বজ্র-চাষী

হে সুন্দরী বঙ্গ আমার! লতায় পাতায় হাসি
মাটির ঘরে মাটির বুকে স্বপ্ন রাশি রাশি। 
হাওয়ার সঙ্গে ভাতের থালায় জ্যোৎস্না গলে পরে
মেয়ে আমার রাজকন্যে, ভিক্ষু রাজার ঘরে।

দমকা বাতাস এল হঠাৎ! 
মেয়ে চুরি হয়ে গেল।
আমি প্রবল ঝড়েই ছুটলাম দিকবিদিক
চিৎকার করলাম, খুকু…কোথায় তুই?
আমার ঠোঁটে ভয় ঠেকালো মানুষ
চুপ! আমাদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে দেখছিস না? 
একদম চুপ!

আমি আইনের দরজায় গিয়ে আমার রুগ্ন
শরীর ফেলে দিলাম। 
গড়িয়ে পড়লাম পায়ে
ভিতর থেকে আইন বিরক্ত হয়ে বলল
আহ! এখনো সকাল হয়নি
সকালে আসিস…

সূর্য উঠতেই ঘাটে মাঠে বাটে সরগরম পাড়া
বুড়োর ঘরে দরজা নেই কেন? ঠিক হয়েছে!
আরে ও মেয়ে কেউ নেয়নি
ওই তো খেঁদি পেঁচি চেহারা
কোনো হা ভাতের সঙ্গে নিশ্চয়ই পালিয়েছে

আমার চোখে শুকনো সময় অঝোর বয়ে যায়
পড়শীরা সব সন্ধে বেলায় পোড়া লাশটা পায়

ভেসে যাচ্ছিল ভাগ্যিস তারা অনেক কষ্টে…

হে সুন্দরী বঙ্গ আমার! লতায় পাতায় হাসি
আমি ভিক্ষু, কাঠ গুঁজে দি মুখে… 
আমার মেয়ে বাসি

এরপর আমার ঘরের দেওয়াল দিই ভেঙে
শুধুই মাটি, সূর্য, শিকড়, আলো
আমার অস্থি রাখি খুলে খুলে

আগল-বিহীন কন্যে আনি জড়ো করে করে
বলি, এই নাও আমার হাড়
বজ্র গড় এতে

ওরা বিস্মিত হয়।
ভয় পায়, না না তা কেন?
আমাদের জন্য আপনি মৃত্যু বরণ করবেন কেন?

আমি আমার কণ্ঠে তেজ মেশাই
সেই জোয়ান বয়সের তেজ
আমার দেশ মায়ের শিকল খোলার সময়
যে তেজে জ্বলে উঠেছিলাম
বলেছিলাম, প্রাণ থাকতে আর নয়!
সেই তেজ

'মহাবিদ্যা মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতি
মোহামোহা চ ভবতী মহাসুরী…'

দেবী যেমন, মায়া তেমন, মেধায় তুইই সেরা
মহতী অসুরশক্তি তুই! …
আগুন দিয়ে নিজের পাশে লাগিয়ে দে না বেড়া!

আমার কুঁড়ে সম্পূর্ণ ভেঙে গেল
মাটিতে আগল হয়ে রইল আমার কন্যে হাজার হাজার
জিভ গুলো ভয় পেল
লুকিয়ে ফেলল লোভ

ঘুমেরা আমার কাঁধে হাত রেখে বলল
ভয় পেও না তুমি! আমরাও জেগে আছি
প্রয়োজনে ডেকো
আইন বললো, না না আগে আমায় ডেকো

আমার মেয়েরা হাসল
ছুঁড়ে ফেললো ওদের 
চিৎকার করে বলে উঠল
শোনো! আমরাও এখন বজ্র হতে পারি

নম নম নম বঙ্গ আমার হাসি রাশি রাশি
লাশ হবে না কন্যে আমার কোনো…
আমি বজ্র চাষী!
—---------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment