গোধূলি-কিয়া

প্রবল বৃষ্টি শুরু হল হঠাৎ
সঙ্গে ছাতা ও নেই আজ।
সামনের বাড়িটার রোয়াক ফাঁকা
আপাতত থেমে যাওয়াই সমীচীন মনে হল
বৃষ্টি একটু কমলেই না হয় ফেরা যাবে নিজ গৃহে

শুনশান পথ। আমার চুল থেকে বৃষ্টির জল
গড়িয়ে পড়ছে পায়ে
বাতাস এসে স্নায়ুকে ঘুম দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই প্রবেশ করলাম স্বপ্নে…

ইস! একেবারে ভিজে গেছেন যে!
শরীর খারাপ করবে কিন্তু!

কোথা থেকে এল বাক্য দুটো?
কোন্ অজানা থেকে?
কোন্ অচিন পুর থেকে?
গুহার অতলে লুকিয়ে থাকা প্রাগৈতহাসিক কোনো
সভ্যতা থেকে? 
নাকি কোনো ঝর্ণা? 
অরণ্য হতে পারে কি?
বৃষ্টিতে ওদের আনন্দই তো সবচেয়ে বেশি
তাই কি এ স্বর এত মিষ্টি?
এমন ভেজা স্বপ্নে এত সুখ থাকে? 

একটা গাড়ি চলে গেল সামনের রাস্তায় দাঁড়ানো
জল কেটে কেটে…
স্নায়ু সজাগ হল আমার
স্বপ্নই ছিল বটে! 

সন্ধের একটু পরে কলেজ থেকে ফিরে এল আমার মেয়ে।
আমার গোধূলিতে তখনো সেই স্বপ্নের রেশ
মনে হচ্ছিল সে স্বরের জন্য হাজার বৃষ্টিতে ভিজে
তপস্যা করা যায়
সে স্বরের জন্য লক্ষ মেঘ মাথায় নেওয়া যায়
সে স্বরের জন্য অযুত নিযুত বার স্বপ্ন দেখা যায়
আমার স্নায়ুকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিক বাতাস
আমি আবার ছুটে যাই সেই বাড়ির রোয়াকে…

তুমি নাকি আজ তিথি দের বাড়ির সামনের 
রোয়াকে দাঁড়িয়ে ছিলে বৃষ্টির সময়?
মেয়ের কথায় নড়ে উঠল আমার শরীর।
হ্যাঁ। তুই কী করে জানলি?

তিথির মা তোমাকে ডাকছিল।
তুমি নাকি কোনো সাড়াই দাওনি?
তিথি বলছিল।

আমার মেয়ের বন্ধু তিথি।
ও স্বর তবে তার মায়ের? 
এক আকাশ সুখ যে স্বরে
সেই স্বর আমার মেয়ের চেনা!
সেই স্বর পার্থিব? 

বাবা জানো! তিথির বাবা ওর মাকে প্রাণে মেরে
দিতে চেয়ে অ্যাসিড ছুঁড়েছিল…
ওর মা এক ভয়ঙ্কর মুখ নিয়ে ঘরের কোণে
লুকিয়ে থাকে
তিথি বলে, আমার মাকে আমি এক তুফান খুঁজে দেব একদিন
যার বুকে মাথা রেখে মা ভেসে যেতে পারবে
নিশ্চিন্তে…
তিথি ওর মাকে ভালো সূর্য দেখাতে চায় 
তিথি ওর মাকে ভালো পুরুষ দেখাতে চায়
বন্ধু খুঁজে দিতে চায়

মেয়ে আরো বলছে…
তিথির মা কোনোদিন সুখ পায়নি জীবনে
আর আমি মা পাইনি
ও বাবা! 
চমকে উঠলাম আমি!
আমার কলেজে পড়া মেয়ে আমার গোধূলি বেলায় বসে
এ কী সব বলছে আমায়?

বাবা! তিথির মায়ের নাম বৃষ্টি।

আমি চুপ করে আছি তখনো…
না থাক তার রূপ
স্বর্গীয় সুর যে আছে তার!
কানের ভিতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করা বাক্য দুটি
ইস একেবারে ভিজে গেছেন যে!
শরীর খারাপ করবে কিন্তু!

এবার আমার বিস্মিত কাঁধ ঝাঁকালো আমার মেয়ে

তিথির মা খুব ভালো…
ও বাবা! তুমি বৃষ্টির তুফান হবে গো?
—------------–―
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

সূর্য

"The tree of Liberty must be refreshed from time to time with the Blood of patriots and tyrants! …" Thomas Jefferson

ওরে কে আছিস শত্রু তোরা মৃত্যু নাচন নাচ!
বীরের রক্তে সতেজ সবুজ স্বাধীনতার গাছ।

ওর নাম দিলাম নটরাজ। ক্ষুদিরাম দিলেও হত
কিন্তু মাত্র আঠারোয় আগুন নিভতে দেওয়া চলে না
দেশ তো আমার মা! সেই প্রলয়ের সতীই না হয় হল!

চারিদিকে ভয়ংকর অন্ধকার! 
আধমরা চিৎকার করছে বাঁচতে চাই বাঁচতে চাই বলে
কচুপাতার উপরে ঘর বাঁধতে চেয়ে বারবার পিছল
খেয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন

ওর নাম দিয়েছি শিব। হাতের তালুতে হিসেব
পায়ের পাতায় দৌড় গলায় গম্ভীর নাদ…
কে আছো সঙ্গে? 
পাহাড় উঠছে কেঁপে
সমুদ্র উঠছে ফুলে
দারুণ গতিতে বয়ে চলেছে বাতাস

অন্ধকার গিজগিজ করছে। আগাছার দল 
মাথা চুলকোচ্ছে, দাঁত কিড়মিড় করছে
কোনোখানে আলো নেই! 
সবাই এদিকে ওদিকে ব্যস্ত
টানাটানি, হেঁচকা হেঁচকি ভাঙা চোরা…
কে আছো সঙ্গে?
উত্তর নেই।


ঢং ঢং করে ঘণ্টা পড়ল। গান নেই, মান নেই
শিক্ষা নেই, সত্যি নেই
ভালোর জন্য আলো নেই
বসার জন্য ছায়া নেই
মায়ার কোলে আকাশ নেই
ঘন্টা বাজলেই মুখে লালা ঝরে
বিজ্ঞানী ইউরেকা বলে লাফিয়ে ওঠেন

গাছে গাছে বাসা নেই
মার মুখে ভাষা নেই
বাম চোখ বলে আমি জানি। 
ডান চোখে হাতছানি…এস। আমার আছে!
এক ভ্রু বলে অরাজকতা
অন্য ভ্রুয়ের দুঃখ বিলাস

খাবলে খুবলে খায় ওরা
লুটে পুটে নেয় চেটে
মেঘ নামে বৃষ্টি আসে
রোদ কুড়োতে ভুলেই যে যায় ওরা!

ওর নাম দিয়েছি নটরাজ। নৃত্যে নৃত্যে
ভাঙছে ধ্বংস! আগুনে আগুনে ঝলসে নিচ্ছে
নিজেকেও…
বলছে কত রক্ত চাও! আমার নাও!
ভিজিয়ে দাও ওই স্বাধীনতার বেদি
তারপরে থেমে যাও…
তারপরে থেমে যাও।

এত অন্ধকারে বড় বমি পায়! গা গুলিয়ে ওঠে।
তবু গোগ্রাসে কালো খায় ভবিষ্যত
জিজ্ঞেস করে, আমরা বাঁচবো তো?

ওর নাম ক্ষুদিরাম দিতেও পারতাম
অথবা কর্ণ
কিন্তু আমি ওকে নটরাজই রাখলাম। 
প্রলয়ের পরেও ওকেই চাই আবার প্রবলে
স্বাধীনতার বৃক্ষের নীচে বধ করবে শত্রু
বুকের রক্ত দিয়ে রচনা করবে বোধি ক্ষেত্র 

স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এসে এ পৃথিবীতে পথ 
বুনতে পারলেই ওর নাম দেব সূর্য।
—------------–-–––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

মেঘ বৃষ্টি কথা

তোমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে খুব? 
জরায়ু চিরে প্রসব করছো আমায়
মুখ যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট 
গম্ভীর তোমার স্বর
তবুও আলোর হাসি হাসছ মাগো! 
বলছ, মা হতে গেলে এ টুকু ব্যথা, ব্যথা কীসের?

ঝড় বুঝি এসে গেছে বাইরে? 
খুব ডাকাডাকি করছে তাই না?
ও মা! বজ্র কে এবার খুব বকে দিও তো!
আমার সঙ্গে খেলতে এসে ও কেন আগুন হয়ে পড়ে?
কী বলছ? ওকে বলে দেবে? 
হ্যাঁ মা। ওকে বোলো অন্যায় না করলে কাউকে যেন
ও আঘাত না করে।

ওই তো দূরে গরু বাছুর ঘরে নিয়ে যাচ্ছে চাষীর বউ
ইস! দাও না ছেড়ে আমায়! 
ওদের একসঙ্গে ভিজিয়ে দিই সারা
চাষীর বউয়ের কান্না খানিক লুকিয়ে নিই মা
আমার আদর কোলে!
না না মা! ওই দেখো পিঁপড়ে দের ডিম নিয়ে যাওয়া
শেষ হয়নি এখনো…
আর একটু পরেই না হয় জন্ম দিও আমায়!

ধুলো খুব কাঁদছে সকাল থেকে।
আমায় জড়িয়ে ধরছে আরো
চুমোতে চুমোতে অস্থির করছে! 
ওকে বোঝাতেই পারছি না…
ও বলছে মাটিতে গেলেই আবার বেদনা
যন্ত্রণা…
যেমন করে দুঃখ গায় আগুন
জলের স্রোতে ভেসে
কিন্তু ও না গেলে কোথায় তবে খেলবে চাঁদ
নামবে স্বপ্ন
কেমন করে পা রাখবে ঘাস?
ওকে বলো না মা! বোঝাও না!

তোমার ব্যথা জুড়িয়ে আসছে মা?
আমার যে জন্মের সময় একেবারে কণ্ঠে এইবার!
ঝমঝমিয়ে পড়বো ভুঁয়ে
এ গাল ও ঠোঁট কপাল ছুঁয়ে 

ও মা! মা গো আমার যাওয়ার সময় হল
দাও বিদায়…

তুমি কাঁদছ মা?
এই তো নিয়ম মা গো!
পৃথিবীর ভালো কাঁধে নিয়ে
একরাশ আলো হয়ে আমার প্রাণ
ঢেলে দেব ঘাসে বাসে 
পাহাড়ের কোলে…

কান্না ধুয়ে নিয়ে চলে যাবো সমুদ্রে
অভাব গুলো নদীর বুকে রাখবো গেঁথে
লাউ পাতার সুখ হবো
কুমড়ো শাকে গান
যাই মা এবার?
ওই দেখো ঝড় কেমন বৃষ্টি বৃষ্টি বলে জোরে জোরে ডাকছে! 
মা! আমি গেলাম…

মৃত্যুর পরে আমার ভেসে যাওয়া শরীরের নাম রেখো সৃষ্টি…
—----------–––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

লোকটা বড্ড শক্ত!

লোকটা বড্ড শক্ত!

অনেকটা মরুভূমির মত

লোকটার বুকের বাম দিকে হৃৎপিণ্ড রক্ত মাপে-

সব বিন্দু ঘামের জন্য…


শিরা, ধমনী, স্বভাব… বন্য


লোকটা বড় অদ্ভুত! 


একদিন তার ঘরে চাঁদ ছিল

ছাদের উপর রোদ্দুর

হাত বাড়িয়ে পেড়ে নিত স্বপ্ন


একদিন লোকটার বন্ধু ছিল! 

একদিন লোকটার প্রেম ছিল!


লোকটা যেন কেমন! 

হৃৎপিণ্ডের ভিতর যে মন আছে তার

তা যেন সবসময় লুকিয়েই রাখবে!


দিন রাত পরিশ্রম করে লোকটা।

মেরুদণ্ড ঋজু…

চোখের সামনে ধ্বংস দেখলে লোকটা

ক্ষেপে ওঠে! 

নটরাজ হয়ে ওঠে!

আরো আরো ধ্বংস করে দেয় ধ্বংসকে!


লোকটার কী যেন এক হয়েছে আজকাল

অতীত থেকে ছেঁকে আনে বেঁচে থাকার কারণ


কিন্তু লোকটা জানে না …

বিকেল কখনো নিস্তেজ হয় না!


তার পরে যে আলো নেমে আসে

তার নাম গোধূলি।


রাত নামলেই ঝিকিমিকি তারা

জ্যোৎস্নার কথকথা…

স্বপ্নের নাচন


লোকটাকে কেউ একটু বলে দেবে গো,

গভীর রাতেও শিশু ভোর স্বপ্নে আসতে পারে?


শুধু হৃদয়-উঠোনে সেই শিশুর জন্য

একটা খেলাঘর বুনে রাখা 

লোকটার বড় দরকার!

      –

SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি যাই মা ওর কাছে?

মেঘ জড়িয়ে আছে দিন। কদম তলার নিচে
বাঁশি হাতে একলা বসে ওই যে কবি এক
কলোর গায়ে আলো দিচ্ছে এঁকে
কিন্তু দেখো! মাঝির নাওয়ে একলা অবসর
আমি যাই মা ওর কাছে?

ওর কি আর কাজের সময় আছে?
এক পৃথিবী ঐতিহাসিক শোক যে ওর
অভাব সমেত শূন্য হৃদয়
বর্ষা দিয়ে বুনবে মালা, পরাবে চন্দন
ভাসিয়ে দেবে খরা…এমন বনস্পতি ও কোথায় পাবে?

তোমার মেয়ে সঙ্গে তার যাবে?
দেদার বুকে লিখবে নিজের নাম
ইতিহাসকে রাখবে ঢেকে বৃষ্টি দিয়ে
বজ্র দিয়ে ভয় পাইয়ে…
বলবে, আমার কিন্তু আকাশ আছে
মাটির বাড়ি ঘর…

তুই পারবি মা রে? তবে যা মা যা! পৃথিবী আপন কর।
মেঘ জড়িয়ে আছে দিন। লিখছে কবি বর্ষা মঙ্গল
মাঝির এখন সময় শুধু সুর বাইবার
যা মা যা! জন্ম দে মা বৃষ্টি ধোয়া রোদ্দুর!
তোর জন্যই বিদ্যুতে আজ স্নেহ অতুল জাগে

কী যে বলো মাগো! রাঙা হই পূর্ব রাগে!
—-------–----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি নজরুলের মা

'শূণ্যে মহা আকাশে
তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে
ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।'

মাঝি ভা…ই! খাড়াও! খাড়াও মাঝি!
আমাগো লইয়া যাও!
হগ্যলে কয়, শরিল ডুবাইলে মিলাইমু
তাগো সনে…
ছাইড়া যাইও না ভাই
লইয়া যাও আমাগো… 

দুয়ারে ডাক দিয়া কয়েছিল হে'য় 
ফুল শুকাইয়া আইসতাছে
দেখছ?
আমি হে'র মুখখান বুকে লইয়ে কত্ত কান্দিলাম
নাই রে বাছা!
হদই গাঙে শাপলা
হাস্নুহানা উঠোনে
হাইসছে খেইলছে
পোলা!… চাইয়ে দেখ ধুলা মাইপছে তোগো অন্নপূর্ণা!

কী কও মাঝি ভাই?
হে কেডা?
হে আমাগো সোনার সকাল 
আলোর রাইত
স্বপন লয় মাঝি
স্বপন লয়
হেয় আমার প্রাণের প্রিয়
পাগল পোলা

"তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পাণ্ডুর হল আকাশের চাঁদ,
কেঁদে নদীজল করুণ বিষাদ
ডাকে, ‘আয় ফিরে আয়!’..."

ওই ডাকে, শুনছ নাই?
গাঙ ডাকে
স্রোত ডাকে
তোহার নাও ডাকে

আমারে পৌছাইয়া দে মাঝি!
মাঝখানে যায়ে ঢেউ দিয়া ঘর বানাইমু
আদর দিয়া পায়স
আসন পাতি, পাঙ্খা লইয়া তারে ডাকুম…
'সেই যে গেলি অন্তর খানি দিয়া কবর…'

আমাগো কেশে জটা
আঁচল লুইটা পড়ে 
দেখ মাঝি দেখ হে'রে খুঁইজা খুঁইজা
চক্ষে কেমনে রক্ত ঝরে!

অই অই… বংশী বাইজলো
শুনলা তুমি? শুইনতে পালি?
আমারে ডাইকল
হেয় আমারে আইজ ডাকৈল
'বাঁশি বাজাইয়া লুকালে তুমি কোথায় —'

ফুল গুলি সইত্যই শুকাই গেছে গা
ধূলোয় ধূলোয় হেলাফেলা

'যে ফুল ফোটালে সে ফুল শুকায়ে যায়…'

শরীল ডুবাইলে তগো সনে মিলিব আইজ
জিগাইব অরে, বাছা লোতুন ফুল ফুইটবে কবে?

হগ্যলে কয়, তোমার বাছা ছাইড়া গ্যাছে মূল
তয় আন্ধার বালুতে গড়াগড়ি খায়

মাঝি ভাই…!
খাড়াও! খাড়াও!
মোর পোলা ওই যে হে'রো শিশুটির সনে
মেঘে মেঘে কইরছে খেলা
শূইণ্যে…

ওই শিশুটি প্রলয় ল্যাখে
আলয় রচে
ফুলকে লৈয়ে নিভায় জ্বালায়

'খেলিছো, এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে
খেলিছো ..
শূণ্যে মহা আকাশে…'

ওরে যে সৃষ্টি করে
হে' ই মোর প্রাণের ধন

এখনি বৃষ্টি নাইম্বে
আমাগো ভিজায়ে হে'য় কহিবে, এত দেরি ক্যান মা?
মরন রে কভু আমি ডরাই?
দে মিলায়ে দে ভাই
দে মিশায়ে দে

হগ্যলে কয় শরীল মিলাইলে…

আমারে চিনলা না মাঝি?
আমি নজরুলের মা।
—--------------––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

মেঘ বৃষ্টির রূপকথা

আর একটু পরেই ঝরে পড়বো আমি! আমার সঙ্গে মিলবে এসে ঝড়, বিদ্যুৎ! বজ্র এসে দুষ্টুমি করে খুব!
ও মা! ওকে একটু বকে দিও তো আজ। ভিজতে চেয়ে বেলা কাটায় যে মাটি, তাকে বুঝি ভয় দেখাতে হয় ওর মত? 

আমার জরায়ু চিরে বেরিয়ে আয় বাছা! জন্ম নিয়ে যা ভেসে যা গাছে গাছে শাখায় শাখায়…মাধবী বিতানে, কবিদের গানে…বর্ষা মঙ্গলে, চাষীদের ধানে…
আচ্ছা। বজ্র এলে আমি তাকে বলে দেব, বিষম না দেখলে সে যেন ঘরের বাইরে আজ না যায়। 

আমায় শক্ত করে ধরে আছে ধূলার আদর। ওর ভারী মনখারাপ, কিছুতেই যেতে চায় না আর বিশ্বে। বলে, ওখানে বড় যাতনা! বড় বেদনা! হিসেব নিকেষ জটিল… 

ওকে বল… ও না গেলে কেমন করে পা রাখবে ঘাস? কেমন করে স্বপ্ন এসে হামাগুড়ি দেবে? রাত্রি বেলা আমার চাঁদ এসে উপুড় হবে তবে কোথায়?

ও মা! মা গো! আমি এবার তবে যাই…

শোন রে মেয়ে আমার! শোন রে বাছা শোন
যেখানে দেখবি আছে যত কান্না ধুয়ে নিয়ে যাস সঙ্গে তাকে…সমুদ্রে মিলিয়ে দিবি। স্নেহ দিবি, তারপরে তার ঘরে ছাত হবি। লাউ, পালং, কুমড়ো পাতায় আগল দিবি… অন্ধকার কপালে রেখে আসবি আলো। পিঁপড়ের ডিমে তুই বাসা হবি, অরণ্যের হাসি। 

তারপরে মৃত হব…

এই তো নিয়ম মা রে! পৃথিবীর ভালো কাঁধে তোল! আলো বাঁধ চোখে… প্রাণ ঢেলে দে পাহাড়ের কোলে, সিন্ধু গঙ্গা জলে…
যা ভেসে যা দূরে…
বৃষ্টি! মা আমার! মৃত্যুর পরে তোর নাম রাখবো সৃষ্টি…
—----------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমি যাকে পিতা বলে ডাকি…

একটা হাত মাথায়…আমি আছি। ভয় কী?
আর পারছি না যে! মনে হচ্ছে হারিয়ে যাই
শূণ্য মনে হচ্ছে সব কিছু। 
আমার কান্নার এ কথার উপর চাপল কথা…
যদি বলি শূন্যেরও নীচে, তাও ক্ষতি কী?

এদিকে গলি ওদিকে গলি
ধাঁধায় ভর্তি অন্ধকার
চিনব কী করে পথ?

আলো কই?

আমার আর্তনাদ থেমে যায় আশ্বাসে…
সব সম্পর্ক কি রক্তের হতে হয় রে?
কিছু থেকে যায় হৃদয় যাপনে।
এক পৃথিবী আলো তোর! 
আয় চিনতে শেখাই…

সব ভুলে যুদ্ধের মধ্যরাতে আলো চিনতে চিনতে
আমি যাকে পিতা বলে ডাকি…
—-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

আমার একটা পেশা আছে!

পরাগ ধানী থেকে পরাগ রেণু নিয়ে এসে 

অন্য ফুলের গর্ভ মুণ্ডে পুঁততে পুঁততে বাতাস জিজ্ঞেস

করলো, বললে না তো! তুমি কী করো?


আমি নিশ্চুপ। 


পরাগায়ন শেষ করে হাত ঝাড়ল বাতাস।

বলল, চলি। আমার আবার অনেক কাজ।


শোনো! চলে যেও না! 

বাতাসের ব্যস্ততা আঁকড়ে ধরলাম আমি

আমিও করি! সূর্য থেকে আলো নিই। রোদ ছেঁকে গান। 

মাটি থেকে ধৈর্য্য নিই। আকাশ থেকে ঔদার্য।

বৃক্ষ আমায় শ্বাস পাঠায়। বৃষ্টি ধুয়ে স্নান।


বাতাস ভারী বিরক্ত। আরে কাজ টা কী করো

তাই তো বলছ না!

তারপর বলল, 

আমার ভাই অত সময় নেই। ধান দোলাতে হবে।

আমি গেলাম।


থামো। থামো। বাসা বোনা শেষ করে আমিই আসছি

তোমার কাছে। 

আমার কি আর এতটুকু ফুরসত আছে গল্প শোনার!

বলেই পাখিটা কাঁধে এসে বসল।

নাও বলো এবার…তুমি যেন কী করো? 


আমি বললাম, হাতে হাত রাখি। ভালোবাসি।

সে ভ্রু কুঞ্চিত করল, সে তো সবাই করে।


আমি আরো বললাম

চাল সিদ্ধ করে সাদা ভাত ফুল করি

পাহাড় থেকে ঝর্ণা আঁকি

আমি ভালোবাসি…


পাখিটা উড়ে গেল। বলে গেল, মেঘের সঙ্গে

লুকোচুরি বাকি, বীজ ছড়ানো তাও…

আমি আসছি…


আমি ক্ষেতে গেলাম। সবুজ ধানের উপর

শুয়ে বাতাস। 

ঠিক তার পাশ টিতে বসে কৃষক স্বপ্ন দেখছে

মস্ত গোলা

নোলক পরা বউ

আমায় দেখতেই দূর দূর দূর করে তেড়ে এল।

তোকে কাজ দেব?

যা পালা! অপয়া একটা! 


স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এল ওর বউ

বলল, ইস! নোলক টাও বুঝি হারিয়ে যাবে!


আমি নদীতে গেলাম এক ছুটে


সব কান্না ভাসিয়ে দিয়ে ছুটলাম শিখরে

শিখর থেকে আবার শিখরে


হো হো করে উঠলাম হেসে

তালি দিলাম দু হাত ভরে…


বাতাস অবাক। পাখিও থমকে

মানুষ গুলোর একে অপরের চোখে চোখ

কৌতূহলে চুমুক…


আমি ছড়িয়ে দিলাম, বিলিয়ে দিলাম।


সামনে এসে নতজানু অতীত


কৃষক আর ওর বউ বললো, 

তুমিও মানুষ! স্বীকার করি।

আমাদের হাতে হাত রাখো। আমরা ধন্য হই!

ওই দেখো আরো কত অনুতাপ

ওদের মাথায় রাখো ক্ষমা…

দাও আশীর্বাদ।


শিখর বললো, এখন হয়েছে সময়।

বলে দাও ওদের…


আমি সর্বোচ্চ শৃঙ্গে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলাম,

শোনো! আমার আর এক পরিচয় আছে!

আমার আর এক পেশা আছে


আমি একজন বৃহন্নলা!

আমি একজন হিজরে…

—----------–--

SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

অন স্ক্রিন

নিদেন পক্ষে ক্যাফেটেরিয়ায় দু কাপ কফি
ধোঁয়া ওঠা জলন্ত দৃষ্টি বিনিময়
আঙুলে আঙুলে নাড়াচাড়া
তোমার কবিতায় এত আকর্ষণ, কবি! 
এত টান! 

স্বপ্ন ভেঙে গেল।
এখন মধ্য রাত।
মোবাইল হাতে নিলাম।
কবি শব্দ দিয়ে আমার কাঁধে হাত রাখল।
বলল, আরো কিছু বাকি।
আমি বললাম, ভালোবাসি…
কবি গুচ্ছের শব্দ গুছিয়ে পাঠাল আমায়
আমি চিৎকার করলাম অক্ষর দিয়ে
আমি ফোনের স্ক্রিনে হুমড়ি খেয়ে বললাম,
তোমার কাব্য আমায় প্রসূতি করেছে।

বললাম,
ক্যাফেটেরিয়ায় আসবো নীল রঙের শাড়িতে
হাতে থাকবে গোলাপি রুমাল
সুগন্ধি তে জুঁই।
তোমার সন্তান কে তুলে দেব তোমার হাতে।

মোবাইল অফ করে বরের পাশে শুলাম
ঘুমন্ত বরের মুখটা বড় নিষ্পাপ
কবির প্রেমিকা? ছবিতে দেখেছি অনেক বার
বড় সুন্দরী। নির্ভেজাল। 
কবি বলে, 
সে নাকি আকাশের মত ভালোবাসতে পারে।

অন করলাম ফোনের সুইচ,
ইন্টারনেট।
টিং টিং শব্দে ভেসে এল,
কী নাম রাখবে আমাদের সন্তানের?
পাশে হাসির ইমোজি।

আমার বরের ঘুম ভাঙল হঠাৎ
ঘুমাও নি এখনো?
না এইতো একটা কবিতা পড়ছিলাম
রাত অনেক হল। শুয়ে পড়।
বুকে রাখল হাত
ঠিক ওইখানে তখনই কবির দেওয়া সন্তানের
চোখ ফুটেছে…
বললে না তো, কী নাম রাখবে আমাদের সন্তানের?
অলৌকিক।

সকাল হল। 

কবির প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জড
গত রাতে কফির কাপে তুমুল চুমুকl
চার চোখে চুমু…

আমার স্নান ঘর
বরের টিফিন
ছেলের স্কুল
দৌড় আর ঘাম…

খানিক অবসরে বুকে হাত রাখলাম।
গর্ভপাত হল?
উত্তর আসে না।
নম্বর ব্লকড।
—-----------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

রাজা ও খোকার গপ্প

শিশুটির বয়স পাঁচ। এলোমেলো আঁকে 
রথ থেকে নেমে এলেন রাজা মশাই
জিজ্ঞেস করলেন, কী আঁকছ খোকা?
শিশুটির মুখে স্মিত হাসি…শূন্য আঁকছি গো!

রাজা মশাইয়ের চোখ কপালে। 
সামনে এমন বড় এক রাজা দাড়িয়ে। 
আর খোকা কিনা শূন্য আঁকছে? 

সেনা বাহিনী হাজির হল।
এত স্পর্ধা খোকার হল কী করে তদন্ত করে দেখো তো!
রাজার হল হুকুম

একজন বললেন, 
রাজা মশাই শিশুটি শূন্য বলার আগে
আর একটা কী যেন বলছিল…
রাজা মশাইয়ের সজাগ চোখ, কী বলছিল?
ওই আমাদের মসজিদে ঠাকুর নাকি…

অন্যজন বললো, না না! শিশুটি মন্দিরে আল্লাহ
খুঁজছিল ওর ছবিতে…

না রাজা মশাই ও মিথ্যে বলছে
ছেলেটি আজানে ইশ্বর বলছিল
একদম বিশ্বাস করবেন না রাজামশাই
শিশুটি আরতিতে নিরাকার বুঁনছিল
তবে রে!
লাঠি আন!
এই তলোয়ার নিয়ে আয়!

রাজামশাই ভীষণ রাগে ফেটে পড়লেন
আমার রাজ্যে এমন সাহস এক শিশু
কেমন করে পায়? 

দাঙ্গায় রক্ত ভেসে গেল চারিদিক
মৃতের স্তূপ রাজার পায়ের কাছে।
রাজা রথে উঠলেন
সেনাপতিকে নির্দেশ দিলেন, 
নিয়ে এসো ছেলেটিকে
ওর বিচার হবে
কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি

শিশুটি হাসতে হাসতে চললো রাজার রথে
বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলো রাজার মুখের দিকে খানিক,
তারপর বললো, 

রাজা! তুই শূন্য আঁকতেও জানিস না?
ওই দেখ আকাশ কত্ত বড় গোল্লা!
রাজা, রাত দেখেছিস? তারা ভরা আকাশ?
মা বলতো, ওটা সবচেয়ে বড় গোল্লা এক

আমার মা মরে গিয়ে যেমন ওই গোল্লায় শূন্য আঁকতে পারে
তুইও পারবি!
তুই নিজেই শূন্য হয়ে যাবি
তুই আগে মরে যা রাজা!
তুই আগে মরে যা!
—---------––––-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

চুমুক

এই তোমার শার্টের দুটো বোতাম খুলে
তোমার বুকে আমার চুম্বন রাখলাম

উঁহু কিছু বলতে পারবে না তুমি
তোমার ঠোঁটে আমার আঙুল
ঘাড়ের পাশে আমার নিঃশ্বাস

কী ভাবছো, কী হল হঠাৎ আমার?

আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে ভালোবাসতে
দেখো আকাশ কত নীল
খুব ইচ্ছে করছে ওই নীল এক ঝটকায় পেড়ে এনে
গায়ে জড়িয়ে ফেলি
তুমি মুগ্ধ বিস্ময়ে বলে ওঠো, 
আকাশনীল আমার বড় প্রিয়।

কত ফুল চারিদিকে
কত আলো!
পাখিদের মুখে মুখে গান
ঘাসে ঘাসে আনন্দ

আমার আজ খুব ইচ্ছে করছে ভালোবাসতে

তোমার সামনে বসে তোমার চুল ঘেঁটে দিয়ে
বলতে, আমার কিন্তু উস্কো খুস্কো দুষ্টুমি খুব ভালো লাগে!
খুব ইচ্ছে করছে 
লজ্জায় লাল হয়ে এক ছুটে পালিয়ে যেতে  
তুমি আমায় খুঁজবে
তেঁতুল পাতায়, আমের শাখায়, দিঘির ঘাটে…

তোমার কানের লতিতে আমার কথা রাখতে ইচ্ছে করছে আজ
আমার মুক্তি ভালোবাসায়…

এই দেখো, ভুলেই গিয়েছিলাম
এখন তোমার কবিতা লেখার সময়, 
তুমি ডাকবে, 
কী রে কী ভাবছিস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অত? আমার চা টা নিয়ে আয়!

আমি জানি, আমি খুব সাধারণ। 
তোমার কাব্যে উপেক্ষিতার মত।

কিন্তু তুমি জানো না কবি!

আমি স্বপ্ন বুনে বুনে একদিন ঠিক তোমার পেয়ালার চুমুক হয়ে যেতে পারি এভাবেই…
—------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

ভালোবাসা পেলে

ভালোবাসা পেলে প্রাক্তন ক্ষত বেরিয়ে আসে।

স্নেহ তাদের গায়ে একটু স্পর্শ রাখলেই
বেনো জলের মত ভেসে চলে আনন্দ।

ভালোবাসলে পাথর গলে পাখি হয়,
মরু ভেঙে উদ্যান।
      —-
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)

জঙ্গল মহল

জঙ্গল মহল ভাদুতলা রেল স্টেশন।
পাশাপাশি বসে দুটি মানুষ
হাতে শালপাতা। তাতে পিঁপড়ের ডিমের মত
কী যেন রাখা…
একটু একটু মুখে তুলছে। 

কিছু পরে মানুষ দুটি উঠে দাঁড়ালো।
হাতের শূন্য শালপাতা ফেলে প্রবেশ করলো জঙ্গলে

জঙ্গল চিরে কাঁসাই চলে যাচ্ছে কোন্ অজানায়
আঁজলা ভরে জল খেলো মানুষ দুটি
তারপর একজন কুড়ছি ফুল তুলে আনলো
অন্যজন ধাধকি, বেঁওরা।

একজন মানুষ অন্যজনের কানের লতিতে
পরিয়ে দিল স্নেহ। সিঁথিতে ভালোবাসা।
ফুল সাজিয়ে দিল অরণ্যের ঘাসে ঘাসে
তারপর শরীরে মিলিয়ে নিল শরীর…

দাঁশায় পরব শুরু হয়েছে গত পরশু থেকে
দাঁড়ান ভুয়াং নৃত্যে সামিল পুরো পরগনা
দেবীর বুকের উপর শুয়ে রাজা।
দেবী নিশ্চুপ 
রাজা জিজ্ঞেস করলো, কী অভিপ্রায়? 
আমাকে হত্যা তো?
দেবী তখনো নিশ্চুপ।

রাজা আরো জোরে দেবীকে আলিঙ্গন করলো
রাজা প্রবল হাসলো! 
ঝড় উঠলো!
সমস্ত গাছেরা দুলে উঠলো!
শাল মহুল ডেকে উঠলো, রাজা! তুমি পালাও!
রাজা তার বুকে দেবীর সঙ্গে নিবিড় হয়ে রইল।

দেবীর ওষ্ঠ থেকে ঝরে পড়লো রক্ত
আমি নিরূপায় রাজা।
বুকের মধ্যে কর্তব্য, 
মাথার ভিতরে গিজগিজ করছে
সাদা সাদা ফুলের মত ভাত…
ওরা বলেছে…
তোমাকে হত্যা করলে আমার সব অসুখ মিটে যাবে
রাজা! 
আমি নিরূপায়!

ভালোবেসে মৃত্যু এ কি কম সৌভাগ্যের প্রিয়া?
রাজার হাসি নিভে আসছে।

আজ তোমার জন্মদিন রাজা! 
আমি পায়েস এনেছিলাম। 
পিঁপড়ের ডিমে মাদক ছিল,
পায়েসে নয়।
কণ্ঠে ভীষণ কম্পন দেবীর।

তাই বুঝি পায়েস দাও নি এতক্ষণ? 
রাজার চোখে ঘুম নেমে আসছে
কই দেবী! পায়েস দাও। শীঘ্র দাও! 
রাজার চোখ পাহাড় হয়ে যাচ্ছে। শরীর আচ্ছন্ন।
ঠোঁটের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো জন্মদিন

একটা কাঠবেড়ালি দুটো মাকড়শা একটু আগেই
রাজাকে খুঁজে গেল
'অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে?'

দেবীর শুষ্ক চোখ
গাছেরা দুয়ো দিচ্ছে তাকে
বলছে, দেবী! তোমাকে ধিক্কার!
ভালোবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে অভাব

রাজার অচেতন দেহ পিঠে বেঁধে দেবী ছুটে গেল
স্টেশনে…
জঙ্গলমহল এক্সপ্রেস এসে দাঁড়ালো দুই নম্বর
প্ল্যাটফর্মে…

রাজার ঘুমন্ত চিবুকে বিস্ময়-
এবার অন্য কেন, দেবী?

আলগা খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে দেবী বলে,
ভালোবাসা মরে গেলে পড়ে থাকে অভাব।
আমি শিখে গেছি।

ট্রেন ছুটছে…
বাতাস ভাসছে
কাঁসাই ছোট হয়ে আসছে
আওয়াজ ক্রমশ কমে আসছে…
'অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে!'
—--------------–-----
SUJAN MITHI (SUJATA MIHRA)

স্বর্গ

এই ঘর বড় কঠিন। দম বন্ধ হয়ে আসে।
দুই নর নারী হাতে রাখলো হাত। বললো,
চলো আদিতে ফিরে যাই
যেখানে কোলাহল নেই। কংক্রিট নেই।
নদী যেখানে সুর দেবে। ঝর্ণা দেবে ফুল
পাহাড়ে পাহাড়ে লুটিয়ে পড়বে মেঘ
আদুল গায়ে রোদ মাখবো
হলুদ সর্ষে ফুলে প্রজাপতি হয়ে উড়বো
চলো ফিরে সে অরণ্যে…

একদিন নরের হাতে নারী রাখলো হাত।
এ অরণ্য বড় বেশি সরল। 
মন লাগে না আর…

নর বিস্মিত। কেন আমি যে আছি!
এত বৃক্ষ! পাখি! এই কি তপোবন নয় প্রিয়ে?
নারী উদাস।

নর ঘাম ঝরিয়ে বাঁধলে ঘর।
মাটি পুড়িয়ে খাসা ইঁটের ঘর।
ঝড় এলে ভাঙবে না। পোক্ত দরজা।
ইচ্ছে হলেই ঠেলে ঢুকতে পারবে না বাতাস…

নর বললো, এত বৃক্ষের কী প্রয়োজন?
ছেদ করি তবে। আসবাব হবে।

নদীতে বড় স্পর্ধা! বাঁধ দিতে হবে তাড়াতাড়ি

নরের হাতে হাত রাখলো নারী। 
অনেকদিন নদীর কোনো গান শুনিনি
এই ঘর বড় কঠিন। দম বন্ধ হয়ে আসে
চলো গান শুনে আসি…

নদী! তোমার গান কোথায়?
তুমি এত কাদঁছো কেন?

নরের চোখে ব্যস্ততা
আঃ! গান দিয়ে কি সভ্যতা বোনা যায়?

কাঁদছে নারী। পৃথিবীর আদিম নারী।

সে তাদের অরণ্য ও আনন্দ-তপোবনের নাম রেখেছিল, স্বর্গ।
—------------––
SUJAN MITHI (SUJATA MISHRA)