সন্ধান চাই শিরদাঁড়ার!

কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে মেঘ হয়ে নামতে নামতে 

হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে যে মাটিতে,

সে মাটির নাম ভারত বর্ষ।

মাটি থেকে সূর্য পুনরায় বৃষ্টি শুষে নেয় তাপে, 

মেঘ হয়ে তা জমা হয় কাঞ্চনজঙ্ঘায়

সোনালী আলোয় চামর দোলায় ছন্দ

কুড়িয়ে কুড়িয়ে গল্প লেখে খামখেয়ালি এক লোক

সে গল্পের নাম ভারতবর্ষ।

প্রখর গ্রীষ্মে খাঁ খাঁ মাঠ পেরোতে পেরোতে

তৃষ্ণার্ত পথিক যখন দিশা হারিয়ে ফেলে,

জলসত্ৰ নিয়ে এগিয়ে আসে কেউ।

বাতাসা দুখানা আর মাটির গেলাসে শীতল জল

পথিক বুকে হাত রেখে বলে, আহঃ, বাঁচলুম!

একদিন শীতের দুপুরে এ পথিকই 

কেটে ফেলেছিল এ মাঠের

সমস্ত ছায়া, সব মায়া, সব শিকড় …

সে পথিকের নাম ভারতবর্ষ।

মিলনে মিলনে বসে মেলা।

বাঁশিতে হাসিতে মেতে ওঠে পাড়া

ঈশ্বর কিনে মাথায় ঠেকায় অপুত্রক জননী

হাঁড়ি কাঠে পুরুষ ছাগ বলি হয় একের পর এক

রক্তে তিলক কাটে পুরোহিত

মা...মাগো! আরও চাস? আরও পাবি!

এক রত্তি প্রশ্ন করে মুখ লুকিয়ে,

মৃত্যুতে এত উৎসব কেন?

সে উৎসবের নাম ভারতবর্ষ।

এক নয় দুই নয় একশত কোটির জয়ধ্বনি

নেতা আমলা মন্ত্রী নির্বাচন

জোড় হাত করে আঙুলের ছাপ চেয়ে নেওয়া...

ভোট! ভোট! ভোট দিন!

এ আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার!

তারপর সিংহাসন উড়ে চলে

বরফের উপর সোনালী রোদ্দুর

নাকি সোনার নিচে চাপা পড়া শুকনো মুখ…

খুঁজে খুঁজে সত্যি জানতে চায় শিরদাঁড়া

তারপর তার খুব জ্বর আসে

ঘর ভাসে

বন্যা হয়…

সে বন্যার নাম ভারতবর্ষ।

মেহের আলির প্রাণঘাতী রোগ

গা ছুঁয়ে বসে আছে রাম।

একটু আগেই রামের রক্ত ঢুকেছে মেহের আলিতে

তার ছেলে বলেছে, চাচা! বড় মেহেরবানি আপনার!

রাম বলেছে, ঈশ্বর আছেন বাছা 

তোমার বাবার কিছু হবে না!

বুক পেতেছে সুখ। 

দুহাতে জড়িয়ে নিয়েছে মেহের আর রাম

সে সুখের নাম ভারতবর্ষ।

দিগন্ত থেকে দিগন্তে কালো মেঘের ঘনঘটা!

চুরমার মন্দির! ভেঙেছে মসজিদ!

গির্জাও তছনছ

একশত কোটির ক্রুর পদধ্বনি!

দাঙ্গা প্রবল! ঝড়, তুফান, বজ্রপাত!

উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা

নিয়ে ছুটে আসছে এক বিশালাকায় মানচিত্র…

চিৎকার করে বলছে, ওরে থাম থাম

আমায় কাটিস না! আমায় ভাঙিস না!

ওরে তোরা শান্ত হ!

হুঙ্কার ছাড়ছে তার মরুভূমি…

দামামা আরো আরো প্রবল!

ভয়ংকর!

মানচিত্রের ঠিক মাঝখানটিতে বসে আছে

বড় রাস্তার পাশের ফুটপাত।

পেটে তার ভীষণ খিদে 

হাড়ে হাড়ে ঠকঠকে শীত…

কিন্তু কোলে তার ঝিলমিল করছে এক টুকরো প্রাণ

ছেঁড়া আঁচলে ঢেকে সে মা তার সবটুকু উত্তাপ

ঢেলে দিচ্ছে বাছাকে।

পূর্ণিমার দিকে তাকিয়ে বলছে,

আয় আয় চাঁদমামা… টিপ দিয়ে যা।

মানচিত্রের মাঝখানে বসে থাকা 

এ পরম সত্যের নাম মা।

জ্যোৎস্না কুড়িয়ে কুড়িয়ে পোড়া রুটি খুঁজে আনতে চাওয়া লোকটা ছায়া কাটে না…

বরং জলসত্ৰ বানানোর স্বপ্ন দেখে প্রখর দাবদাহে।

সে লোকটা পথিক নয়, পিতা।

ডাস্টবিন থেকে পাওয়া ভাতের টুকরোগুলোর

গায়ে স্নেহের গান লিখে সন্তানের ঠোঁটে ভরে দেয়

যে স্ফূর্তির ফুটপাত।

আমাদের সে গানের নাম ভারতবর্ষ।

আমাদের সে স্বপ্নের নাম ভারতবর্ষ।

আমাদের সে 'সন্ধান চাই' শিরদাঁড়ার নাম ভারতবর্ষ!

-----------------

SUJATA MISHRA

No comments:

Post a Comment