এই সর সর…সরে যা বলছি!
ওই নোংরা গা নিয়ে এদিকে একদম নয়!
ছি! ছি! ছি!...
ট্রেনের মহিলা কামরা। নিত্যযাত্রীর ভিড়।
গোটা কামরা জুড়ে কিছু সাজগোজ করা প্রাণী।
মধ্যে অগোছালো আমি।
শব্দগুলো ভেসে আসার পর তাকিয়ে দেখি
বয়স কতই বা, এই সাত কিংবা আট
দুই গালে ক্ষত, চোখ রক্তবর্ণ। কটে যাওয়া চুল,
খালি পা।
আমি তার হাতে কয়েন দেওয়ার সময় কেঁপে
উঠলাম।
কেন ঈশ্বর! কেন এরা আসে? কী বা ক্ষমতা আমার?
যত সব আগাছার দল!...
কামরার দুটো সিটের প্রাণীগুলোর কুঞ্চিত ঠোঁট
বলে উঠলো।
শসা নেবেন, শসা…সস্তায় খান। গরমে ভালো থাকুন…
আর একটি…মেরেকেটে বারোর ঘরে পা
হ্যাঁ রে স্কুলে মিড ডে মিল…শ্রী ছেড়ে
কেন এসেছিস এখানে?
আমার বাপ মাকে কে খাওয়াবে? তুমি?
না না এসব কথা উচ্চারিত হয়নি কোনো পক্ষেই
ট্রেনের শব্দ হৃদয় আর সাজ দুলিয়ে ছুটে চলেছে।
এই বাচ্চা শোন!
কে ডাকলো?
কামরার একদিকে একটি মানুষ?
বিস্মিত হলাম ভীষণ!
মানুষটি সেই সাত, আটের মৃতপ্রায় তারাকে
ডাকল
বলল, শসা খাবি?
কী বলল মানুষটি?
শসা খাবি? নাহ আমি যেন শুনলাম, বললো
আয় জীবন নিয়ে যা…
বিপরীত দিকের সজ্জিত প্রাণীদের ভ্রুতে বক্রোক্তি।
বছর বারোর সংগ্রামী বিক্রেতা পকেটে টাকাটা
ভরে নিল যত্নে…
আমি আবার যেন শুনলাম,
বোনের খুব লাল চুড়ির শখ
ছেলেটি শসা খাচ্ছে। মানুষটি হাসছে।
আমি দেখতে পাচ্ছি, স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
ট্রেন ছুটছে আকাশগঙ্গার দিকে
ওই ময়লা পোশাকের রুগ্ন শিশুটির হাত ধরে
মস্ত বড় বৃক্ষ হয়ে নেমে যাচ্ছে মানুষটি
তার শিকড় ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা আকাশে
সালোকসংশ্লেষে প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে
স্টেশনের এক দুই তিন আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম।
বিপরীত দিকের প্রাণীগুলো লিপস্টিক, গয়নার প্রতিযোগিতা সামলাতে সামলাতে
ট্রেন থামার পরে ধুপ করে নেমে গেল নর্দমায়।
আমি যেন দেখলাম …
মধ্য বারোর শসা বিক্রেতা বোনের হাতে
লাল চুড়ি পরিয়ে দিতে দিতে
হো হো করে হেসে উঠে বলল,
শুনে যাও, শুনে যাও!
পৃথিবী এখনো বেঁচে আছে গো মেমসাহেব'রা!
—-----–––--------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
No comments:
Post a Comment