প্রমিথিউস

মন্দিরে মন্দিরে বন্দি দেবতা। ক্ষুধার্ত মানুষ রাত গভীর হলে দেবতার কক্ষে চোখ পাতে। নাহ, কোনো আওয়াজ নেই! দেবতা ঘুমিয়ে তবে? সারা গায়ে স্বর্ণ-খচিত শোভা। ক্ষুধার্ত হাত জোড় করে ফিসফিস করে, হে দেব! বড্ড খিদে! একটা অলংকার দাও না ছুঁড়ে! ওটা বিক্রি করে একথালা ভাত কিনি…


প্রবল নাসিকা গর্জন করে প্রবল নিরাপত্তা রক্ষীর...


ধৈর্য্য হারিয়ে ক্ষুধার্ত কণ্ঠ চিৎকার করে, কোথা গেলে ঈশ্বর? তুমি কি মরে গেছো? 


নিরাপত্তা রক্ষীর উত্তেজনা আর লাঠি দুইই আছড়ে পড়ে পিঠে তার।


গৃহস্থ নিদ্রিত। তেতলার ঘরে বনবন করে ঘুরছে পাখা। ক্ষুধার্ত এবার ছিনিয়ে নিতে চায় খাদ্য! একেবারে সে পাখা ঘোরা ঘরে উঁকি দেয়। ভাবে সবচেয়ে বেশি ভালো সবচেয়ে উর্দ্ধে…


কী আশ্চর্য! এখানেও সেই অলংকার বিভূষিত দেবতা! পাখার হাওয়ায় দিব্য ঘুমিয়ে! 


ক্ষুধার্ত হামাগুড়ি দিয়ে তেতলা পেরিয়ে একেবারে শীর্ষে গিয়ে ওঠে। 

তারপর সেখান থেকে আরো উর্দ্ধে আরো উর্দ্ধে আরো…


ক্ষুধার্ত শহীদ মিনারের উপরে উঠে নিজের বুক চিরে বের করে আনে হৃদয়…

জিউস আসবে ঈগল হয়ে 


ক্ষুধার্ত বলবে, আমি মানুষকে আমার ভাগের খাদ্য দিয়েছি, আমার হেঁটে চলার পথ দিয়েছি, আমার শুয়ে থাকার মাটি দিয়েছি…

আমার হৃদয় গ্রহণ করো জিউস!


জিউস হাসবে! ভয়ংকর হাসবে! ক্ষুধার্তের হৃদয় চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে…


শহীদ মিনারের নীচে আবার জন্ম নেবে লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত। গিজগিজ করবে তাদের হৃদয়!


হারকিউলিস দিবানিদ্রায় মগ্ন থেকে বিড়বিড় করবে, 

সবাই কি আর প্রমিথিউস, যে আমার বাঁচানোর দায়?

----------------

SUJATA MISHRA

No comments:

Post a Comment