শকুন্তলা

চা বাগানের কামিন বস্তিতে রোজই বসে
আসর।
একদিন মদের ঘোরে বাপ 
আমায় রাখল বাজি,
…লাগ লাগ লাগ শকুন নামে দশ ট্যাকা…

'শকুন্তলা' নাম রেখেছিল মা আমার
বিছানায় যন্ত্রণা নিয়ে আছড়াতে আছড়াতেও
আমায় বলতো, শকুন্তলা মা রে
এ অন্ধকারের ঠিক পরেই আছে
আলোর রেখা
ছায়াবৃত্ত টা তোকেই যে পেরোতে হবে রে মা!

মা আমার 'বর্ণপরিচয়' পড়েছিল
'সহজ পাঠ' 'বোধোহয়' ও…
মায়ের বাপ নিলামে তুলল তার ইজ্জত
আমার বাপের দয়া হল
ছিনিয়ে এনে চিনিয়ে দিল প্রেম

আমায় কোলে নিয়ে রোদ্দুরে পিঠ দিত মা
বাপ ঘাম নামিয়ে হাসি ফোটাতো ঠোঁটে
বলতো, কামিন হলেই বা কী!
তু আমাদের মেয়েকে বই শেখাইবি…

চা বাগানের মালিক মায়ের কোমর ধরল

বাপ খুন করল, জেলে গেল
মায়ের মরণ জ্বর হল। আমার জীবন পুড়ল।

বাপ ফিরে আসার আগেই আমার শরীরে
টলটলে নদী, মস্ত পাহাড়, গভীর গিরিখাত

বাপ ছুঁড়ে দিল আমায় চুলের মুঠি ধরে… 
মেয়েছেলে মানেই পাপ! মেয়েছেলে মানেই
সব্বনাশ!

আমি শকুন্তলা। 
আমার দুষ্মন্তর রাজ্য নেই
পান্তা আছে। 
চুপিচুপি দুপুর বেলা 
শ্মশান ধারের কুঁড়েয় গিয়ে রেখে আসি।
কোনো কোনোদিন লবন লংকা…

হাতের উপর হাত রেখে সে বলতো,
আংটি থাকুক বা না, দুষ্মন্ত কোনোদিন ভুলবে না
তার শকুন্তলাকে

কদিনের মধ্যেই দুষ্মন্ত চাকরি নিয়ে বিদেশে
রাজ্য গড়তে চলে গেল
পান্তা, কাঁচা তেঁতুল, স্মৃতি
পড়ে রইল শ্মশান পারে।

প্রাইমারীর সাঁওতাল দিদিমণি আমার বাপ 
জেল থেকে আসার
আগে আগলে রেখেছিল আমায়
বলল, শকুন্তলা তুই যা শিখেছিস
তাই নিয়ে শহরে যা! খেটে খা…

আমার বাপের বাজি চড়ছে
…লাগ লাগ লাগ শকুন নামে কুড়ি ট্যাকা…

তারপরের গল্প জানা চেনা
শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঝকঝকে আলো
চকচকে চোখ
ধবধবে ফর্সা বিছানা
নরম গদি, রাত জাগা কুকুর
ছিবড়ে মাংস, শকুনের আনাগোনা
কুড়ি ট্যাকায় হবে না বাবু
বান্ডিল বের করুন

বছর পাঁচেক পর
দুষ্মন্ত এল সব খুইয়ে একদিন
শকুন্তলা তুই এখানে?

আমি হাত থেকে ছুঁড়ে দিলাম বনফুলের আংটি
যা ভাগ! 
শকুন এমন ভিখিরীর পচা মাংস ছুঁয়েও দেখে না!
—---------------–-––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment