তারপর মেয়েটার চোখের তারায় জন্ম নেয়
সূর্য। মেয়েটা দুহাতে আলো, উত্তাপ তুলে দেয়
জরাজীর্ণ ফসলগুলোতে। সালোকসংশ্লেষ পূর্ণ
হলে মেয়েটা দাবানল সৃষ্টি করে। দাউদাউ করে
পুড়ে ছারখার হয় বিষাক্ত শিকড়। মেয়েটার কাছে
ছুটে আসে পিঞ্জর...বলো! কী উপায়?
লোহার শিকল কেঁদে পড়ে, শক্তি দাও! শক্তি দাও!
মেয়েটা ভ্রুর কুঞ্চনে তখন কঠিন পাহাড়।
চোয়াল শক্ত। পিঞ্জরে শব্দ ঢালে। বলে, খুঁজে নাও! উন্মুক্ত থাকে না, কিন্তু দ্বার থাকে। শিকলের
ভাঁজে ভাঁজে লিখে দেয় মন্ত্র, বাঁচতে হবে…
বাঁচতে হবে।
সে অনেক কাল আগের কথা। মেয়েটা হাসত, খেলত, ছুটত, ভালোবাসত…
তারপর একদিন তার হাসি, খেলা, দৌড় কারা যেন ছুঁড়ে ফেলল! এর পা থেকে ওর পায়ে... ওর পা থেকে তার পায়ে…
বর্ষার কাদার উপর মেয়েটা ঝমঝম বৃষ্টির যন্ত্রণা হয়ে উঠল। কারা যেন চিৎকার করে উঠল, হচ্ছে না! হচ্ছে না! আরও চাই!
কারা যেন মেয়েটার শরীরে চালিয়ে দিল পাশবিক উল্লাস…
তারপর তার অবসন্ন যন্ত্রণা ছড়িয়ে দিল সারা অরণ্যে...
হো হো করে হেসে উঠল খেলোয়াড়রা
সমস্বরে বলল, গোল! গোল!...গোল!
তারপর মেয়েটার মুখটুকু বাদে সারা শরীর সাড়া দেয়না। কিন্তু তার চোখের তারায় জন্ম নেওয়া ওই আগুনে রোজ রোজ এমন কত খেলোয়াড়ের অরণ্যে লাগে দাবানল। এমন কত যন্ত্রণারা শিখতে আসে জীবন।
মেয়েটা তার মস্তিষ্কের সব স্নায়ু জড়ো করে বিস্ফোরণ ঘটায়। সে অরণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেলে কচি ঘাসের দানা ছড়ায় ঠোঁট দিয়ে। গান গায়, আলো বোনে।
মেয়েটা তার বুদ্ধি আর মনোবল দিয়ে সালোকসংশ্লেষ সম্পন্ন করে নিজের। মাটি থেকে
শুষে নেয় প্রত্যাশা...কাউকে হারতে দেব না বর্ষার ময়দানে! গোল করার আগেই অন্তত একটা ঝড় তোলা দরকার…
তারপর মেয়েটার শিকড় পৌঁছে যায় অনেক গভীরে। দাবানলকে ভয় পায় বর্ষার শূন্যস্থানও।
কেবল প্রজাপতি এলেই মেয়েটার চোখে কান্না নেমে আসে...ফুল ফোটানোর আগেই যে তার
শরীর…
তারপর মেয়েটার নাম হয় ঈশ্বর-বৃক্ষ।
----------------
Sujata Mishra
No comments:
Post a Comment