ছিঁড়ে ফেলেছিলাম ওদের ক্লাবের দেওয়ালে টাঙানো এ নির্দেশিকা।
ভয় পাইনি এক বিন্দুও…
ওদের প্রমোদ ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিলাম সেদিন।
নিজের জন্য নিজের কাছেই তো রেখেছিলাম স্পর্ধাকে।
কল্পনা একদিন জিজ্ঞেস করেছিল আমায়, ছাগ বলি
দিতে পারিস, রাণী?
আমি হেসেছিলাম। না তা পারিনা। কিন্তু…
চিবুক শক্ত করে বলেছিলাম, দেশের জন্য
মরতে ও মারতে দুইই পারি।
সমস্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড মুখে ঢেলেছিলাম।
জয় হিন্দ! বন্দেমাতরম…
কেঁপে উঠেছিল ইউরোপীয়ান ক্লাব! প্রবল ইংরেজ।
আমিই তো সে!
বৈধব্যের নীতি অমান্য করে রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী
সেজেছিলাম। সন্ধান নিয়ে এসেছিলাম গোপন অস্ত্রের
আমার সারা অঙ্গে ঝাল লংকা ঘষছিল জমাদারনী
জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিলাম আমি
চিৎকার করে বলেছিলাম, বলবো না! বলবো না!
পানিশমেন্ট সেলে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল
আমি জ্ঞান হারাচ্ছিলাম
তবু বলেই চলেছিলাম, বলবো না। বলছি না।
গোল্ডি আমার সঙ্গে প্রতারণা করলো!
আমার চোখে আগুন!
বুকে ঘৃণা
ক্রোধ দিলাম উগড়ে গোল্ডির গালে
ইতিহাসের পাতায় লিখে দিলাম
শোনো! আমার অন্য হাত বাকি এখনো
প্রয়োজন পড়লে…
অস্ত্র আইনে প্রথম যেদিন ধরা পড়ি আমি পুলিশের হাতে
সেদিন ওরা আমার প্রহরা এত শক্ত করে দিল
মনে মনে হাসলাম
নারীকে কারা যেন হীন দুর্বল ভাবে আজকেও?
প্রীতিলতা আমি! ননীবালা আমি! দুকড়িবালা,
কল্যাণী হয়েছি। আমি সুহাসিনী হয়েছি।
বীণা, কল্পনা হয়েছি।
ওই দেখতে পাচ্ছ মিছিল?
ভালো করে তাকিয়ে দেখো সামনে বুক চিতিয়ে
ভারতবর্ষ মাথায় নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমি
আমি মাতঙ্গিনী!
শুষ্ক ত্বক, জীর্ণ শরীর হলেও বুকে আমার জ্বলন্ত আগুন
ইতিহাস আমায় নাম দিল বীরাঙ্গনা।
এখন আকাশে ভাসছি আমি
পর্বতের শিখরে রেখে আসছি সাফল্য
বিজ্ঞানে জ্ঞান মিশিয়ে করে চলেছি আবিষ্কার
শিক্ষায় দীক্ষায় বৃক্ষ হয়ে উঠছি
কে ওখানে? ননী বালা দেবী?
এস পিসিমা, এস।
এক্ষুণি তোমার কথাই ভাবছিলাম।
কী তেজ তোমার কণ্ঠে! ওহ!
মনে পড়ে যায় সব গো
নির্দ্বিধায় অন্যের স্ত্রী হয়ে উঠলে
সারা শরীরে লংকার ঝাল মেখেও হেসে উঠলে
মাটির নিচে পানিশমেন্ট সেলের অত অত্যাচারেও
বলে উঠলে, বলছি না। বলবো না।
গোল্ডির গালে দিলে চড়
আগুনের মত তেজ তোমার চোখে এখনো, পিসিমা?
ওই দেখো ঐদিকের তারাটাও জ্বলতে জ্বলতে
এদিকে আসছে।
চিনতে পারছো তুমি?
অস্ত্র আইনে প্রথম বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামী
দুকড়ি বালা দেবী।
পিসিমা, ভালো আছো?
সারাটা জীবন উৎসর্গ করলে দেশের জন্য
বলেছিলে, ছেলেরা পারলে মেয়েরা কেন নয়?
এ কী তোমার চোখেও জ্বলন্ত প্রতিবাদ যে দেখি এখনো!
কল্যাণী, বীণা, কল্পনা, সুহাসিনী সবাই এসেছ
ঘিরে ধরেছ আমার চারপাশ
আমি কি তবে ঘুমিয়ে ছিলাম এতদিন?
তোমাদের এ আগুন আমায় স্পর্শ করেনি কেন?
ওই তো… ওই তো লাঠি হাতে মিছিলের মুখে
মাতঙ্গিনী হাজরা
আমায় ডাকছে…
বলছে, প্রীতিলতা! ভারতবর্ষের মাটিতে এখন
স্বার্থ আর দ্বেষ
ভারতবর্ষের মেয়েরা এখনও কোথাও পড়ে পড়ে মরে।
ওদের শেখাতে হবে।
ওদের মুষ্ঠি শক্ত করতে শেখাতে হবে
ওদের জাগাতে হবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের সঙ্গে আমিও যাবো।
জ্বালা মুখ হয়ে কীভাবে অন্যায়ে লাভার উদগীরণ
ঘটাতে হয়, তা শিখিয়ে আসবো।
শুধু একটা মাস্টার দা খুঁজে আনা চাই!
আর অন্যায়ের হাতে ধরা পড়ার আগে খানিকটা পটাশিয়াম সায়ানাইড…
–––– —------- ––––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
No comments:
Post a Comment