অবসর নেওয়া মাস্টারমশাই বিছানায় শুয়ে
ভাবলেন, এভাবে চলবে না।
সন্ধে নামলে স্টেশনের ধারে ধারের
অন্ধকার উপড়ে ফেললেন
ঘুম থেকে তুলে পথের হাতে তুলে দিলেন
একরাশ আলো।
বিজু বলে ওঠে, মাস্টার মশাই!
এ কার ছবি এনেছ আজ?
জুলি, মাধু ঝুঁকে পড়ল
ছবিটার দিকে
মাস্টার মশাই ছবিটা কপালে ঠেকিয়ে
বললেন, এটা বৈশাখ জানিস তো?
আজ পঁচিশেই তোদের মত
আলোদের কানে কানে গান ঢেলে দিতে
এসেছিলেন…
ইনি রবীন্দ্রনাথ।
মাধুর ভ্রু কুঞ্চিত,
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কে?
প্রতি সন্ধেয় তোরা এই পথে বসে
যার কথা দুলে দুলে পড়িস
কাগজ কুড়াতে কুড়াতে যার সুর গুনগুন করিস
মনখারাপ হলে আমার নাতনি সুধা তোদের
যে হাসি শুনিয়ে যায়
তাই রবীন্দ্রনাথ
মাস্টার মশাই এইটুকু বলেই চোখ বুজলেন।
তার পথ ছাত্রেরা চঞ্চল হয়ে উঠল।
রঘু এতক্ষণ চুপ ছিল। এবার উঠে দাঁড়িয়ে
বলল, আমি জানি মাস্টার মশাই!
আমি চিনি ওনাকে
মাস্টার মশাই চোখ খুললেন।
তাঁর ঠোঁটে আনন্দ উপচে পড়ল।
তুই চিনিস? বল তো?
বল তো, উনি কোথায় থাকেন?
কেন… বুকে থাকেন।
এইখানে…
হাত দিয়ে বুকের বাঁ দিক দেখালো রঘু।
সমস্বরে পথ-ছাত্রেরা বলে উঠল,
তুমি তো সে!
তুমি আমাদের রবীন্দ্রনাথ, মাস্টার মশাই!
তুমিই…
সারাদিন ভিক্ষের পরে সন্ধের দুলে দুলে পড়া,
তোমার নিজের হাতে রান্না ভাত, ডাল
আর গান গুলো…
তুমি আমাদের রবীন্দ্রনাথ, মাস্টার মশাই!
তুমি আমাদের বৈশাখ…
মাস্টার মশাই চোখ মেললেন আকাশে
মেঘের বুক অবধি শ্বেত গুম্ফ
ঘাড়ে নেমে এসেছে কেশ রাশি…
ঢিলেঢালা কাপ্তান… হাতে আলো।
মুঠো মুঠো আলো
কোথাও কোনো অন্ধকার নেই!
সুধা এসে ভাত ডাল আর পায়েসের উপর
রসগোল্লা ঢেলে দিল সবার পাতে আজ
খিলখিলিয়ে উঠে বলল,
'ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি
এসেছে রবির কর…'
—------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
No comments:
Post a Comment