প্রথম প্রহর

প্রহর শেষের আলোয় চোখ বুজলেন সন্ন্যাসী।

অশ্বত্থের কিশলয় তখন গাইছিল মেঠো সুর।

গুম খেয়ে বসেছিল পুরাতন।

সালোকসংশ্লেষ ক্ষীণ হয়ে এসেছে তার শরীরে;

কিশলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, সাবধানে থাকো,

ভাই! ঝড় আসবে যে!

বলতে না বলতেই প্রবল বেগে এসে পৌঁছাল

কালবৈশাখী…

রক্তবর্ণ চোখ তার,

ক্রোধবর্ণ গা;

তীব্র কন্ঠে বলল, এই, কে আছিস!

ভেঙে পড়...ভেঙে পড়,

খবরদার বলছি, আমার সামনে মাথা তুলে

দাঁড়াবি না!


ঝড়ের দৃষ্টি পড়ে কিশলয়ের দিকে।

ফুরফুরে মনে সে তখন সুরের লয় দিয়েছে বাড়িয়ে,

পা মা গা রে সা… গাইছে, নাচছে, যা খুশি তাই করছে,

ভয় পাচ্ছে না একটুও।

কালবৈশাখী এগিয়ে গেল তার দিকে…


কম্পিত দেহ, ভীত কণ্ঠ পুরাতন

হাত জোড় করে কালবৈশাখীর সামনে দাঁড়ায়।

রক্ষা করো! ও যে নতুন!

কালবৈশাখী বিস্মিত!

তুমি নিজের প্রাণের ভয় না পেয়ে এসেছ

অন্য প্রাণ ভিক্ষায়?

পুরাতনের ভীত কণ্ঠে ধ্বনিত হল স্পর্ধা,

আমরা যদি জায়গা না ছাড়ি…

মৃত্যু কীভাবে জীর্ণ হবে তবে?


কালবৈশাখী পুরাতন নিয়ে গেল।

ভেঙে গেল শাখা, খসে গেল জীর্ণ।

কিশলয় তখন বৃষ্টিতে স্নান করছে, 

আদুল গায়ে জড়িয়ে ধরছে নরম বাতাস। 

খিলখিল করে হেসে উঠছে।

তার রক্তিম বর্ণ ধীরে ধীরে সবুজ

হতে চলেছে…


সন্ন্যাসী চোখ খুললেন।

সামনে অগণিত ভক্ত তার, চোখে জিজ্ঞাসা।

প্রভু, কী এ? গল্প?

সন্ন্যাসী বললেন,

প্রথম প্রহর...জীবনের নববর্ষ।

----------------

Sujata Mishra


No comments:

Post a Comment