।
—------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment