'মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব…'

কবি- 'এসো এসো বিনা ভূষণেই, 
দোষ নেই তাহে দোষ নেই।
যে আসে আসুক ওই তব রূপ অযতন-ছাঁদে ছাঁদিয়ো।
শুধু হাসিখানি আঁখিকোণে হানি উতলা হৃদয় ধাঁধিয়ো' 

কবি-প্রিয়া- ইস! বড় কাব্যি যে আজ!

কবি- হ্যাঁ প্রাণে আছেন রবীন্দ্রনাথ।

প্রিয়া–আহ! মুখে ফের সিগারেট?

কবি–ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় মিলবে শরীর, এইতো নিয়ম প্রিয়ে

প্রিয়া–হাত ছাড়ো। আমি চলে যাবো।

কবি–আহা হা রাগ করছো কেন?
আজ এ অবিন্যস্ত তোমাকে সত্যিই অপূর্ব লাগছে।

প্রিয়া–কী যে তোমার অদ্ভুত ইচ্ছে…না সেজে আসতে হবে!

কবি– প্রকৃতি যে তোমায় এত সুন্দর সাজিয়ে পাঠিয়েছে
 'রজনীগন্ধা অগোচরে
যেমন রজনী স্বপনে ভরে সৌরভে,
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,...'

প্রিয়া-চলে তো আমায় যেতেই হবে। তবে দেরি কেন?
এবার ছেড়েই দাও। ভাসিয়ে দাও আমার স্মৃতি
তারপর যত ইচ্ছে সিগারেট খাও, কেউ দেখবে না!

কবি-কিছুই আর করার নেই, না?

প্রিয়া-চাকরি টা করলে না যে!

কবি- মানুষের হাতে মানুষ হাত ধরবে। এর সঙ্গে চাকরির কী সম্পর্ক?

প্রিয়া- খাওয়াবে কী? এ প্রকৃতি? আকাশ? বাতাস? নাকি ধোঁয়া?

কবি- ভালোবাসা।

প্রিয়া-(হেসে-)জানো না তুমি ভালোবাসা অভাবে কেমন জানলা দিয়ে পালায়?

কবি- আমার মাটি হতে বড় ইচ্ছে করে। আমার বুক থেকে রস নিয়ে জন্ম নেবে বৃক্ষ। সেই ছায়ায় বসবে তুমি এমন আলুথালু হয়ে। এমন অবাক তাকিয়ে থাকবে। রোদ্দুরের গন্ধ নেবে… বৃষ্টি পড়লে চুল খুলে দেবে। দুহাতে জড়িয়ে ধরবে প্রতিটি ফোঁটার আনন্দ। তোমার আঁচলের নীচে থাকবে গীতবিতান…

প্রিয়া- এসব কী বলছো আজ? কী হয়েছে তোমার? 
 
কবি- গত দু মাস মায়ের ঠোঁট সাদা। শুকনো মুখ। বাটিতে শুকনো মুড়ির উপর একটা বাতাসা দিয়ে পাশের বাড়ির কাকিমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, অপদার্থ! 

প্রিয়া- এসব বলো নি কখনো?

কবি–-রক্ত বিক্রি করলাম। এর থেকে সহজে উপার্জন আমার দ্বারা আর কী বা সম্ভব? ছাইপাশ যা লিখি কোনো প্রকাশক কখনো ছাপবে না জানি। ঘাস হয়ে আমার খাতায় রয়ে যাবে। বড় জোড় তোমার বিয়ের পরে আমার বিষাদ হবে…

প্রিয়া–এমন বোলো না গো! কান্না পায় যে!

কবি–পরশু শেষবার রক্ত দিতে গিয়ে জানলাম আমার শরীরের রক্ত আর দেওয়া যাবে না। পচন ধরেছে প্রিয়ে! রক্তে কর্কট বাসা বেঁধেছে। আমাকে না নিয়ে ওর শান্তি নেই!

প্রিয়া–কী বলছো এসব? এমন করে মিথ্যে বলা যায় বুঝি? শোনো আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না। সেই আনন্দ নিয়েই আজ এসেছি তোমায় বলবো বলে। বাবা বলেছেন, তাঁর অফিসেই তোমায় ব্যবস্থা করে দেবেন। অবশ্য মন দিয়ে কাজটি তোমায় করতে হবে ব্যাস।

কবি–আমায় সমাধি দিও ঠিক এইখান'টায়…

প্রিয়া–তোমার দুটো পায়ে পড়ি! এমন বোলো না আর!

কবি–খুব বেশি সময় নেই হাতে প্রিয়ে। রবীন্দ্রনাথ তোমার আমার। এ কটা দিন আমায় তুমিই শুনিও। বাবাকে বোলো, ওসব চাকরি করা আমার ধাতে এ জন্মে আর কুলালো না!

প্রিয়া–আমি আর সহ্য করতে পারছি না!

কবি–যেতে তো হবেই প্রিয়ে…

প্রিয়া–ইস! একসঙ্গে ভালোবেসে একলাই যাবে বুঝি? ওহে কবি! নারী যদি পুরুষকে ভালোবাসা না দিতে পারে, রহস্যের মায়াজালে জড়িয়ে না নিতে পারে, তবে কেমন করে তার শব্দেরা খেলা করবে আঙুলে, কলমে শুনি!
আমি তোমার জীবনেও আছি। মৃত্যুতেও। যে কদিন আছে বাকি, এসো জুড়ে জুড়ে থাকি…

'উড়াব ঊর্ধ্বে প্রেমের নিশান দুর্গমপথমাঝে
দুর্দম বেগে দুঃসহতম কাজে।
রুক্ষ দিনের দুঃখ পাই তো পাব--
চাই না শান্তি, সান্ত্বনা নাহি চাব।
পাড়ি দিতে নদী হাল ভাঙে যদি, ছিন্ন পালের কাছি,
মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব তুমি আছ আমি আছি।'

কবি–প্রিয়ে…

প্রিয়া–ভালোবাসি। ভালোবাসি।
এ মন্ত্রে আমরা বিবাহিত হলাম আজ থেকেই। নাও ধোঁয়া ফেলে আপাতত ধুলো দিয়েই আমার সিঁথি ভরিয়ে দাও! 

কবি–ভালোবাসি…ভালোবাসি…
—-----–––------

SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment