কোপাইয়ের জলে পা ডুবিয়ে বসেছিল সে।
আসার পথে চোখ আটকে গেল আমার
চওড়া পিঠ, শ্যামলা গাল, চ্যাপ্টা নাক
জিজ্ঞেস করলুম, তুমি কি কৃষ্ণকলি?
সে ঘুরে তাকাল একবার। মুচকি হেসে বলল
খুঁজে নাও!
তারপরেই সে মেঘ নামিয়ে আনল তার পায়ের পাতায়
হাত বাড়িয়ে ফুল পাড়ল, গান বুনল।
আমি বললুম, খুব চিনেছি! গীতাঞ্জলি।
সে হাসল খানিক। কোথায় যেন পাথর গেল ভেঙে
মাটির উপর বাসা বুনল কেউ
কোন্ বনে কোন্ মল্লিকা এক বুক গন্ধ নিয়ে
ছুট দিল কোন্ সাহারায়…
বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে।
বৃষ্টি এল দু চোখ ভরে
বৃষ্টি এল ঠোঁটের পরে
তারপর কত ডাকলাম! সে কিছুতেই সাড়া দিল না।
ঘাড় নেড়ে মুখ নিচু করে রইল।
বৃষ্টি ধোয়া টকটকে রঙ, চুলের ঢালে ঢেউ খেলছে
বসন্ত।
প্রেমিক খুঁজতে ব্যস্ত মূক সে জন নদীর বুকে বুক মেলালো...
আমি তটস্থ হয়ে উঠি। বলি, অভিমান কোরো না
শুভা...এ বসন্তের বাতাস
তোমার কণ্ঠে সুর বুনবে ঠিক একদিন দেখো!
মুখ ফেরালো সে।
চোখে কী প্রচন্ড স্রোত!
জানু পর্যন্ত কোপাইয়ের ঢেউয়ে বয়ে যাচ্ছে তেজ
প্রতি শ্বাসে বুক ফুলে ছুঁয়ে যাচ্ছে নীল আকাশ
পরণে রণ সজ্জা
সোনাঝুরির পাতায় পাতায় বাজছে দুন্দুভি
কেঁপে উঠলুম সহসা
আমার নাকের ডগা লাল হল লজ্জায়
মুখ নামিয়ে বললুম, কী অভিপ্রায় চিত্রাঙ্গদা?
এবার সে খুশি হল খানিক মনে হল।
বলল, মদনকে ডাকব না। চাই না তার কোনো বর!
ছদ্মরূপ
কথা দাও! এ কঠিন করবে বরণ?
সত্তর স্থান ত্যাগ করলুম। পালিয়েই এলুম বলা ভালো।
পিছে পিছে বড় জোর কৃষ্ণকলি,
এ অবধি কাব্যি চলে…
আগুনের পাশে পুরুষ হয়ে হেঁটে যাব
ইস...
ভাবতেই এবার ছোট হয়ে এল আমার পৌরুষ।
আড়ি অবিশ্যি পাতি মাঝে মাঝে কোপাইয়ের ধারে
ধারে…
শুনতে পাই, সে জন… অনেক জন…
পূর্ণ হচ্ছে… বৃত্ত বুনছে…
আকাশ গাইছে…
আলো বাইছে
হো হো করে হেসে উঠে বলছে,
সব অর্জুন কাপুরুষ!
সব অর্জুন কাপুরুষ!
সব অর্জুন...
––-----------
SUJATA MISHRA
No comments:
Post a Comment