কর্কট ও আবির

সামনের মোড় থেকে বাঁয়ে তিন হাত গেলেই
সতী মায়ের থান। 
রোজ সন্ধেয় সেখানে পুজো হয়।
সতী মায়ের শরীরে প্রবেশ করেন দেবী
লোকে সিকি আধলা ষোলো আনা দিয়ে
জেনে নেয় ভূত ভবিষ্যৎ…
তা দিয়েই শাকটা মুলোটা কিনে 
দিনানিপাত করে সতী মা।

কাল গিয়েছিলাম আমি
ভক্ত সকল চলে গিয়েছিল,
আলো নেভানো।
চুপিচুপি সতী মায়ের আঁচলে দশ টা টাকা
রেখে জিজ্ঞেস করলাম, বলো তো মা
তোমার এ অভাব শেষ কবে হবে?

তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা
সতী মা ফুলে ফুলে কাঁদছিল…
বললো, আমার মত দুর্ভাগা আর কেউ নেই
পৃথিবীতে…

আমি হাসলাম। 
কী ভাবছ? আমার যন্ত্রণা কেন বলিনি ওকে?
সাহস পেত? 
সাহস আমি পেয়েছি শোনো…
আজ সকালে খুব জোরে জোরে রবীন্দ্রনাথ পড়ছিলাম
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
সামনের আস্তাকুঁড়ে দুটো কুকুর মুখোমুখি
ঝগড়া করছিল
পিঠে বস্তা নিয়ে কাগজ কুড়ানো লোকটা
কাজ থামিয়ে সেদিকে তাকিয়ে হেসে উঠল
লোকটা হাসল? 
তার খৈনির ছোপ ধরা দাঁতগুলোয় আমার তখন
চরম অবিশ্বাস
মনে হল, পাহাড় হাসছে
নদী হাসছে
হাসছে গোটা বিশ্ব
আমি ডেকে বললাম, শুনছ তোমার কে কে আছে আর?
সে বলল, কেউ তো নেই!
আমি বললাম, অভাব? খিদে?
সে এবার আরো জোরে হাসলো
বললো, ওগুলো তো সবার থাকে…
ধনী গরিব সবার…

কী শিক্ষা বলো তো!
ওই অক্ষর জ্ঞানহীন কাগজ কুড়ানো মানুষটি 
আমায় কত সহজ শিক্ষা
দিল বলো তো!

শেষ প্রহর এসেছে আমার।
আর বিষাদ নয়!
চোখ মোছো।
এ পৃথিবীতে এমন আরো হাজার কর্কট আছে
তাই বলে কি কান্না নিয়ে মরতে হবে?

হাসো বলছি!
খুব হাসো!
এই শোনো না একটা কথা…
এখন বসন্ত চলছে
খুব বেশি ঘি দিও না গায়ে

এক মুঠো আবির ঢেলে দিও।
—-------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

No comments:

Post a Comment