প্রথম যেদিন দেখি,
তার জামাকাপড়ের রঙও ফিকে
ময়লা তুলতে দীর্ঘদিন ধোয়ার ফলেই হয়ত
এমন।
চোখে চোখ রেখে খুব খুঁজলাম
কিন্তু কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙ নেই তাতে।
রাস্তার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পৌঁছে সে আমায়
বলল, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে চোখে দেখতে পাই না তো!
চোখে দেখতে পায় না সে,
কিন্তু রংহীন কেন হবে?
খটকা লাগল।
পৌঁছে গেলাম হৃদয়ে আড়াআড়ি ভাবে।
যাত্রাপথ অবশ্য সহজ ছিল না।
দীর্ঘকাল ধরে মাটি প্রস্তুত করে, জল দিয়ে
আলো দিয়ে তবে না গাছের সালোকসংশ্লেষ!
হৃদয়ে পৌঁছে দেখলাম শ্বাসকষ্টের কারণ
তার ফেলে আসা চালচিত্র
বললাম, পেয়েছ সংবাদ?
সে বলল, কীসের?
বললাম, এখন যে বসন্ত চলছে!
তার কালো চোখ ফুলেও এক ছোট্ট প্রজাপতি
এসে বসল হঠাৎ
আমার হাত চেপে ধরল
আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালাম তাকে।
পোশাকে শালের লাল, গোধূলির হলুদ,
পুকুরের কলমি…
সাহসের সামনে দাঁড় করাতেই
সে বলল এই তো আলোর রঙ!
কী যেন…
কী যেন…
আমি বললাম রোদ্দুর!
মুখে হাসির এক পশলা ঢেউ খেলে গেল তার
কিন্তু পরক্ষণেই…
চোয়াল শক্ত!
বলল, মানুষটা বড় মারত!
একদিন বৃষ্টিতে আগুন ধরিয়ে
পুড়িয়ে দিল দু চোখ
কোমরের চারপাশে তার হাত গোল করে
ঘিরে রেখেছে আমায়
আমি তার গালে হাত দিতেই বিষাদ সরিয়ে হেসে ফেললে, এ তো শিমুল!
আর ঠোঁট?
জানি না!
আমি স্পষ্ট ওর লজ্জার রঙে
বাতাবি ফুল দেখলাম।
নাকের ডগায় আমের মুকুল।
থোকায় থোকায় পলাশ এখন তার হৃদয় জুড়ে
যে রোদ্দুরকে মনে মনে চেয়েছিল এতদিন…
চোখ ভালো হতেই পেয়ে গেল তাকে।
রোদ্দুরের রঙ যে আলো!
আমার হাত ধরে রাস্তা পার করতে করতে
সে চেনা খুশি আমার কানের কাছে কলকল
করে উঠল, খুব চেনা তোমার এ স্পর্শ
কিন্তু কে তুমি?
আমি বললাম, সুখে আছো?
খুব খুব খুব!
উত্তেজনার রঙ হার মানিয়ে দেয়
ভোরের সূর্যকেও…
বললাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসলে চোখে
দেখতে পাই না তো…
সে বললে, আহা রে!
এগিয়ে গেলাম আমি।
তারপর সে ছুটে এল পিছু পিছু।
শুনছ! এত চেনা তুমি!
তোমার নাম টা বলে যাও!
হেসে বললাম, বসন্ত।
—----------
SUJATA MISHRA
No comments:
Post a Comment