ব্রততী
কর্কট ও আবির
ওকে অত ধরতে নেই…
'হারাইয়া ফেলি চকিতে'
রামধনু মাস
সময় বড় কম
একলা বোশেখ
সমাধান
বিষাদ-বিলাস
কু ঝিক ঝিক ঝিক
পোষ্য পাহাড়
মৃত্যুকে যে চায় বাহু পাশে
সখা হে! বঁধু হে!
তাদের মৃত্যুর নাম দীর্ঘশ্বাস
নদীকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন ক্লান্ত তুমি?
সে বলল হয়েছি বৃদ্ধ।
সন্ধেকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার রোদ্দুর
কোথায় গেল?
সে বলল, বৃদ্ধ হয়েছি।
ভেঙে পড়ল অশোকের ডাল
জিজ্ঞেস করলাম, তুমিও বৃদ্ধ হয়েছ?
হো হো করে হেসে উঠল ঝড়
বলল, বৃদ্ধ হওয়ার আগে যারা ভেঙে যায়
তাদের মৃত্যুর নাম দীর্ঘশ্বাস।
—--------------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
মায়ে ঝি'য়ে
সেই মেয়েটার গরিব চাঁদ
পথের ধুলায় কাঁদে
মনের মধ্যে ছোট্ট আশা
মা তবু তার বাঁধে…
ওই যে দেখো প্রজাপতি
মাছরাঙা ওই গাছে
ওদের সঙ্গে ধার নিয়ে নাও
রঙ যে ওদের কাছে!
শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়া
রাত জোনাকির আলো!
দিনেও কত রোদ্দুর যে!
আদর ওতে ঢালো।
পদ্মপাতায় গান করছে
শিশির পুকুর ঘাটে
মায়ে ঝি'য়ে ওদের নিয়ে
বসব রঙের মাঠে।
উঠল খুকু খিলখিলিয়ে
চাঁদও মেশে তাতে
গরিব তো নয় সে এখন আর
রঙের রাজা রাতে!
পথের উপর রথ চড়ছে
দুটি খিদে মুখ,
মায়ের চোখে শ্রাবণ ধারা
মেয়ের স্বপন সুখ…
চাঁদের গায়ে মাছরাঙা রঙ
রোদ জোনাকি মিশে
মায়ে ঝিয়ে রঙ রাখছে
শুকনো দূর্বা শিষে।
____________
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
রবীন্দ্রনাথ বাবু
নিজে খাইনে অন্যকে সেজে দি! অথচ তোমার হাতে স্পষ্ট প্রমাণ…
দাঁড়াও দাঁড়াও তবে কি তুমি সব্যসাচী? 'পথের দাবী'র সে আগুন? সে ক্ষুরধার দৃষ্টি?
না না তা কী করে হবে? ভিজে বিড়ালের মত চোখ, এক গাল দাড়ি গোঁফ…এই মানুষ! বলো তো কেন এসেছ থানায়?
কী চুরি করেছ? নাম কী তোমার?
অপূর্ব কোথায় গেল এইসময়? লোকটার রিপোর্টটা লিখে নিচ্ছে না কেন?
এই…এই তুমি কোনো কারণে নিজের বউ কে হত্যা করে মাথা নিয়ে আসোনি তো?
দেখি, দেখি থলে টা! কী আছে ওতে? বর্ণপরিচয়? হা হা হা… লেখাপড়া শুরু করেছ বুঝি এই বয়সে? ভালো ভালো!
তা থানায় কেন এসেছ? নাম কী? কিছু কি চুরি করেছ?
শোনো আমি কিন্তু ঘুষখোর পুলিশ নই। আমায় কোনো সবজি বা তেল খাইয়ে নিজের নাম মুছতে পারবে না।
এ বগলের থলেটায় কী এনেছিস রে হতভাগা? জোলো মাছ না নারকেল?
কী বললি…কী বললি? তোর নাম রবীন্দ্রনাথ? হা হা হা তা বটে। তাঁর মতনই দাড়ি বটে, দেখি দেখি হ্যাঁ কপাল খানাও এক।
কিন্তু থানায় কী চাস বল না বাপু!
এই মানুষ কী বললে তুমি? আমি গেছি হারিয়ে!
টেবিলের উপর রেখে যাচ্ছ বর্ণপরিচয়! সহজ পাঠ!
কিন্তু আমি কেন হারালাম? কোথায় হারালাম? কবে হারালাম? পথ বেঁকে গেছে যেদিন? আলো নিভে গেছে যেদিন?
মুক্তি বন্দি হয়েছে যেদিন?
অপূর্ব…! অপূর্ব…শিগগির এস! আমার জন্য মিসিং ডায়রি করতে হবে! আমাকে খুঁজতে হবে!
কিন্ত সহজ পাঠে আমি ফিরবে কী করে বলে যান রবীন্দ্রনাথ বাবু!
রবীন্দ্রনাথ বাবু! কোথায় চলে গেলেন…
বলে যান…কোথায় গেলে আমাকে ফিরে পাবো?
—--------–-–––-------–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
হে পুরুষ!
হে পুরুষ! আলো নিভিয়ে দাও।
সঙ্গম রাখো ঘাসে।
হৃদয়ে উপুড় করো ভালোবাসা
চোখে সম্ভ্রম
হে পুরুষ! শিশিরেও রঙ দাও
বৃষ্টিতে স্নান
বজ্র হয়ে শাসন বাঁধো বুকে
ভীতি অতিক্রম
হে পুরুষ! নাও ছেড়ে দাও
লাঙল রাখো কাঁধে
ঘামে ঘামে লেখো সহন
মুক্তি সংসারে
হে পুরুষ! মাটিতে বোনো সুখ
শাখায় শাখায় আলো
প্রখর গ্রীষ্মে শান্ত নদী
রাত-প্রহরী দ্বারে।
এ পুরুষ! ওই যে ক্ষেতে
তোর লালসা ঝরে!
দিস পুড়িয়ে নরম শরীর
যৌনতার পরে…
পুরুষ! স্ত্রী কে মারিস?
এ অধিকার তোর?
পুরুষ! চটকে খাস
টকটকে লাল ভোর?
পুরুষ! কোকিল তাড়াস?
বসন্ত? গান?
পুরুষ! তোর কারণে হাহাকার?
স্বপ্ন খান খান?
নাহ রে পুরুষ! ওই যে দেখ
তপস্বী প্রেমের
ভালোবাসছে, কাঁদছে কাঁদছে
চাইছে নারী…
হে পুরুষ! এস! সঙ্গমের পরে
আমার গর্ভে এস
আমি তোমার ঘাস যেমন
মাও হতে পারি।
—--------–----–
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
বাবুই, চড়াই
বাবুই পাখির আকাশ ছিল, ডানা ছিল, গানের মত ঘর ছিল।
চড়াই বড় একলা! বিষাদের উপর শুয়ে ছিল।
একদিন চড়াই বাবুইয়ের ডানায় তার দুঃখ ঢেলে দিয়ে বলল, আমার পৃথিবী নেই, গান নেই, ঘর নেই।
বাবুইয়ের নরম মন গলে গেল। বাবুই চড়াইকে তার সুর দিল, স্বর দিল, ঘর দিল…
চড়াই গান পেয়ে বাবুইয়ের পাখায় পা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। সুর পুঁতল মাটিতে…
শ্রেষ্ঠ সুরকার হল চড়াই। আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত চড়াই!
বাবুই বলল, শোনো চড়াই আমি একটা গান লিখেছি। শুনবে?
চড়াই বলল, গান লিখেছ? ভাসিয়ে রাখো বাতাসে। আমি সময়ে শুনে নেব।
বাবুই গান হারালো, মান হারালো, বন হারালো।
ডানা কেটে রক্ত পড়লো তার। চড়াই শুধুই তার ঘর চায়, দানা চায়।
চড়াই কে ডাকে এস গল্প করি।
চড়াই তখন রোদ্দুরে সোনা খুঁজতে ব্যস্ত।
বাবুই রক্তাক্ত ডানায় চড়াইয়ের পা ধরল একদিন।
বলল, একদিন তুমি ঠিক চিলেকোঠা খুঁজে পাবে দেখো! অনেক সোনা, অনেক দানা…
চড়াই তার ভুল বুঝতে পারলো। বাবুই কে ফিরিয়ে দিল তার মন।
বাবুই কিছুদিন ক্ষত নিয়ে বসে রইল চড়াইয়ের ডাকের অপেক্ষায়, তারপর উড়ে গেল।
চড়াইয়ের এতদিনে বোধ হল,
বনে আর ধনে গাঁটছড়া বাঁধা যায় না।
—-----------------
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA
প্রবল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলাম সেদিন (দিদি নাম্বার ওয়ান)
প্রবল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলাম সেদিন।
দুহাত তুলে চিৎকার করছিলাম বাঁচাও বাঁচাও
তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলাম
তারপর মৃত্যু বুনছিলাম
হঠাৎ দেখি আমার পাশ দিয়ে ডুবে যেতে যেতে
উঠে দাঁড়াল একজন
আরো একজন তার কোমর অবধি অন্ধকারে
আরো একজন তার গলায় এসে দলা পাকিয়েছে
ভয়ংকর
আমি ওদের ডেকে বললাম, এই যে শুনছো!
আমার বড় যন্ত্রণা গো!
একটু তুলে দেবে?
ওরা হো হো করে হেসে উঠল। বলল, তবে আমাদের
গায়ে লেগে এসব কী?
ওরা হাসছে? এত'র পরেও?
তবে আমি কেন পারি না?
ওই তো দূর থেকে আলোর ঝলক আসছে চোখে
বাতাসে ভেসে আসছে গান
কত ফুল! কত আনন্দ!
নাহ! ওই আলোকে ছুঁতে হলে আমায় যে
অন্ধকার থেকে উঠতে হবে
আলোর দেবী সামনে এসে দাঁড়ালেন,
বললেন,
এই তো আমি আছি!
আমার মঞ্চে অন্ধকার কেই সিঁড়ি বানিয়ে নেওয়ার
রোদ্দুর নামিয়ে আনি যে!
তুমিও শিখে নিও, কেমন?
—-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)
বসন্ত
প্রথম যেদিন দেখি,
তার জামাকাপড়ের রঙও ফিকে
ময়লা তুলতে দীর্ঘদিন ধোয়ার ফলেই হয়ত
এমন।
চোখে চোখ রেখে খুব খুঁজলাম
কিন্তু কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙ নেই তাতে।
রাস্তার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পৌঁছে সে আমায়
বলল, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে চোখে দেখতে পাই না তো!
চোখে দেখতে পায় না সে,
কিন্তু রংহীন কেন হবে?
খটকা লাগল।
পৌঁছে গেলাম হৃদয়ে আড়াআড়ি ভাবে।
যাত্রাপথ অবশ্য সহজ ছিল না।
দীর্ঘকাল ধরে মাটি প্রস্তুত করে, জল দিয়ে
আলো দিয়ে তবে না গাছের সালোকসংশ্লেষ!
হৃদয়ে পৌঁছে দেখলাম শ্বাসকষ্টের কারণ
তার ফেলে আসা চালচিত্র
বললাম, পেয়েছ সংবাদ?
সে বলল, কীসের?
বললাম, এখন যে বসন্ত চলছে!
তার কালো চোখ ফুলেও এক ছোট্ট প্রজাপতি
এসে বসল হঠাৎ
আমার হাত চেপে ধরল
আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালাম তাকে।
পোশাকে শালের লাল, গোধূলির হলুদ,
পুকুরের কলমি…
সাহসের সামনে দাঁড় করাতেই
সে বলল এই তো আলোর রঙ!
কী যেন…
কী যেন…
আমি বললাম রোদ্দুর!
মুখে হাসির এক পশলা ঢেউ খেলে গেল তার
কিন্তু পরক্ষণেই…
চোয়াল শক্ত!
বলল, মানুষটা বড় মারত!
একদিন বৃষ্টিতে আগুন ধরিয়ে
পুড়িয়ে দিল দু চোখ
কোমরের চারপাশে তার হাত গোল করে
ঘিরে রেখেছে আমায়
আমি তার গালে হাত দিতেই বিষাদ সরিয়ে হেসে ফেললে, এ তো শিমুল!
আর ঠোঁট?
জানি না!
আমি স্পষ্ট ওর লজ্জার রঙে
বাতাবি ফুল দেখলাম।
নাকের ডগায় আমের মুকুল।
থোকায় থোকায় পলাশ এখন তার হৃদয় জুড়ে
যে রোদ্দুরকে মনে মনে চেয়েছিল এতদিন…
চোখ ভালো হতেই পেয়ে গেল তাকে।
রোদ্দুরের রঙ যে আলো!
আমার হাত ধরে রাস্তা পার করতে করতে
সে চেনা খুশি আমার কানের কাছে কলকল
করে উঠল, খুব চেনা তোমার এ স্পর্শ
কিন্তু কে তুমি?
আমি বললাম, সুখে আছো?
খুব খুব খুব!
উত্তেজনার রঙ হার মানিয়ে দেয়
ভোরের সূর্যকেও…
বললাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আসলে চোখে
দেখতে পাই না তো…
সে বললে, আহা রে!
এগিয়ে গেলাম আমি।
তারপর সে ছুটে এল পিছু পিছু।
শুনছ! এত চেনা তুমি!
তোমার নাম টা বলে যাও!
হেসে বললাম, বসন্ত।
—----------
SUJATA MISHRA
লক্ষ্মীছাড়া
বাতাবি ফুল, আমের মুকুল
শাল পলাশের রঙের হাট
রাঙা ধুলোয় লুটিয়ে ছেলে
যুদ্ধে যাবে তেপান্তরের মাঠ…
কুমড়ো মাচায় ফুল ফোটে নি
লাউয়ের ডগা মোচড়ানো
লুটানো ছেলের বাপটা শহীদ
বসন্ত, তুমি তা কি জানো?
এক পলাশী দুয়ার ধরে
এক ভর পোয়াতি সন্ধে
বসন্ত, তুই রাধার রঙে
আর একটু মন দে…
বৃষ্টি পড়ে বাতাস ওড়ে
আদুল প্রেমে পড়লে ঝুপ
নিজেকে পোড়ায় গন্ধ লুকায়
বসন্ত, ওর নাম কূপ?
গঙ্গা নামছে প্রবল বেগে
শিবের জটায় বন্দি তা
শাল পলাশেও ফুল ফুটেছে
কচি ঘাসে মাড়িয়ে যা…
গল্পগুলোর আলগা সুতো
বাঁধছি না তাই শক্ত করে
বসন্ত তুই কি চিনিস তাকে
প্রেমের জন্য যে মরে?
ওই দেখো ফুটছে গোলাপ
সূর্য উঠছে মিষ্টি ভোরে
এ বসন্তেই কাক ঠকবে
কোকিল নেবে তার ঘরে।
বাতাবি ফুলের সুবাস যত
মেঘের আনাগোনায়
বসন্ত, তুমি কান্না শুনছ?
লক্ষ্মীছাড়া শোনায়…
গত দোলে রঙ চুবিয়ে
ঢেলেছিল ওর প্রেমিক
মুছে দিয়েছে পরক্ষণেই
ইরেজার ছিল ঠিক…
সেই মেয়েটা লক্ষ্মী ছাড়া
আমিও বৃদ্ধ জীর্ণ মালি
তবুও কিন্তু তোমার গায়ে
ফাগুন চৈত আগুন ঢালি।
লক্ষ্মী ছাড়ার নাম রেখেছি
ঝর্ণা পর্ণা আমার বাগে
ও আমায় বসন্ত বলে
হাসিতে রাশিতে জোয়ার ফাগে।
—--------------
SUJATA MISHRA
মেয়ের মতন মেয়েই না হয় হোক
ঠাম্মা বলল, কুলের বাতি চাই,
মা বলল, মেয়েই আমার খোকা!
বাবা বলল, শর্ট হেয়ার, শার্ট প্যান্ট,
ছেলের মতই বুদ্ধি মেয়ের চোখা।
পিসি বলে, দাপিয়ে চলতে নেই,
মেয়েদের যে আগল অন্তঃপুর!
আমি তখন আমার বুকের ঘরে
সোনার রঙে আঁকছি রোদ্দুর।
মাসি বলল, রাঁধতে পারিস তুই?
সেলাই, ফোঁড়াই এসব শেখাও চাই!
আমার মনে তখন খুশির আলো,
আনন্দেতে দু-হাত তুলে গাই।
মা বলল, দেখিয়ে দে তো সোনা!
মেয়ে হলেও তুই'ই আমার ছেলে!
আমি তখন লম্বা বেণী বেঁধে
প্রশ্ন লিখি স্বপ্ন গুলো ফেলে…
মেয়ে হলে হতে হবে ছেলে?
ছেলে হলে মেয়ে কেন নয়?
মেয়ে হলে নিভল কুলের বাতি?
ছেলে হলেই সর্বত্র জয়?
আমি হব আমার মত মাগো!
ফুল পাখি বা আগুন, ফাগুন চোখ…।
তোমার খুকু, মেয়েই বরং থাক।
মেয়ের মতন মেয়েই না হয় হোক!
ভূমির মতন সৃষ্টিশীলা হোক!
মাটির মতন মেয়েই না হয় হোক!
—--------------
SUJATA MISHRA
উৎসর্গ পত্র
মামন দি'ই ই ই!...
মামন দি!
দাঁড়াও আরও একবার ডেকে নিই
মামন দি'ই ই ই!...
আমার পাঁজরের নীচে হৃদয়
উপরে বর্ম
হৃদয়ে তুমি
বর্মে কর্তব্য
চোখের নিচে কান্না
উপরে আগুন
প্রশ্বাসের পাশে
স্মৃতিরা আসে…
মামন দি'ই…!
জঙ্গলের ভিতরেও কেমন পলাশ ফুটেছে
শালের পা অবধি ডুবে বিকেলের রঙ
ফুলের রেনু
ফাল্গুনী হাওয়া…
এমনই এক বসন্তে হলুদ খামে ভরা
প্রজাপতি-চিঠি এসেছিল ডাকে।
কোণের দিকে সিঁদুর লাগানো
মামন দি
তুমি আমার থেকে ঠিক দুই বছর তিন মাসের বড়।
চিঠির ভাঁজ থেকে তখন ঝমঝমিয়ে বর্ষা নেমেছে
আমি কাঁচা আল মাড়িয়ে
কনকচাঁপা ফুল কুড়িয়ে
তোমার কোঁচড়ে দিলাম।
তুমি চোখ নামালে।
ছুটতে ছুটতে গিয়ে বললাম,
মামনদিকে বিয়ে করতে চাই!
তোমার বাবার চোখে আগ্নেয়গিরি
স্পর্ধা? শুষ্ক মরু হয়ে বসন্ত পেতে চাস?
মামন দি
ভারতবর্ষে মধ্য শিক্ষিত হওয়া মহাপাপ
ভারতবর্ষে শুষ্ক ভাগ্য নিয়ে জন্মানো অপরাধ!
তোমার সিঁথি চিরে বসন্ত নেমে আসার কিছু পরে
আমার গায়ে উঠল শক্ত পোশাক
হাতে রাইফেল
মাথায় স্বদেশপ্রেম
উৎসর্গপত্রে জীবন…
গতকাল আমার একলা দুপুরে
ঘন মেঘ থেকে কান্না ঝরে পড়ল
আমি মুখ তুলে তাকাতেই প্রবল বিস্ময়!
তোমার শুভ্র মুখ, সিক্ত বুক!
উত্তাল ঢেউ!
নিস্তব্ধ বৃষ্টির আয়োজন
ভেজা পাহাড়ে স্নাত পায়রা সংবাদ রেখে গেল
তোমার আলোরা বড় ভঙ্গুর হয়ে এসেছে!
বিকল স্নায়ু
তুমি গানের গায়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন রেখেছ মামন দি!
আজ আমার বুকে বিদ্ধ হচ্ছে জয়!
শত্রু শিবিরের পাশ থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলেছি
শরীরটাকে…
হাতের মুঠিতে ধরে রেখেছি ঘাস
মুঠো খুললেই গড়িয়ে পড়বে
ছড়িয়ে পড়বে
প্রতি ঘাসের সবুজে আমি তোমায় লিখে রেখেছি
মামন দি!
লিখেছি…
আমার স্নায়ুতে মরু নয়! বসন্ত ফোটে।
রাত্রি নয়! সূর্য ওঠে…
মামন দি'ই ই ই…
তুমি বাঁচবে!
তোমার আত্মঘাতী গানের পাশে আমার হলুদ রোদ
তোমাকে জড়িয়ে ধরবে
তোমার পায়ে বেঁধে দেবে পায়েল।
আমার স্নায়ু, আমার আয়ু…
হৃদয়ে আলো…
মামন দি!
ও মামন দি!
আমার উৎসর্গপত্র টা যত্নে রেখো।
দুই বছর তিন মাস বাদ দিলে
সব স্পর্ধা কিন্তু
মরু নয়, কী বলো মামন দি!
—--------–----
SUJATA MISHRA