উৎসর্গ পত্র

মামন দি'ই ই ই!...

মামন দি!

দাঁড়াও আরও একবার ডেকে নিই

মামন দি'ই ই ই!...


আমার পাঁজরের নীচে হৃদয়

উপরে বর্ম


হৃদয়ে তুমি

বর্মে কর্তব্য


চোখের নিচে কান্না

উপরে আগুন


প্রশ্বাসের পাশে

স্মৃতিরা আসে…


মামন দি'ই…!


জঙ্গলের ভিতরেও কেমন পলাশ ফুটেছে

শালের পা অবধি ডুবে বিকেলের রঙ

ফুলের রেনু 

ফাল্গুনী হাওয়া…


এমনই এক বসন্তে হলুদ খামে ভরা 

প্রজাপতি-চিঠি এসেছিল ডাকে।

কোণের দিকে সিঁদুর লাগানো


মামন দি

তুমি আমার থেকে ঠিক দুই বছর তিন মাসের বড়।


চিঠির ভাঁজ থেকে তখন ঝমঝমিয়ে বর্ষা নেমেছে


আমি কাঁচা আল মাড়িয়ে 

কনকচাঁপা ফুল কুড়িয়ে

তোমার কোঁচড়ে দিলাম।

তুমি চোখ নামালে।


ছুটতে ছুটতে গিয়ে বললাম, 

মামনদিকে বিয়ে করতে চাই!


তোমার বাবার চোখে আগ্নেয়গিরি

স্পর্ধা? শুষ্ক মরু হয়ে বসন্ত পেতে চাস?


মামন দি

ভারতবর্ষে মধ্য শিক্ষিত হওয়া মহাপাপ

ভারতবর্ষে শুষ্ক ভাগ্য নিয়ে জন্মানো অপরাধ!


তোমার সিঁথি চিরে বসন্ত নেমে আসার কিছু পরে

আমার গায়ে উঠল শক্ত পোশাক

হাতে রাইফেল

মাথায় স্বদেশপ্রেম

উৎসর্গপত্রে জীবন…


গতকাল আমার একলা দুপুরে 

ঘন মেঘ থেকে কান্না ঝরে পড়ল

আমি মুখ তুলে তাকাতেই প্রবল বিস্ময়!

তোমার শুভ্র মুখ, সিক্ত বুক!

উত্তাল ঢেউ!

নিস্তব্ধ বৃষ্টির আয়োজন


ভেজা পাহাড়ে স্নাত পায়রা সংবাদ রেখে গেল

তোমার আলোরা বড় ভঙ্গুর হয়ে এসেছে!

বিকল স্নায়ু 

তুমি গানের গায়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন রেখেছ মামন দি!



আজ আমার বুকে বিদ্ধ হচ্ছে জয়!

শত্রু শিবিরের পাশ থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলেছি 

শরীরটাকে…

হাতের মুঠিতে ধরে রেখেছি ঘাস


মুঠো খুললেই গড়িয়ে পড়বে

ছড়িয়ে পড়বে

প্রতি ঘাসের সবুজে আমি তোমায় লিখে রেখেছি

মামন দি!

লিখেছি…

আমার স্নায়ুতে মরু নয়! বসন্ত ফোটে।

রাত্রি নয়! সূর্য ওঠে…


মামন দি'ই ই ই…

তুমি বাঁচবে!


তোমার আত্মঘাতী গানের পাশে আমার হলুদ রোদ

তোমাকে জড়িয়ে ধরবে

তোমার পায়ে বেঁধে দেবে পায়েল।

আমার স্নায়ু, আমার আয়ু…

হৃদয়ে আলো…


মামন দি!

ও মামন দি!


আমার উৎসর্গপত্র টা যত্নে রেখো। 


দুই বছর তিন মাস বাদ দিলে 

সব স্পর্ধা কিন্তু

মরু নয়, কী বলো মামন দি!

—--------–----

SUJATA MISHRA

No comments:

Post a Comment