বিনোদিনী

মঞ্চ প্রস্তুত। দর্শকাসন পূর্ণ। 

কুশীলব মৃত।

মঞ্চের নিচ থেকে উঠে আসছে

পচা ডিম, ঢিল, চিৎকার।

খাঁ খাঁ মঞ্চে সেই মুহূর্তে জন্ম হল

আমার। 

আমার মা আমার নাম রাখলেন বিনোদিনী।


আমি নৃত্যে পৃথিবী বানালাম। 

সুরে সুরে আকাশ।

আমার ঘুমন্ত পিতা জেগে উঠে বললেন,

অভিনয় যখন করতেই হবে…

দেরি করে কী লাভ!


মঞ্চে প্রবেশ করল পুরুষ।

কী অপূর্ব তার জ্যোতি!

কী অপূর্ব তেজ!

মঞ্চের বাইরে থেকে ভয়ার্ত আওয়াজ পাঠাল

চিনু দিদি...পালা বিনোদ! পালা!

পুরুষ মানেই নরক!

পুরুষ মানেই কালশিটে!


চুপিচুপি মঞ্চ থেকে নামতে যাব যেই,

আমার কালো হাত ধরল সেই জ্যোতির্ময়।

বলল, যে আলো বইছে তোমার গায়ে…

তার কোথাও তো বিষাদ নেই! তবে

ভয় কেন?


আমি বুকে স্পর্ধা জড়ালাম।

আমার মা বলল, না রে মা! কিছু তো অভিনয়

থাকেই, বুঝে চলিস।


নদীর তীরে নিয়ে গেল সে আমায়।

কাঁধে হাত রাখল।

বললাম, নাও, এবার ছুঁড়ে দাও আমায়!

এই তো নিয়ম!


সে বিস্মিত হল।

সেকি? কেন?

আমার কালো মানিক কৃষ্ণকলির গা বেয়ে

যে সুর নেমে আসছে আমার হৃদয়ে,

তার কোথাও তো এ কথা লেখা নেই!


চিনু দিদি দূর থেকে ভয় পাঠাল…

বিশ্বাস করবি না রে মেয়ে!

ভয় পা...ভয়!


সে আমার দুই কানে গান ঢালল।

বুকের উপর বাসা বুনল।

চোখের ভিতর ফুল।


মঞ্চের সব কটা আলো জ্বলে উঠল।

দর্শকবৃন্দ করতালিতে ভরিয়ে দিচ্ছে চারিদিক।

মৃত কুশীলবেরা বেঁচে উঠে সে আলো 

মেখে নিচ্ছে সারা শরীরে।


আমি আমার জ্যোতির্ময়ের কোলে চোখ বুজে

শুয়ে তাকে জিজ্ঞেস করছি, 

আচ্ছা! চিনু দিদি'রা নাটকের কোন পর্বে 

এমন জ্যোতি খুঁজে পাবে?

----------------

Sujata Mishra

No comments:

Post a Comment