নষ্ট

দু কামরার ঘর, ছোট্ট ডাইনিং, একটা রান্নাঘর…

আমি, ভাই, বাবা, মা, হাবু কাকা গাদাগাদি ঠাসাঠাসি। একটা বিড়াল ব্যালকনি দিয়ে এসে রান্নাঘরে উঁকি দেয়। সুযোগ পেলেই দুধের বাটিতে গোঁফ চোবায়। মা খুন্তি ছোঁড়ে, মর মর!


আমার বিয়ের ফুল ফোটাতে চায় আমার মা, বাবা। চায়ের কাপে চুমুক দেয় ডাইনিংয়ে বসা লোকগুলো। বাবা মিউ মিউ করে বলতে শুরু করে, আমার মেয়ে রান্না বান্না সেলাই ফোঁড়াই সব পারে, শুধু বুদ্ধি একটু হালকা…

গলায় লাগে গরম চায়ে ডোবানো ঠোঁটগুলোর।


ওরা চলে গেলে মা ঝাঁটা তোলে, মর মর আবাগি!


ভাইয়ের বন্ধুর সরু গোঁফ, চওড়া বুক। আমার চোয়াল ছুঁয়ে চুক চুক করে, আহা রে এমন সুন্দর মুখ মামনদির! 

লোডশেডিং হয়ে যায় ঠাসাঠাসি ঘরে। মা বাবা বাজারে, হাবু কাকা ক্লাবে, ভাইয়ের পায়খানার চাপ…

ভাইয়ের বন্ধুর হাত নেমে আসে বুকে, নাভিতে, বিছানায়…


আমার মা আমায় মেরে মেরে মাড়িয়ে যাওয়া ধানক্ষেত বানিয়ে দেয়। গলা টিপে ধরে ভাই, নষ্ট একটা! ধিক্কার ছুঁড়ে দেয়। 

ক্ষ্যাপা পাগলের আবার শরীর! হাবু কাকা বলে। 

বাবা মাকে বলে, ওকে জিজ্ঞেস করো এ আগাছার বীজ কে পুঁতেছে জমিতে? 

কাঁদতে কাঁদতে বলি, ভাইয়ের বন্ধু কুশল…


কুশল আসে। হাসে। মুখ ভেঙায়।


দুই কামরার ঘরে কাঁদার ঘর আর বুক আছড়ানোর তক্তাপোষ কোনোটাই নেই আমার।


ভাই জোরে জোরে বৈষ্ণব পদাবলী পড়ে। মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান…

আমার তো বুদ্ধি হালকা। এসব কী এত সহজে বুঝতে পারি?


বড় বড় আলোর নীচে শুইয়ে ডাক্তার ছিঁড়ে নেয় কুঁড়ি। 


দু কামরার ঘরের মধ্যেই একটা ছোট্ট স্টোররুম, সেইখানে বাঁধা হয় আমায়। আমার বাক রুদ্ধ হয়। 


ভালোই! নইলে আমার হৃদয় ফুঁড়ে আসা বুদ্ধিহীন প্রশ্নটা মাকে অতিষ্ট করে তুলত…


ও মা! মাগো! কুশল কেন নষ্ট নয়? 

-----------------

SUJATA MISHRA

No comments:

Post a Comment