নাম রাখব বনলতা

হে অনন্ত সময়! নির্ভার হও।

হে সূর্য! আরো আরো আলো দাও।

হে পবন! প্রবল বাতাসে বীজ উৎক্ষেপণ করে

রেখে এস কঠিন মরুতে।

হে ধরিত্রী মাতা! অপসারণ করো মরীচিকার 

অট্টহাসি। মরূদ্যান সৃষ্টি হোক।

বীজ থেকে প্রাণ।


হে জলধর! নেমে এস আমার দু চোখে

বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে লুকিয়ে ফেলো আমার অশ্রু...


দেখ, কেমন সেজেছি আজ!

এই শাড়িটা তোমার বড় প্রিয়

বলতে মাছরাঙার নীল আর রোদ্দুরের সোনা দিয়ে

শুধুমাত্র আমার জন্যই নাকি বানানো হয়েছে এ শাড়ি!

সঙ্গে পরেছি বনফুলের মালা, কানে কুন্দ। 

চুলে শিশির ভেজা দূর্বা।


তুমি বড় ভালোবাসতে এ ভোর বেলার গন্ধ

সারা শরীর ভিজিয়ে নিয়েছি তাই আজ।

তুমি এ ভোরের স্বাদ নিতে আমার চোখের পাতায়।

পাখি আঁকতে ঠোঁট দিয়ে

বলতে, 

দেখো তোমার দৃষ্টি কেমন উড়তে শিখবে এবার!


হে প্রবল বিষাদ! ছোট হয়ে এস।


যে বৃক্ষে তুমি কান পাততে,

গান বাঁধতে!

আমার হাত ধরে ছুট্টে নিয়ে আসতে

বলতে, শোনো শোনো এ কী বলছে শোনো!

বলছে ভালোবাসো!

বলছে, ছায়া নাও।


আমি খুব জোরে হাসতাম

তুমি অভিমানী হয়ে উঠতে তখন।

বলতে, আমার বন্ধু কাঁদলে কিন্তু ভালো হবে না বলছি!

খটখটে পাহাড় হয়ে যাব আমি!

আমি তোমার হাতে চুমো দিয়ে বলতাম,

আর আমি সে পাহাড়ের হৃদয় থেকে

ঝর্ণা হয়ে নেমে আসব। 


একটু আগে অবধি তোমার বন্ধু কাঁদছিল।

তুমি পাহাড় হয়ে গেছ,

আমি নদী হতে পারিনি!

ওকে রাখতে পারিনি।

ভিতরে ভিতরে ফোঁপড়া হয়ে গিয়েছিল নিজেই।

ভেঙে পড়ল। ছিঁড়ে পড়ল।


ওকেই সাজিয়ে দিলাম তোমার শরীরে।

ওর উপরেই তোমার ধুপ চন্দন চর্চিত গা...


হে গভীর শোক! থামো ক্ষণকাল

অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করি আমি


তুমি হাসছ? ভাবছ, খুব চেন আমায়?

আমি এ অবস্থায় কিছুতেই তোমার গান 

বাঁধতে পারি না!


এই তো তোমার দেহে আগুন স্পর্শ করল।

এই তো তোমাকে গান শোনানোর উপযুক্ত

সময় আমার! 


হে অগ্নিদেব! তিষ্ঠ সামান্য।


এইতো তোমার কানে ঠোঁট ছোঁয়ালাম।

আমার ভূমিতে তোমার শিকড়…

চিনতে পারলে এ গান?


শুনতে পাচ্ছ তুমি?

নাম রাখব বনলতা।


হে ধৈর্য্য! অনন্ত হও।

হে অপেক্ষা! নির্ভার হও।

--------------

SUJATA MISHRA




No comments:

Post a Comment