আনন্দ

অন্ধকার চূর্ণ করে এগিয়ে চলেছে আমার দুই পা। চোখ চলে যাচ্ছে দূরে… 

বিস্তীর্ণ শান্ত নদী। শুয়ে আছে মাটি ধোয়া কাঠামো।

আমি বিস্মিত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই...কে তুমি? 


বাতাস কেটে কেটে উত্তর আসে, চিনে নাও!


ভীষণ চেনা স্বর! ভীষণ…


অন্ধকার ফিকে হয়ে আসছে। মনে পড়ছে! আমার মনে পড়ছে!


এ স্বর ছিল আমার মায়ের। আঁচল, লাল টিপ, ঘাম, আটপৌরে শাড়ি… আমার শ্রান্ত কপাল মুছিয়ে বলছে, এক গ্লাস জল খা বাবা।


এ স্বর শুনেছি গোপালের মায়ের কণ্ঠে, আইনের পা ধরে বলছে, আমার গোপাল নির্দোষ স্যার!


এ স্বর শুনেছি নিষিদ্ধপল্লীর কুসুমের কণ্ঠে,

একবার আসুন না বাবু! আমার শরীরে আমার বাচ্চার ভাত রেখে যান...


এ স্বর শুনেছি স্বপ্নার বুকে, এ শুধুই মাংস তোমার কাছে? এর নীচে হৃদয় থাকে না? অভিমান?


এ স্বর শুনেছি উনিশশো সাতচল্লিশের চোদ্দই আগস্ট মধ্যরাতে…

আজ আমার শিকল ছেঁড়া গান, আমার আলোয় আলোর স্নান...


কাঠামোর শান্ত দৃষ্টি। ক্লেশ নেই, কায়া নেই। 


আমি তুলে আনলাম তাকে। বাকি অন্ধকার মিলে তার গায়ে মাটি মাখালাম। আলো দিলাম। বাতাস দিলাম। শাড়ি, ঘাম, আঁচল, উদ্বিগ্নতা, অভিমান, কুপি, অপেক্ষা সব দিলাম। 

থোকায় থোকায় ঝুলিয়ে দিলাম মানুষ তার হাতে।


অন্ধকার আরও ফিকে হতে লাগল। 


হঠাৎ কী এক শব্দে ভেঙে গেল আমার সবটুকু ঘুম!


উঠোনে নেমে এসে দেখলাম, সকাল হয়েছে। 


শব্দটা আমার অযত্নে লালিত এক গোলাপ গাছের। 

প্রথম ফুল ফুটেছে তার আজ। গায়ে এসে পড়েছে গোলাপি রোদ্দুর...


বাকি সব ক্লেদ খেয়ে গেল কাক। 

ফুলটির নাম রাখলাম আনন্দ। 

—------------

SUJATA MISHRA

No comments:

Post a Comment